২০২১ সালের জুলাই মাস। ভেনিজুয়েলার আমাজনাস রাজ্যের সুপেরিয়র প্রসিকিউটিরের অফিসে এসে হাজির আমাজনের গহীনে বাস করা সানেমা ও ইয়েকোয়ানা আদিবাসী গোত্রের কয়েকজন লোক। তাদের অভিযোগ, ব্রাজিল থেকে আসা অবৈধ মাইনারদের গোল্ড মাইনিং এর কারণে তাদের আশেপাশের এলাকায় থাকা জলাশয়ের পানিতে পারদ মিশে যাচ্ছে। যে কারণে ব্যাপক পরিমাণ আদিবাসী মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কিন্তু বরাবরের মতোই এবারও তাদের কথাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হলো না। এক দশক ধরে তারা অভিযোগ জানিয়ে আসলেও গভমেন্ট তাদের অভিযোগ নিয়ে মাথা ঘামায়নি। সেই সময় তাদের এই ব্যাপারটি নিয়ে আগ্রহ দেখায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। দীর্ঘদিন ধরেই ভেনিজুয়েলা অংশের আমাজনের ভেতরের অপরাধী চক্রদের নিয়ে ইনভেস্টিগেশন করছিলো স্প্যানিশ নিউজপেপার এল পাইস ও আরমান্দো ডট ইনফো। যারা তার আগে পানামা পেপার্স এবং প্যারাডাইজ পেপার্সের মতো বিগ প্রজেক্টেও ইনভলভ ছিল। যাই হোক, তাদের সাথে সেই অভিযানে অ্যাড হলো পুলিৎজার সেন্টারের ট্রপিকাল ফরেস্ট রিসার্চ নেটওয়ার্ক।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
ইনভেস্টিগেশনের ফার্স্ট স্টেজে তারা স্যাটেলাইট ইমেজের
মাধ্যমে আমাজনের বিভিন্ন অংশে উন্মুক্ত খনি এবং গোপন এয়ারস্ট্রিপ খুঁজে বের করার
একটি অ্যালগরিদম বানায়। এরপর সেই ডেটাকে প্লানেট ডটকম, গুগল আর্থ এবং ডিজিটাল গ্লোবের স্যাটেলাইট ইমেজের সাথে মিলিয়ে দেখে।
এরপর ম্যাপগুলোকে ম্যাপবক্স নামক একটি সফটওয়্যারে বসায়, যার মাধ্যমে অডিয়েন্সরা নিজেরাই খুঁজে বের করতে পারে ভেনিজুয়েলার কোন
কোন জায়গায় ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিজ চলছে।
এই প্রতিবেদন পাবলিশ হওয়ার পরেই ভেনিজুয়েলার বলিভারিয়ান ন্যাশনাল
আর্মড ফোর্সেস আমাজনের ইলিগাল মাইনারদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। সেই অভিযানে
প্রচুর ইলিগাল মাইনিং কমপ্লিটলি অফ হয়ে যায়, যা ভেনিজুয়েলার
ইতিহাসে ছিল একটি রেকর্ড। এই কেইসকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডেটা জার্নালিজম
প্রজেক্টের একটি হিসেবে কাউন্ট করা হয়।
এবার চলুন জানা যাক, এই ডেটা জার্নালিজম জিনিসটা আসলে কি?
দ্য গার্ডিয়ান ডেটাব্লগের প্রতিষ্ঠাতা এবং গুগলের ডেটা
এডিটর সাইমন রজার্স এর একটি চমৎকার ডেফিনেশন দিয়েছেন। তার মতে, “ডেটা সাংবাদিকতা হলো সংখ্যাকে ইউজ করে সবচেয়ে ভালো নিউজটা মানুষের
সামনে তুলে ধরা। এটা ম্যাথ নয়, চার্ট আঁকা কিংবা কোডিং-ও
নয়। ডেটা সাংবাদিকতার প্রধান কাজ গল্প বলা। গণিত, চার্ট
আর কোড কেবল সেই কাজটি করতেই সাহায্য করে।”
একটি ডেটাসেট বিশ্লেষণ করে সেখানে লুকিয়ে থাকা কাহিনী
অডিয়েন্সের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা পর্যন্ত সকল প্রসেসই ডেটা সাংবাদিকতা। ডেটা
সাংবাদিকতার সাথে ট্রেডিশনাল সাংবাদিকতার আহামরি কোন পার্থক্য নেই। ট্রেডিশনাল
সাংবাদিকতায় তথ্য নেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের সোর্স থেকে, অন্যদিকে ডেটা সাংবাদিকতায় তথ্য বের করা হয় কোন একটি ডেটাসেট থেকে।
যার কারণে সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়েই একটি ডিটেইলড ইমেজ পাওয়া যায়।
ডেটা সাংবাদিকতার ফরম্যাট বিভিন্ন রকম হতে পারে। লিখিত
আর্টিকেল থেকে শুরু করে ছবি, গ্রাফ-চার্ট, মানচিত্র, ইনফোগ্রাফ, অডিও, ভিডিও,
অ্যানিমেশন, ইন্টারঅ্যাক্টিভ গ্রাফিক, যে কোন কিছু। মোট কথা ডেটার ভেতর থেকে রিলেভেন্ট তথ্য বের করে তা
পাঠকদের কাছে আকর্ষণীয় করে প্রেজেন্ট করাই ডেটা জার্নালিজম।