এভ্রিথিং এভ্রিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স। সিনেমাটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? এবছরের অস্কার প্রতিযোগিতায় একাই ৭টি অস্কার জিতে নিয়েছে। এই সিনেমাটি যদি দেখে থাকেন, তাহলে আশা করি অ্যাবসার্ডিজম নিয়ে কিছুটা ধারণা তৈরি হয়েছে আপনার কনশাস অথবা সাব-কনশাস মাইন্ডে।
অ্যাবসার্ডিজম একটি অদ্ভুত দর্শন। যা মহাবিশ্বের
ডিসিপ্লিনকে অস্বীকার করে এবং এই থিওরি অনুযায়ী ডিসিপ্লিন তৈরি করার যে কোনো
প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে। অ্যাবসার্ডিজমের মতে মহাবিশ্ব পুরোপুরি অ্যাবসার্ড একটি
জায়গা। এটি কেওসে পরিপূর্ণ এবং অযৌক্তিক একটি জায়গা।
‘অ্যাবসার্ডিজম’ শব্দটি এসেছে লাতিন সার্দাস শব্দটি থেকে।
সাধারণত মিউজিক ফিল্ডে ব্যবহৃত হয় এই শব্দটি। এর আক্ষরিক অর্থ বধির বা বয়রা।
কিন্তু শব্দের অলংকার হিসেবে বুঝালে এর অর্থ বেসুরা অথবা মিউজিক না বোঝা লোকজন।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
অ্যাবসার্ডিজম শব্দটির বীজ পাওয়া যায় আলবেয়ার কামুর
এক্সিস্টেনশিয়াল থিওরিতে। মিথ অব সিসিফাসে তিনি দেখিয়েছেন একজন ব্যক্তি পাথরকে
পাহাড়ের চূড়ায় তোলার চেষ্টা করছে। ব্যক্তিটি বারবার পাথরকে পাহাড় বেয়ে তুলছে।
আবার তা নিচে পড়ে যাচ্ছে। এই কাজটা সে কন্সট্যান্টলি করছে। অর্থহীনভাবে করে
যাওয়া এই কাজকে কামু বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। একজন ব্যক্তি সারভাইভালের জন্য অর্থহীনভাবে
একটা কাজ বারবার করে যাচ্ছেন। আলবেয়ার কামু যখন তাঁর ‘মিথ অব সিসিফাস’ এ লেখেন –
জীবনটা তখন এমন একটি অর্থহীনতায় শেষ হয়েছে যে, কেন করি, কার জন্য করি, কী কারণে করি, এগুলোর কোনো
উত্তর নেই। ভবিষ্যতেরই যদি কোনো গ্যারান্টি না থাকে তাহলে সব কিছুই তো অর্থহীন। এই
ভাবনা থেকেই অ্যাবসার্ডিজমের থিওরির জনপ্রিয়তার শুরু। কামু মানুষের জীবনের মিনিং
জানার আগ্রহ এবং অক্ষমতা দুটোর মধ্যে যে দ্বন্দ সেটাকেই Absurd হিসেবে ধারণা দিয়েছেন। অ্যাবসার্ডিটি বলতে এখানে 'লজিক্যালি ইম্পসিবল' বুঝানো হচ্ছে না, বরং 'হিউম্যানলি ইম্পসিবল' বুঝানো হয়েছে। যার অর্থ মানব জীবনের মিনিং যে নেই তা কিন্তু নয়। মিনিং
হয়ত থাকতে পারে, কিন্তু সেটা মানুষ এবং ইউনিভার্স দু'টোরই এক্সিস্টেন্সের মিশ্রণের কারণে হয়ত বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। তাই
মানুষ অ্যাবসার্ডিটির মুখোমুখি হয়েও জীবনের কোন মিনিং বের করতে পারে না।
তবে এই থিওরিটির ব্যাপারে প্রথম ধারণা দেন সোরেন
কিয়ের্কেগার্দ। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জ্যঁ পল সার্ত্রে এবং আলবেয়ার কামুর
হাত ধরে থিওরিটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে কিয়ের্কেগার্দ এবং কামু এই
অ্যাবসার্ডিটি কাটিয়ে ওঠার জন্য ৩ টি সমাধানও দিয়েছেন।
নাম্বার ওয়ান – অ্যাবসার্ডিটির মধ্যেই বাকি জীবন কাটিয়ে
দেওয়া। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তিবাদীদের কাছে এটাই সবথেকে এক্সেপ্টেবল সলিউশন।
নাম্বার টু – ধর্ম অথবা অলৌকিকতায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠা। পরকালে
বিশ্বাস করা এবং সেই অনুযায়ী লাইফ লিড করা।
নাম্বার থ্রি – সুইসাইড করার মাধ্যমে নিজেকে শেষ করে
দেওয়া!
অ্যাবসার্ডিজম নিয়ে Colorado State University এর ফিলোসফির বিখ্যাত প্রফেসর ডোনাল্ড এ কর্সবি একবার বলেছিলেন, “জীবনের
কোন মিনিং বা লজিক নেই। তাই বলে জীবন উপভোগ না করারও কোন কারণ নেই। যারা জীবনের
অর্থ খুঁজে পেয়েছে বলে দাবী করে তারা হয় মিথ্যা বলছে অথবা কোন ঘোরের মধ্যে আছে। দুই
ক্ষেত্রেই তারা হিউম্যান লাইফের কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবেলা করতে গিয়ে ফেইল
হয়।"