পূর্নিমা কী শাবনূরের থেকে বেশি সুন্দরী?

Author
0


ঢাকাই চলচ্চিত্রে গত দুই দশকে বহু নায়িকা এসেছে গিয়েছে। দর্শকদের মনে স্থায়ী অবস্থান গড়তে পেরেছে অল্প কয়েকজন। তাদের মধ্যে অন্যতম শাবনূর ও পূর্ণিমা। দুজনের অপরূপ সৌন্দর্যই মন্ত্রমুগ্ধ করেছে বাংলা সিনেমার দর্শকদের। কিন্তু যদি বলা হয় কে বেশি সুন্দরী?


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



শাবনুরের প্রথম ছবি ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এহতেশাম পরিচালিত চাঁদনী রাতে। এহতেশামের নায়িকা মানেই বিশেষ কিছু। তখন পর্যন্ত তাঁর সব আবিষ্কার শবনম, শাবানা, শাবনাজ সবাই সুপারহিট। ঢাকাই ছবিতে সেটা ছিল নতুনের জয়জয়কারের যুগ। এহতেশামের আগের ছবিটিই (চাঁদনী) নতুন জুটি শাবনাজ-নাঈমকে নিয়ে রেকর্ড ব্যবসা করেছে। চাঁদনী রাতের কয়েক মাস আগে মুক্তি পায় কেয়ামত থেকে কেয়ামত এবং মৌসুমী এক ছবি দিয়েই এক নম্বর নায়িকা হিসেবে আবির্ভুত হন। সবাই ধারনা করছিলেন, চাঁদনী রাতেও সুপার-ডুপার হিট হবে আর শাবনুর মৌসুমীর একজন যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।



ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এর ব্যবসা এতই খারাপ ছিল যে এর নায়ক সাব্বিরকে আর কখনোই কোন ছবিতে দেখা যায়নি। এর সঙ্গীত পরিচালক মাইলসের মানাম আহমেদ আর কোন ছবিতে সুরকারের কাজ পাননি। এমনকি এহতেশামের মত কিংবদন্তিতুল্য পরিচালকও এর ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেননি।

কিন্তু শাবনুর ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এবং বছর না ঘুরতেই মৌসুমী কে সরিয়ে পরিনত হয়েছিলেন এক নম্বর নায়িকায়। কেয়ামত থেকে কেয়ামত এবং অন্তরে অন্তরে ছবিতে একসাথে কাজ করার পর সালমান এবং মৌসুমীর ইগো প্রবলেম চরম আকার ধারন করে এবং দুজন দুজনের সাথে কাজ করা বন্ধ করে দেন। সালমানের তখন দরকার তার সাথে বয়স এবং অভিনয় দক্ষতায় ম্যাচ করবে, এমন একজন নায়িকা। চাঁদনী রাতের পর শাবনুর আরেকটি সুযোগ পেয়ে যান, কাজ করেন মন-প্রান ঢেলে। ছবির নাম স্বপ্নের ঠিকানা এবং এটি এখনো বাংলা ছবির ইতিহাসে সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবিগুলির একটা। সালমানের অকালমৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা ১৪টি ছবিতে একসাথে অভিনয় করেন। শাবনুরকে আর কখনোই পিছনে তাকাতে হয়নি।



অন্যদিকে ১৯৯৮ সালে অভিষেক হয় পূর্ণিমার। ‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবির যখন মহরত হয় তখন সবে নবম শ্রেণির ছাত্রী তিনি, বয়স বড়জোর ১৫। আসল নাম দিলারা হানিফ রিতা, নায়িকা হয়ে নাম নিলেন ‘পূর্ণিমা’। এ নামেই এখন তাঁকে সবাই চেনে। প্রথম ছবিতে নায়ক হিসেবে পেলেন রিয়াজকে। মুক্তির পর ছবিটি ব্যবসাসফল না হলেও নবাগতা নায়িকা ঠিকই নিজের নামের মতো আলো ছড়ালেন।



শুরুর দিকে পর পর কয়েকটি ছবি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি। ২০০০ সালে শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘যোদ্ধা’ ও নিজের প্রথম ছবির পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’ ব্যবসাসফল হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন পূর্ণিমা। ২০০১ সালে জুটি বাঁধেন মান্নার সঙ্গে, এফ আই মানিকের ‘সুলতান’ ব্যাবসায়িকভাবে দারুণ সফল হয়। এটিই পূর্ণিমা অভিনীত প্রথম সুপারহিট ছবি।       

পূর্ণিমার ক্যারিয়ারে বাঁকবদল ঘটে ২০০৩ সালে, যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত মতিউর রহমান পানুর ‘মনের মাঝে তুমি’র সুবাদে। চলচ্চিত্র তখন অশালীন দৃশ্য আর অসংলগ্ন চিত্রনাট্যের ছবিতে সয়লাব। এর মধ্যেই তুমুল ব্যবসা করে রোমান্টিক ছবিটি। এস এ হক অলিকের ‘হৃদয়ের কথা’ও পূর্ণিমার ক্যারিয়ারে বিশেষ সংযোজন। বাণিজ্যিক নাচ-গানের ছবির বাইরে সাহিত্য থেকে উঠে আসা চরিত্রেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘শাস্তি’ ও ‘সুভা’ অবলম্বনে নির্মিত ছবিতে অভিনয় করেও বেশ প্রশংসা পেয়েছেন। সমাদৃত হন মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ছবি ‘মেঘের পরে মেঘ’-এও।



এবারে যদি তুলনার দিকে আসি, অভিনয় ক্যারিয়ারের দিক দিয়ে অবশ্যই শাবনূর এগিয়ে থাকবেন। একটি সাক্ষাৎকারে পূর্ণিমা অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, একটা সত্যি ঘটনা বলি, শাবনূর আপু তখন সুপার-ডুপার হিট। তার যন্ত্রণায় আমরা কেউই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখতে পারছিলাম না! কোনো সিনেমায় ধারের কাছে যেতে পারছিলাম না। যখনই আমি শুটিং করতাম, তখন নির্মাতা-কোরিওগ্রাফাররা বলতেন, ‘কী এক্সপ্রেশন দাও! শাবনূরের মতো করো। শাবনূরের চোখ কথা বলে, ঠোঁট কথা বলে। তার পায়ের যোগ্যতা নেই।’ এসব শুনে আমি কোণায় গিয়ে কাঁদতাম।



এবারে যদি শুধুমাত্র সৌন্দর্য্যের বিচারে আসি, তাহলে শুরুতেই বলতে হয় সৌন্দর্য্য ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। একেকজনের কাছে সৌন্দর্য্য একেকরকম। তবে যদি শুধুই দুই নায়িকার প্রাইমের হিসাব করা হয়, দর্শকরা সম্ভবত শাবনূরকেই এগিয়ে রাখবে। সেই সময়ের শাবনূর ছিলেন অনন্যসুন্দরী। আবার যদি বর্তমানের কথায় আসি, তাহলে দর্শকরা হয়তো পূর্ণিমাকে এগিয়ে রাখবে। কারণ তিনি এখনও এই বয়সেও নিজের ফিটনেস ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে পেরেছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে মাঝেই মাঝেই তার ছবি ভাইরাল হয়। মানুষজন বলে থাকেন পূর্ণিমার বয়স সম্ভবত বাড়ছে না। কমেন্টে আপনাদের নিজ নিজ মতামত জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!