গত শতকে অ্যামেরিকান ডিপ্লোম্যাটিক ফিল্ডে সবথেকে ইনফ্লুয়েনশিয়াল নামগুলোর মধ্যে একটি হেনরি কিসিঞ্জার। অনেকের মতে, কিসিঞ্জার মার্কিন ইতিহাসের সবথেকে সফল সেক্রেটারি। তবে তার নামে বিতর্কের শেষ নেই। জার্মানিতে জন্মানো অ্যামেরিকান এই ডিপ্লোম্যাট বেশ কয়েকটি ওয়ার ক্রাইমের সাথেও জড়িত ছিলেন। যদিও সেগুলোর কোনোটার জন্যই তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয় নি।
যাই হোক, আরব ও ইসরায়েলের মধ্যকার ঝামেলা স্ট্র্যাটেজিকালি এলিমিনেট করার জন্য তিনি নতুন একটি ডিপ্লোম্যাটিক থিওরি দিয়েছিলেন, যা আজ শাটল ডিপ্লোমেসি নামে বিখ্যাত। এই শাটল ডিপ্লোমেসি জিনিসটা আসলে কি? খায় না মাথায় দেয়?
ধরুন, দুটি দেশ একে অপরের সাথে সংঘাতে
আছে। সেই সংঘাত এতটাই গুরুতর যে, সেই দুই দেশ যে নিজেদের
মধ্যে শান্তিচুক্তি করার কথা ভাববে তারও ন্যূনতম সম্ভাবনা নেই। এমন একটি অবস্থা
যে, কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। এরকম পরিস্থিতিতে যদি থার্ড পার্টি হিসেবে
শক্তিশালী কোনো দেশের প্রতিনিধি দুই পক্ষের মধ্যে মেসেঞ্জার হিসেবে দায়িত্ব পালন
করে এবং সেই ঝামেলা ঠিক করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে হয়তো সেই
ঝামেলা ঠিক হলেও হতে পারে। সহজ ভাষায় একেই বলে ‘শাটল ডিপ্লোমেসি’।
ব্যাডমিন্টন খেলায় শাটল যেমন বার বার দুই পক্ষের খেলোয়াড়ের
কাছে যায়,
শাটল ডিপ্লোমেসিতেও মধ্যস্থতাকারী সেই থার্ড পার্টিকে বার বার
দুই পক্ষের কাছে যেতে হয়।
১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ ও তেল রপ্তানির উপর আরব
নিষেধাজ্ঞা ছিল ইন্টারন্যাশনালি একটি বিরাট ঘটনা। তখন এই ঝামেলা ঠিক করা ওয়ার্ল্ড
পলিটিক্সের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কোল্ডওয়ারের সময় দুনিয়া তখন দুই
ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে ছিল কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র দেশগুলো, অন্য পক্ষে
ছিল অ্যামেরিকা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস। অ্যামেরিকা তখন ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে
ব্যস্ত। তাই তারা ভয়ে ছিল এই সুযোগে না সোভিয়েত দাও মেরে দেয়। সেক্ষেত্রে ঐ অঞ্চলে
তাদের প্রভাব বেঁড়ে যাবে। সেজন্য তখন এই ঝামেলা ঠিক করার জন্য দ্রুত স্টেপ নেন
তখনকার সেক্রেটারি অফ স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার। তার কাজ ছিল আরব ও ইসরায়েলের
ঝামেলাগুলোকে একপাশে সড়িয়ে রেখে লজিকাল কোন সল্যুশন দেওয়া। সেসময় তিনি পুরোপুরি
সফল না হলেও, তার দিয়ে যাওয়া ভিত্তির উপরে ভর করেই মিশর ও ইসরায়েল পরবর্তীতে ক্যাম্প
ডেভিড অ্যাকর্ড স্বাক্ষর করে।