আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় এখন বাংলা ওটিটির কিং কে? আপনার উত্তর কি হবে? নিশ্চয়ই চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম অথবা আফরান নিশোদের মধ্যে কারো একজনের নামই বলবেন, তাই তো? চলুন জেনে নেওয়া যাক তিনজনের মধ্যে আসলে সেরা কে?
ওটিটিতে
দেশের প্রথম হিট কন্টেন্ট কোনটি? নিশ্চয়ই চঞ্চল চৌধুরীর তাকদীরের কথাই ভাবছেন
আপনারা। তবে যদি ওয়েব ফিল্মকেও হিসাবে আনি, তাহলে প্রথম আলোচনায় আসা কন্টেন্ট বঙ্গ
অরিজিনাল ‘দ্বিতীয় কৈশোর’। যেখানে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিল নিশো, অপূর্ব ও
তাহসান। এই মুভির মাধ্যমেই নিশোর ওটিটি যাত্রা শুরু হয়েছি। তবে আক্ষরিক অর্থে
প্রথম হিট কিন্তু ঐ তাকদীরই। ২০২০ সালে হইচইয়ে মুক্তি পাওয়া বাংলা এই সিরিজ
লিটারেলি কাঁপিয়ে দিয়েছিল দুই বাংলাকে। এই বছর তো তেলুগু রিমেকও বের হলো ডিজনি+হটস্টারে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
তাকদীর
হিট হওয়ার পরেই চঞ্চল চৌধুরী হয়ে ওঠেন বাংলার নির্মাতাদের জন্য হটকেক। একের পর এক
কাজ উপহার দিয়েছেন তিনি এর পরে। জি ফাইভের সাথে করেছেন অ্যাকশন থ্রিলার
‘কন্ট্রাক্ট’। যা খুব একটা জনপ্রিয়তা না পেলেও তার গ্যাংস্টার অবতার ঠিকই এসেছিল
আলোচনায়। এরপরে অভিনয় করেন চরকির অ্যান্থোলজি সিরিজ ‘ঊনলৌকিক’ ও গোয়েন্দা সিনেমা
‘মুন্সিগিরি’ তে। দুটো কাজই পছন্দ করে দর্শকরা। মাঝে হইচইয়ের সাথে করা ‘বলি’
সিরিজটি খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায় নি।
তবে
তিনি দাপটের সাথে ফিরে আসেন চরকির ‘জাগো বাহে’, ‘পেট কাঁটা ষ’ ও হইচইয়ের ‘কারাগার’
দিয়ে। এর মধ্যে পরের কাজ দুটি পায় তুমুল জনপ্রিয়তা। ইউনিক দুটি চরিত্রে দুর্দান্ত
অভিনয় করেন তিনি।
এরপর
চরকির সাথে আরো দুটি কাজ আসে তার। দুই দিনের দুনিয়া ও ওভারট্রাম্প। তবে দুটো কাজই
ফ্লপ হয়। তবে মাঝে তার ‘হাওয়া’ সিনেমাটি হয় ব্লকবাস্টার হিট। বক্স অফিসে প্রায় ১৬
কোটির ব্যবসা করে। সামনেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে সৃজিত মূখার্জির সাথে করা তার
‘পদাতিক’ সিনেমাটি। যেখানে কিংবদন্তি নির্মাতা মৃণাল সেনের চরিত্রে দেখা যাবে
তাকে।
অন্যদিকে,
বাংলার আরেক কিংবদন্তি অভিনেতা মোশররফ করিমের ওটিটিতে অভিষেক হয় ২০২১ সালে। হইচই
প্ল্যাটফর্মেই জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুণ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেন পলিটিকাল
থ্রিলার ‘মহানগর’। যেখানে তার করা ওসি হারুন চরিত্রটি সুপার ডুপার হিট হয়। অলরেডি
সিরিজটির দুটি সিজন বের হয়ে গেছে। ৩ নম্বর সিজনটিও আসবে শীঘ্রই। এই মূহুর্তে বাংলা
ওটিটির সবথেকে পপুলার সিরিজ এটিই।
মহানগর
বাদ দিলে মোশাররফ করিম আর মাত্র দুটি সিরিজেই অভিনয় করেছেন। সেগুলো হচ্ছে ‘দাগ’ ও
‘দৌড়’। তবে কোনটাই খুব একটা সাড়া জাগাতে পারে নি খারাপ মেকিং এর কারণে।
মহানগর সিজন থ্রি ছাড়াও সামনেই আসতে চলেছে মোশাররফ করিমের গ্যাংস্টার সিনেমা ‘হুব্বা’। কলকাতার নির্মাতা ব্রাত্য বসুর এই সিনেমায় হুগলির গ্যাংস্টার হুব্বা শ্যামলের চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি।
চঞ্চল
ও মোশাররফ বাংলার দুই কিংবদন্তি হলেও এই মূহুর্তে সবথেকে বেশি আলোচনায় আছেন আফরান
নিশো। প্রথম সিনেমা ‘সুরঙ্গ’ দিয়েই বাজিমাত করে ফেলেছেন তিনি। সুপার ডুপার হিট এই
সিনেমাটি প্রায় ৫ কোটির ব্যবসা করার পর মুক্তি পেয়েছে চরকি প্ল্যাটফর্মে।
ওটিটিতে
নিশোর প্রথম দিককার কাজ ‘দ্বিতীয় কৈশোর’ ও ‘মাইনকার চিপায়’ কোয়ালিটির দিক দিয়ে
চমৎকার হলেও ঐভাবে জনপ্রিয়তা পায় নি। পরবর্তীতে যা পেয়েছিল ‘মরীচিকা’ সিরিজটি। তার
করা ভিলেইন চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০২২ সালে বাংলা ওটিটি রাজ করেন তিনি।
‘রেডরাম’ ও ‘কাইজার’ এ প্রথমবারের মতো গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেন
তিনি। দুটোই দারুণ পছন্দ করে দর্শকরা। ঐ বছরেই মুক্তি পাওয়া সিন্ডিকেট সিরিজটিও
হিট হয়। তবে এই বছর সুরঙ্গ দিয়ে বাজিমাত করলেও হইচই সিরিজ ‘সাড়ে ষোল’ হয়েছে ফ্লপ।
বলতে গেলে ওটিটিতে প্রথম ফ্লপের দেখা পেলেন তিনি।
যাই
হোক, কন্টেন্ট বাছাই, কোয়ালিটি ও অভিনয়, সবদিক মিলিয়ে চিন্তা করলে আমাদের চোখে
বাংলা ওটিটির কিং চঞ্চল চৌধুরী। পেট কাঁটা ষ সিরিজের ‘মিষ্টি কিছু’ এপিসোডে তার
করা সেই অভিনয় এখনো চোখে লেগে আছে। তবে খুব একটা পিছিয়ে নেই
মোশাররফ করিম কিংবা আফরান নিশোরাও।