সুপারকন্টিনেন্ট প্যানজিয়া ভাঙলো কেন? Pangaea Supercontinent

Author
0

 


জার্মান সায়েন্টিস্ট ওয়্যাগনারের মতে, ইন্ডিয়া, সাউথ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও অ্যান্টার্কটিকা একসাথে জড়ো হয়ে গন্ডোয়ানাল্যান্ড তৈরি করেছিল। অন্যদিকে, নর্দার্ন আমেরিকা, ইউরোপ, নর্থ ও মিড এশিয়া মিলে হয়েছিল লরেশিয়া। এই গন্ডোয়ানাল্যান্ড ও লরেশিয়া মিলে যে বিশাল সুপারকন্টিনেন্ট গঠিত হয়েছিল তার নামই প্যানজিয়া। ৩৫০ মিলিয়ন বছর আগে জন্ম নেওয়া এই প্যানজিয়াই বর্তমানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মহাদেশগুলোর আদি ও অকৃত্রিম রূপ। আলফ্রেড ওয়্যাগনার এই প্যানজিয়াকে ঘিরে থাকা বিশাল মহাসাগরের নাম দিয়েছিলেন প্যানথালাসা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এবং কেন ভাঙলো এই প্যানজিয়া? এর পেছনে দায়ী ছিল টেকটোনিক প্লেটের মুভমেন্ট। তবে অবশ্যই এই ঘটনা এক দিনে ঘটেনি। ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে যখন প্যানজিয়ার ভাঙন শুরু হয়, তখন পৃথিবীতে নেমে আসে এক মহাবিপর্যয়। যে বিপর্যয়ে তখনকার প্রায় নব্বই পার্সেন্ট প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে যায়! প্রাণিজগতে ঘটে যায় বিরাট এক বিবর্তন।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



এভাবে শতকোটি বছর ধরে মহাদেশীয় ভাঙাচোরা ও বিবর্তনের মধ্য দিয়েই গেছে পৃথিবী। আর এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার জন্য ১৯১২ সালে ওয়্যাগনার কন্টিনেন্টাল ড্রিফট থিওরি দেন। এই থিওরি অনুসারে, পৃথিবীর ভূমি ছিল ভাসমান অবস্থায় এবং তা ধীরে ধীরে এক জায়গা থেকে আলাদা হয়ে অন্য জায়গায় জোড়া লেগেছে। মজার ব্যাপার হলো, কন্টিনেন্টাল এই ড্রিফটেরই ফসল হিমালয়, আল্পস পর্বতমালা ও গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মতো গিরিখাত। ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, স্লোভেনিয়া থেকে শুরু করে বিস্তৃত আল্পস পর্বতমালা–এই সবকিছুই আফ্রিকান ও ইউরোপের টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে তৈরি হয়েছিল।

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাকে কানেক্ট করা পাথুরে অঞ্চলটি প্রায় ১৭ মিলিয়ন বছর ধরে তৈরি হয়েছিল। যার ফলে পৃথিবীর জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে পানির ওপেন ফ্লো বন্ধ হয়ে যায়। দুই অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিবেশ ও প্রাণীদের মাঝে পার্থক্য তৈরি হতে থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ভৌগোলিক বিবর্তন কিন্তু থেমে নেই, এখনও চলছে। চলছে টেকটোনিক প্লেটও। ভেবে দেখেন, একটা ভূমিকম্প কিংবা সুনামিই কিন্তু বুঝিয়ে দেয় প্রকৃতির কাছে আমরা কতটা অসহায়।

কন্টিনেন্টাল ড্রিফট থিওরিমতে, ভূমিগুলো বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে নোটিস করার মতো জায়গা হচ্ছে আইসল্যান্ড। নর্থ আমেরিকা ও ইউরেশীয় প্লেটের অবস্থান একদম আইসল্যান্ডের মাঝেই। GPS-এর মাধ্যমে ওই জায়গার অবস্থান মেপে দেখা গেছে, নর্থ আমেরিকা ও ইউরোপ আড়াই সেন্টিমিটার করে একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ, প্রতিবছর প্রায় এক ইঞ্চি করে! এক শতাব্দী পর ইউরোপ এবং আমেরিকা একে অপরের থেকে ৮ ফুট দূরে সরে যাবে।



তবে কন্টিনেন্টাল এই ড্রিফটের কারণে খুবই উইয়ার্ড একটি থিওরি নিয়ে ইদানিং মাথা ঘামাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মহাদেশগুলো কি আবারও এক হবে কখনো? পৃথিবী যেহেতু গোলাকার, তাই যদি একদিক থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, তাহলে লাখ লাখ বছর পর ঠিক বিপরীত দিকে গিয়ে আবার মিলিত হওয়ার কথা। কন্টিনেন্টাল ড্রিফট জিনিসটাই এমন, যুগের পর যুগ চলতেই থাকে।

এক সময় যে দুটি জায়গা একসাথে ছিল তা এখন দূরে চলে গেছে, আবার যে দুটি জায়গা দূরে ছিল তা এখন একসাথে! এ যেন ন্যাচারাল পেন্ডুলাম। তাই যে প্যানজিয়া ভাগ হয়ে এতগুলো মহাদেশের সৃষ্টি হলো, কে জানে হয়তো একদিন আবার সেগুলো এক হয়েও যেতে পারে!

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!