বিশ্বজুড়ে ভ্যালেন্টাইন্স ডের যত অদ্ভুতুড়ে উদযাপন || How Valentine's Day is Celebrated Globally

Author
0


তরুণ-তরুণীদের বহুল আকাঙ্খিত "ভালোবাসা দিবস"। যেদিন কাপলরা প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে ভালোবাসা উদযাপন করে থাকে। তবে এই দিনে বিশ্বজুড়ে অনেক উদ্ভট পদ্ধতিতেও ভালোবাসাকে উদযাপন করা হয়। চলুন জেনে আসা যাক এমনই কিছু অভিনব তরিকা সম্পর্কে।


জাপানের রিভার্স গিফট সিস্টেম

জাপানে ভ্যালেন্টাইনস ডের কালচার একমদই উলটা। সেখানে নারীরা চকলেট গিফট দেয় পুরুষদের। জাপানে এই রীতি শুরু হয়েছিল ১৯৩০-র দশকে। নারীদের জন্য পুরুষ কো-ওয়ার্কার ও বসদেরকে চকলেট উপহার দেওয়া কম্পালসরি করা হয়। তবে এর এক মাস পরেই, হোয়াট ডে-তে, পুরুষরা নারীদেরকে চকলেট উপহার দিয়ে সেই ঋণ শোধ করে দেয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এর পেছনে পুরোপুরি বাণিজ্যিক স্বার্থ জড়িত ছিল। এই অদ্ভুত নিয়ম শুরু করেছিল দেশটির কনফেকশন ইন্ডাস্ট্রি। এখন সমানে ফায়দা লুটে নিচ্ছে তারা। এই দুটি বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে ভ্যালেন্টাইন'স মৌসুমে দেশটির চকলেট ইন্ডাস্ট্রি বাড়তি আয় করে পুরো ৬৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



নরওয়ের গেম অফ লাভ নোট

নরওয়েতে ভ্যালেন্টাইন্স ডেকে ঘিরে কপত-কপতিরা একটি মজার খেলা তৈরি করেছে। যার নাম জিকেব্রেভ। খেলার মধ্যে তরুণ-তরুণীরা মজার ছড়া বা লাভ নোট লেখে, কিন্তু সেখানে নিজেদের নাম না লিখে ডট ডট দিয়ে রাখে। সেটি দেখে যে রিসিভ করে সে যদি বুঝতে পারে নোটটি কে দিয়েছে, তার জন্য থাকে বিশেষ পুরস্কার। তবে সেই পুরষ্কারটি বেশ মজার। ইস্টার সানডের একটি ডিম!


ব্রাজিলের লটারি অফ লাভ

ব্রাজিলের ভ্যালেন্টাইন'স ডে-কে বলা হয় দিয়া দস নমোরাদোস। তবে এটি ১৪ ফেব্রুয়ারিতে না, পালন করা হয় ১২ই জুন। এই দিনটিকে সামনে রেখে কমবয়সী মেয়েরা একটি বিশেষ নিয়ম মেনে চলে। কাগজের ছোট ছোট টুকরায় তাদের ক্রাশদের নাম লিখে ভাঁজ করে একটি কন্টেইনারের ভেতর ফেলে। তারপর ১২ জুন তারা কন্টেইনারের ভেতর থেকে যেকোনো একটি কাগজের টুকরা তুলে নেয়। এভাবে ভাগ্যের জোরে যার নাম ওঠে, তাকেই তারা যোগ্য পার্টনার হিসেবে মেনে নেয়।


আয়ারল্যান্ডের রিয়েল ভাইভ অফ ভ্যালেন্টাইন

আয়ারল্যান্ডের লোকজনের ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপনে তেমন আলাদা কিছু আছে কিনা তা বলতে পারছি না। তবে ঐতিহাসিক ভ্যালু হিসাব করলে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন এই দিনটির জন্য খুবই স্পেশাল। কারণ সেখানকার হোয়াইটফ্রেয়ার স্ট্রিট কারমেলাইট চার্চেই শুয়ে আছে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের ডেডবডি! তাই ডাবলিনে ভালোবাসা দিবস পালন করলে শরীরে একটা ভাব তো অবশ্যই আসবে।


অ্যামেরিকার ব্লাইন্ড ডেট

ব্লাইন্ড ডেটিং ব্যাপারটির কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন? বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড। ভ্যালেন্টাইন্স ডের দিন অ্যামেরিকার ডালাস, টেক্সাসের 'ওপাক' নামক একটি রেস্টুরেন্ট দিচ্ছে এমনই এক সুযোগ। অন্ধকারের মধ্যে চার কোর্সের একটি মেন্যু সার্ভ করা হয়। যার মাধ্যমে একটু অন্য রকম কিন্তু খুবই অন্তরঙ্গ একটি ডাইনিং এক্সপেরিয়েন্সের স্বাদ পায় কাস্টোমাররা।


সাউথ কোরিয়ার হোয়াইট ডে-ব্ল্যাক ডে

সাউথ কোরিয়ানরা অন্যদের থেকে আরো এক ধাপ উপরে। তারা প্রতি মাসেরই ১৪ তারিখে ভালোবাসাকে সেলিব্রেট করে। তবে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের ১৪ তারিখ তাদের জন্য একটু বেশিই স্পেশাল। এসব দিনে জাপানের মতোই মেয়েরা ছেলেদের চকলেট গিফট করে। এবং ছেলেরা ১৪ই মার্চের হোয়াইট ডেতে সেই ফেভার রিটার্ন করে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাসখানেক পরেই সিঙ্গেলদের জন্যেও রয়েছে আয়োজন। যার নাম ব্ল্যাক ডে। না, এটি কোনো ধরণের স্যাটায়ার বা ব্ল্যাক কমেডি না। সিরিয়াসলিই পালন করা হয় এই দিবস। সিঙ্গেল লোকজন আগের মাসে গিফট থেকে বঞ্চিত থাকে। তাই তারা সবাই ব্ল্যাক ডেতে গেট টুগেদার করে এবং একসাথে জাজিয়াংমিয়ন বা ব্ল্যাক নুডলস খেয়ে দিনটি উদযাপন করে।



এস্তোনিয়ার জাস্ট ফ্রেন্ড ডে

এস্তোনিয়াতে ভ্যালেন্টাইন্স ডেকে জাস্ট ফ্রেন্ড দিবস হিসেবে পালন করা হয়। নাহ, ঐ জাস্ট ফ্রেন্ডের কথা বলছি না। তারা এই দিনটিকে বন্ধু দিবস হিসেবেই পালন করে। বন্ধুরা একে অপরকে কার্ড ও গিফট দেওয়ার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে থাকে।


ওয়েলসের ভালোবাসার চামচ

ওয়েলশরা ভ্যালেন্টাইন্স ডে একটু আগেভাগেই পালন করে ফেলে। প্রায় ২০ দিন আগে, অর্থাৎ ২৫শে জানুয়ারি। তাদের উদযাপনের ভঙ্গিটাও একটু আলাদা। প্রিয়জনকে তারা লাভ স্পুন বা ভালোবাসার চামচ গিফট করে। এটি ওয়েলশের বহু বছর পুরাতন একটি ট্র্যাডিশন। ভালোবাসার এই চামচ নরমালি কাঠ দিয়েই তৈরি করা হয়। এর মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু হিডেন ক্লুও থাকে। যেমন চামচের হাতলে যতগুলো পুতি কিংবা কাঁটা অংশ থাকে, হতে পারে প্রিয়জনের কাছে সে ততগুলো বাচ্চা-কাচ্চা এক্সপেক্ট করছে।


ফ্রান্সের লাভ লটারি

একসময় ফ্রান্সে অদ্ভুত এক উপায়ে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করা হতো। সিঙ্গেল লোকজন একেরপর এক পার্টনার সুইচ করতে থাকতো যতক্ষন না পারফেক্ট ম্যাচ পেয়ে যায়। যেমন কোনো একজন পুরুষের তার কাছে আসা মেয়েটিকে মনে ধরলো না, সে তখন তাকে পরের জনের কাছে পাস করে দিতো। তবে এই ট্রেডিশনের নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ না হলেও তারা চাইলে গেট টুগেদার, বনফায়ার, ফটো সেশন সবই করতে পারতো। অবশ্য ফ্রান্স সরকার পরবর্তীতে লাভ লটারি সিস্টেমটি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।


স্লোভেনিয়ার লাভ বার্ড

স্লোভেনিয়াতে ভ্যালেন্টাইন্স ডে শুরু হয় বসন্ত উদযাপন শুরু হওয়ার সাথেই। আমাদের দেশের মতোই। তবে তাদের উদযাপনের ধরণটা একদমই অন্যরকম। যখন নতুন ফুল ফোঁটা শুরু হয় এবং পাখিদের কিচির মিচির শুরু হয়, তখন মেয়েরা বাইরে বের হয় এবং আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। প্রথম যে পাখি তাদের নজরে পড়ে তার উপর ভিত্তি করেই তারা ঠিক করে তাদের ভবিষ্যত জীবনসঙ্গি কেমন হবে।


ইরাকের কুর্দিদের ফিস্ট অফ লাভ

ইরাকের কুর্দিরা ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করে ফিস্ট অফ লাভের মাধ্যমে। আদম ও হাওয়ার ঘটনার মতোই তারা লাল আপেল খেয়ে এই দিনটি উদযাপন করে। তবে এখানে সেই আপেল দিয়ে তারা ভালোবাসা ও সুখকে রিপ্রেজেন্ট করে।


গুয়াতেমালার লাভ প্যারেড

গুয়াতেমালায় ট্র্যাডিশনালি অনেকদিন ধরেই ভালোবাসা দিবসের দিন লাভ প্যারেড হয়ে আসছে। এই দিনটিকে তারা দ্য ডে অফ অ্যাফেকশন হিসেবে পালন করে। এদিন সিনিয়র সিটিজেনরা স্পেশাল ড্রেসের সাথে পালক ও মাস্ক দিয়ে নিজেদের সাজায়।


ফিলিপাইনের গণহারে বিয়ে

গয়নাগাটি, মানুষ খাওয়ানো, হাজারো ঝামেলার ভয়ে বিয়ে করতে পারছেন না? কোনো প্যারাই নাই। সময় থাকতে চলে যান ফিলিপাইনে। ফিলিপাইনে ভ্যালেন্টাইন্স ডে কাপলদের জন্য রীতিমত স্বপ্নের মতো। যেসব কাপল বিয়ের খরচ এফোর্ড করতে পারে না, ভ্যালেন্টাইন্স ডের দিন তাদেরকে সরকারিভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি বিয়ের আংটির খরচ পর্যন্ত সরকার দেয়! তাই সেদিন দেশটিতে গণহারে বিয়ের উৎসব দেখা যায়।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!