১০০ জন বালককে ধ*র্ষ*ণ করে হ*ত্যা করেছিল পাকিস্তানের যেই সিরিয়াল কি*লার || Javed Iqbal || Pakistan

Author
0


“আমি জাভেদ ইকবাল। ১০০টা বাচ্চাকে খুন করেছি আমি। এই পৃথিবীকে ঘৃণা করি আমি। আমি আমার এই কাজের জন্য একদমই লজ্জিত নই। আমি মৃত্যুর জন্য রেডি। আমার কোনো আফসোস নেই। আমি ১০০টা বাচ্চাকে হত্যা করেছি।” ধরা দেওয়ার পরে ভয়ডরহীন কণ্ঠে এটাই ছিল জাভেদ ইকবালের স্টেটমেন্ট।

কে ছিলেন এই জাভেদ ইকবাল? হিস্টোরি অফ সিরিয়াল কিলিং এ ভিক্টিম কাউন্টের দিক দিয়ে যার উপরে আছে কেবল মাত্র দুজন!


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



জাভেদ ইকবালের ডাক নাম ছিল মুকরি। তিনি ছিলেন একজন রিচ কিড। তার বাবা ছিলেন স্টক মার্কেটের ট্রেডার। তাই তার শুরুর দিকের জীবনটা বেশ আরামেই কেটেছিল। কিন্তু এরপর কিছু আনএক্সপেক্টেড ইভেন্টস তার জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। সেসব ঘটনার জের ধরেই একপর্যায়ে তার মাথায় খুনের নেশা চাপে, এবং সে প্রতিজ্ঞা করে ১০০ জন মাকে কাঁদানোর।

“আমি চাইলে ৫০০ জনকে মারতে পারতাম। সেটা কোনো সমস্যাই ছিল না। টাকাও কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু আমি অঙ্গীকার করেছিলাম ১০০ শিশুকে মারার। সেই অঙ্গীকার আমি কখনোই ভাঙতে চাইনি।” ধরা দেওয়ার পরে এমনটাই জানিয়েছিলেন জাভেদ ইকবাল।


মুকরির ভয়ানক সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠার মোটিভ

মুকরির বয়স তখন মাত্র ২০। সেই সময় একবার ধর্ষণের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু সে ছিল নির্দোষ, পুলিশ তাকে জোর করে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। মুকরির মা তাকে খুবই ভালোবাসতেন। সম্ভাব্য সকল চেষ্টা করেও তিনি ছেলেকে জেল থেকে বের করতে পারেন নি। মুকরি যখন জেল থেকে মুক্তি পান, ততদিনে তার শোকে তার মা মারা গিয়েছেন। মায়ের মৃত্যু সংবাদে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠেছিল তার মনে। সে ঠিক করেছিল, তার মাকে যে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, সেই কষ্ট আরো ১০০জন মাকে দেবে সে। এরপরই প্ল্যান করে ১০০ জন বালককে কিডন্যাপ, ধর্ষণ ও ১০০ হত্যা করার।


কি ছিল সেই প্ল্যান?

তার ভিক্টিম ছিল মূলত ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সী বালকরা। ২০০১ সালে ডেইলি ডন পত্রিকায় দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি তার কিলিং প্রসেস সম্পর্কে জানান। ভিক্টিমদের অ্যাট্রাক্ট করতে একটি ভিডিও গেমস শপ চালু করেছিল সে। শাদবাগ এলাকায় সেটিই ছিল প্রথম গেমস শপ। আর সেখানে খুব কম দামে গেমস খেলার টোকেন দেয়া হতো। মাঝেমাঝে আবার বিনামূল্যে খেলতে দেওয়া হতো। তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকায় নামডাক ছড়িয়ে যায় গেমস শপটির।

এরপর আরেকটি ফন্দি এটেছিল সে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করেই ফ্লোরে ১০০ রুপির নোট ফেলে রাখত। তারপর নজর রাখত, কে সেটি উঠিয়ে নেয়। এর কিছুক্ষণ পর সে ঘোষণা করত, তার ১০০ রুপি চুরি হয়েছে, তাই সবাইকে সার্চ করা হবে। তারপর নোটটি যে নিয়েছিল তাকে ধরে পাশের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতো। কখনো কখনো ধর্ষণের পরে সেই বালককে ওই ১০০ রুপি দিয়েও দিত। তবে ভিডিও গেমস শপ দিয়ে খুব বেশিদিন কাজ চালানো সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। কারণ কিছুদিন পরই ওই এলাকার গার্ডিয়ানরা তাদের সন্তানদের ভিডিও গেমস খেলার উপরে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

যেহেতু টাকা-পয়সা ছিল মুকরির হাতের ময়লা, তাই এরপরে সে একটি মাছের অ্যাকুরিয়াম ও জিমের দোকান দেয়।


কেন পুলিশ তাকে কখনো ধরতে পারে নি?

মুকরি মূলত ভিক্টিম হিসেবে গরিব বালকদের বেছে নিত, যাদের জন্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছিল খুবই স্বাভাবিক। এছাড়াও সে রেগুলার পত্রমিতালির মাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরি করত। এরপর বিভিন্ন দামি গিফট পাঠিয়ে তাদের মন জয় করত। পরে সে বিভিন্ন ভাবে ফাঁদে ফেলে তাদেরকেও কিডন্যাপ করত। তাদেরকে সে তার শাদবাগের বাসায় নিয়ে যেত। সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রথমে সে ভিক্টিমদের ধর্ষণ করত। তারপর তাদেরকে খুন করত। এরপর বডিগুলোকে কেটে টুকরো টুকরো করত। তারপর বাকি পার্টসগুলো সে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দিয়ে ডিজলভ (Dissolve) করে ফেলত, যাতে করে ভিক্টিমদের কোন চিহ্নই আর না থাকে।

এরপর সব কিছু সে নদীতে ফেলে দিয়ে আসত। যদিও তার বাসার দেয়ালে পুলিশ ও সাংবাদিকরা রক্তের দাগ পেয়েছিল। এছাড়াও খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল একটি চেইন, যেটি দিয়ে সে ভিক্টিমদের খুন করার পর কেটে টুকরো করত। এছাড়াও ভিক্টিমদের ছবিসহ একটি প্লাস্টিকের ব্যাগও পাওয়া গিয়েছিল। তবে মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি, দুটি বিশাল অ্যাসিডের ড্রামের ভিতর পাওয়া গিয়েছিল ভিক্টিমদের হাড়গোড়। ইভেন ভিক্টিমদের জামাকাপড়ও যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন তিনি বাসায়।


মুকরির ধরা পড়া ও মানুষজনের দেশব্যাপি ক্ষোভ

১৯৯৯ সালের শেষদিকে একটি পত্রিকায় চিঠি পাঠান জাভেদ ইকবাল। সেই পত্রিকায় তার অপরাধের কথা স্বীকার করেন তিনি। অনেকটা আমেরিকার বিখ্যাত জোডিয়াক কিলারের মতো। এরপর পাকিস্তান পুলিশ বিশাল এক ম্যানহান্টিং এর ব্যবস্থা করে। ইভেন ডজন খানেক সন্দেহভাজন লোককে গ্রেফতারও করে তারা। শেষমেশ মাসখানেক পরে ৩০ ডিসেম্বর জাভেদ ইকবাল নিজেই ধরা দেয়। তবে তিনি পুলিশ স্টেশনে যান নি। গিয়েছিলেন উর্দু পত্রিকা ডেইলি জাঙ এর অফিসে। পত্রিকা অফিসে তিনি ৩২ পেজের একটি ডায়েরিও দেন। যেখানে তার কাণ্ডকারখানার বিস্তারিত বর্ণনা ছিল।

এরপরেই দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়। ভিক্টিমদের জামাকাপড় হাতে নিয়ে কাঁদছেন তাদের পরিবারের লোকজন – এরকম দৃশ্য স্তব্ধ করে দেয় গোটা পাকিস্তানকে। কিন্তু কিছুদিন পরেই জাভেদ ইকবাল নিজের দোষ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন আসলে তিনি একটা বানোয়াট কাহিনী বলেছেন লোকজনকে সচেতন করার জন্য। কিন্তু ততদিনে সকলে বুঝে ফেলেছে তিনি আসলে একজন সাইকো।



জাভেদের পরিণতি কি হয়েছিল?

২০০০ সালের ১৬ই মার্চ বিচারপতি আল্লাশ বকশ শাস্তি ঘোষণা করেন জাভেদের।

“জাভেদ ইকবাল ১০০ খুনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তার শাস্তি হলো, তাকে ১০০ বার শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হবে। এরপর তার শরীরকে ১০০ খন্ডে টুকরো করা হবে, এবং সেগুলো অ্যাসিডে ডুবানো হবে, ঠিক যেমনটা সে তার শিকারদের সাথে করেছে।”

এই শাস্তিতে সাধারণ জনগণ খুবই খুশি হয়েছিল। শাস্তির প্রসেসও ঠিক করা হয়েছিল ইসলামি ওয়েতে। জনসম্মুখে একটি পার্কে এই শাস্তি কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু সুশীল সমাজের প্রতিবাদে পরে সেই শাস্তি বাদ দেওয়া হয়। সাধারণ ফাঁসিই ঠিক করা হয়। কিন্তু তার আগেই জাভেদ ইকবাল জেলের ভেতরেই সুইসাইড করে মারা যান। এভাবেই শেষ হয় সাব কন্টিনেন্টের সবথেকে ভয়ংকর সিরিয়াল কিলিং এর চ্যাপ্টার।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!