এই সময়ে সালমান
শাহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ের মতো অভিনয় করেও বিচারকদের চোখ এড়িয়ে গেছেন
বলে কারও কারও মত। আবার কেউবা বলছেন, প্রতিভাধর হলেও পুরস্কার জয়ের মতো সিনেমা তিনি
পাননি।
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে জন্ম গ্রহণ করে “ইমন চৌধুরী”। টেলিভিশন নাটক দিয়ে অভিনয় শুরু করা ইমন চৌধুরী, ১৯৯৩ সালে “সালমান শাহ” নামে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে। বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিভাগে স্বীকৃতি হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান “জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার”। প্রতি বছরই তা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। তবে সালমান শাহ কেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন না?
সালমান শাহ’র প্রথম
সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এর পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান একটা ইন্টারভিউতে বলেন,
“সে সময় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডে যারা ছিল, তারা মনে করেছে সালমান
শাহ জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার মতো অভিনয় করেননি। তাই তারা দেন নাই”।
তবে পরিচালক সোহানুর
রহমান সোহান মনে করেন, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমাতে পুরস্কার পাওয়ার মতো অভিনয়ই
করেছিলেন সালমান শাহ।
সেই পরিচালক আরও
বলেন,
“আমার কেয়ামত থেকে
কেয়ামত সিনেমায় সালমান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেত। কিন্তু সে সময় এফডিসিতে এটা
নিয়ে অনেকে আন্দোলন করল যে, গল্প কপি করা ছবিকে পুরস্কৃত করা যাবে না। অথচ ছবির গল্প
অনুপ্রাণিত হলেও আমরা তো আমাদের মতো করে বানিয়েছি। সালমান শাহ তার মতো করে অভিনয়
করেছেন। তারপরও তাকে শুধু এই কারণ দেখিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
আমাদের দেশে মেধার
মূল্যায়ন হয় না। এর পরে যারা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে, তাদের দিকে তাকালে
সালমান শাহর জন্য শুধু আফসোসই হয়”।
সালমান শাহকে নিয়ে পরিচালক মতিন রহমান নির্মান করেন ‘তোমাকে চাই’ সিনেমাট। সিনেমাটি যেমন ব্যবসাসফল হয়েছিল; তেমনি প্রশংসিত হয়েছিল সালমান শাহর অভিনয়। সিনেমায় “ভালো আছি ভালো থেকো” গানটা এখনও পর্যন্ত জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
সালমান শাহকে নিয়ে ‘এই ঘর এই সংসার’ নামে একটি সিনেমা বানিয়েছিলেন সময়ের আলোচিত নির্মাতা মালেক আফসারী। তিনি বলেন, “সালমান শাহ জাতীয় পুরস্কার অবশ্যই পেত। সে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। তার অভিনয়, সংলাপ, চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া সবই ইউনিক। এই ঘর এই সংসার ছবিতে অভিনয়ের জন্যই জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল। লাখো দর্শক বলছে সালমান শাহর অভিনয় দেখে তারা কান্না করেছে। বিচারক প্যানেলের ১০-১২ জন তো আর এই লাখ লাখ দর্শকের বাইরের কেউ নন। তারা চাইলেই সালমান শাহকে বিবেচনায় আনতে পারতেন”।
সালমান শাহ’র মা ছিলেন জাতীয় পার্টির নেত্রী “নীলা চৌধুরী”। মালেক আফসারী বলেন, “জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়ার সময় বিচারক প্যানেল যদি ভাবতে থাকেন, কে কোন দল করে, কে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে, সেটা দেখে পুরস্কার দিতে হবে, সেটা খুবই অন্যায়। কোটি দর্শক যাকে ভালো বলতে পারে, যার অভিনয়ের প্রশংসা করতে পারে, ১২জন বিচারক তাকে ভালো মনে না করলে সালমান শাহর কিছুই যায় আসে না। আমি মনে করি সালমান শাহ আজীবন দর্শকের মাঝে বেঁচে থাকবে”।
সালমান শাহ’র ফিল্ম ক্যারিয়ার ছিলো মাত্র তিন বছর। সেই ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তার সমসাময়িক শক্তিমান অভিনেতা “রাইসুল ইসলাম আসাদ” তিনবারই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। সালমান শাহর সময়কার আরেক জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ওমর সানী বলেন, “সালমান শাহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ পাননি। তিনি ছবিই করেছেন মাত্র ২৭টা। শতাধিক সিনেমা করেও অনেকে পুরস্কার পাননা”।
এ প্রজন্মের চিত্রনায়ক
নিরব হোসেন বলেন, “সালমান শাহ জাতীয়ভাবে ভালোবাসা পেয়েছেন। এখন যারা জন্ম নিচ্ছে
তারাও সালমান শাহকে পছন্দ করে। তার কাজ দেখে। সালমান শাহ যদি বেঁচেও থাকতেন এবং পুরস্কার
নাও পেতেন, তাও তার আক্ষেপ থাকত না বলে আমি মনে করি। দর্শকের ভালোবাসাটাই সালমান শাহর
জন্য বড় জাতীয় পুরস্কার। তার আর কিছু লাগে না”।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিজ বাসস্থান থেকে সালমান শাহ’র ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। এটা আত্মহত্যা না কি হত্যা! তা আজও পর্যন্ত একটা রহস্য।