হুমায়ুন ফরিদী কি সত্যিই বদলেছিলেন? || Humayun Faridi || Legendary Actor

Author
0

 


“তুমি বলেছিলে মানুষ বদলায়, তাই তুমি বদলে গেলে। কিন্তু আমি তো বদলাইনি, তবে আমি কি মানুষ নই?”

বাংলাদেশের অভিনয় জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ও কিংবদন্তী ‘হুমায়ুন ফরিদী’ বলেছিলেন এই কথা। মঞ্চের মাধ্যমেই অভিনয়জীবন শুরু করেন হুমায়ুন ফরিদী। তবে টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমেই সকলের কাছে পরিচিতি পান তিনি। একই সাথে নাটক ও সিনেমা দুটোতেই বিরাজমান ছিলেন তিনি। তবে দেখা গেছে সিনেমার ফরীদি আর নাটকের ফরীদি এক মানুষ ছিলেন না। অর্থাৎ দুই জায়গায় তাঁর অভিনয় স্টাইল, তাঁর ব্যক্তিত্ব দুই রকম হয়ে যেত। একই মানুষ দুই পর্দায় সম্পূর্ণ দুই রকম হয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে খুব কমজনেরই এই প্রতিভা ছিলো।

 

পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



হুমায়ুন ফরীদির অভিনয়ের যে একটা সাবলীলতা এবং একটা যে সহজাত ব্যাপার, সেটা দেখা যায় সাদা-কালো পর্দায় ১৯৮৫ সালে নির্মিত ‘দহন’ সিনেমায়। সেখানে যে ফরীদিকে আমরা দেখতে পাই, তা যেন সময় থেকে এক যুগ এগোনো একজন অভিনেতা। সেই সময়ে হুমায়ুন ফরীদির যে ‘ন্যাচারালিস্টিক’ অভিনয়, তা এখনো অনেককে বিস্মিত করবে।

 

হুমায়ুন ফরিদী চলতেন তার নিজস্ব স্টাইলে। কোনো এক ডিরেক্টর কথায় কথায় জানিয়েছিলেন, একবার এক টিভি সিরিয়ালের শুটিংয়ের জন্য লোকেশন সেট করা হয় মানিকগঞ্জে। হুমায়ুন ফরীদি সকালে শুটিংয়ে গেলেন। চা খেতে খেতে মেকআপ নিলেন। টানা সিগারেট খেলেন। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে, বসে থেকে হঠাৎ পরিচালককে বললেন, ‘আজ শুটিং করার মুড পাচ্ছি না। আজ চলে যাই।’ তারপর তিনি সেখান থেকে চলে এলেন।

 

হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নাটক আর থিয়েটার নিয়ে যেই মানুষ বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকবেন, তার পড়ালেখার নমুনা যে খুব একটা ভাল হবে না, সেটা ঘটেছিলো ফরীদির ক্ষেত্রেও। তার ক্লাসমেটরা যেখানে পাশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে, তিনি তখন থার্ড ইয়ার বা ফোর্থ ইয়ারে। তার এক ক্লাসমেট অর্থনীতি বিভাগের নূরুল ইসলাম পাশ করে বেরিয়ে আবার সেই বিভাগেই টিচার হিসেবে জয়েন করলেন। একদিন ক্লাস নেওয়ার সময় নুরুল ইসলাম, বোর্ডে অনেক কিছু লিখলেন। হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠল- “এই নুরুল! তিন নাম্বার লাইনের একদম বাম দিকে ঐটা কি লিখছিস, একটু বুঝিয়ে বল তো!” ক্লাসের সবাই চুপ। স্যারও বেশ অবাক! স্যারের নাম ধরে ডাকার এই দুঃসাহস কার হবে? হঠাৎ সেই দুঃসাহসিক ছাত্র বলে উঠল, “এই যে নুরুল, আমি এইদিকে। কীরে? চিনতে পারছিস না আমাকে? আরে আমি ফরীদি! তোর সাথে না পড়তাম?”

বোঝা যায় ছাত্র জীবনেও হুমায়ুন ফরিদী ছিলেন সবার থেকে আলাদা, চলতেন সেই নিজের নিয়মেই।

 

আবার ফিরে যাই তার অভিনয় জীবনে। কানকাটা রমজান থেকে নব্বই দশকের একের পর এক ব্যবসাসফল বাণিজ্যিক সিনেমা- সব জায়গাতেই ফরিদী সফল। দর্শকের অকৃত্রিম ভালোবাসায় অবদ্ধ হন তিনি। হুমায়ুন ফরিদী একবার বলেন, “আমার প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা ভালো লাগে অনেক। তবে একদিন সকালে উঠে যদি আমি দেখি মানুষ আমাকে চিনতে পারছে না, তাহলে এর চেয়ে বড় দুঃখ আমি আর কোন কিছুতে পাব না। আমি চাই যে মানুষ আমাকে চিনবে”।

 


এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েও এই কিংবদন্তী তার ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসাটা পাননি। প্রিয় মানুষের সাথে ঝগড়া কমবেশি সকলেরই হয়। তবে এই পাগল মানুষটা যে একটু অন্য ধাঁচের। স্ত্রী সুবর্ণা মুস্তফার সাথে একবার তার প্রচণ্ড ঝগড়া হলো। রাগ করে সুবর্ণা অন্য রুমে গিয়ে দরজা আটকে শুয়ে পড়লেন। সকালে উঠে দরজা খুলে তিনি দেখেন, গতরাতে যেই রুমে ঝগড়া হয়েছিল, সেই রুমের মেঝে থেকে ছাদের দেয়াল পর্যন্ত পুরো রুম জুড়ে লেখা কেবল একটি কথাই- “সুবর্ণা, আমি তোমাকে ভালোবাসি”। তবে ফরিদীর ভালোবাসা আটকাতে পারেনি সুবর্নাকে। ২০০৮ সালে ডিভোর্স হয় তাদের।

এক ইন্টারভিউতে হুমায়ুন ফরীদিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো- “আপনারা আলাদা হয়ে গেলেন কেন?”

উত্তরে ফরিদী বলেছিলেন, “এটা তোমার সুবর্ণাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। আমি তো সুবর্ণাকে ছাড়িনি। ও আমাকে ছেড়েছে”।

 


হুমায়ুন ফরিদীর জীবন নিয়ে অনেক কথা বলতেন। তিনি বলতেন, “জীবনটা অনেক দামি, এটার যত্ন কর। পৃথিবী নামক গ্রহে তোমার কোন অবদান থাকবে না, এটা কীভাবে হয়?”

এই লোকটা তার শেষ জীবনটা নিঃসঙ্গতায় পার করেন। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। আর সেই আঘাতেই তার মৃত্যু হয়।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!