ধরুন গত দুই রাত আপনি ঘুমাতে পারেন নি এজমার কারনে। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে গেলেন ডাক্তারের কাছে। সব দেখে শুনে ডাক্তার খুব গম্ভীর হয়ে আপনাকে বললো “দুইটা করে সিগারেট খাবেন তিন বেলা”! আপনি নিশ্চয়ই বলে উঠবেন “কি মিয়া ফাইজলামি করেন?” কিন্তু না ডাক্তার আসলেই ট্রিটমেন্ট হিসেবে আপনাকে সিগারেট রেফার করেছে। শুধু আপনি না, আপনার চৌদ্দগুষ্টিও এই প্রেসক্রিপশান দেখে আকাশ থেকে পরতে বাধ্য। এমন আকাশ থেকে পড়ার মতোই অদ্ভুত ও পাগলাটে কিছু চিকিৎসার উদাহরণ আছে ইতিহাসজুড়ে। যা হার মানায় বর্তমান যুগের ভণ্ড বাবাদেরকেও।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার
সিক্স – মাথার খুলি ছিদ্র করা
আপনার যদি কখনো অসম্ভব মাথাব্যথা
শুরু হয়, আপনি কি মেশিন দিয়ে আপনার খুলি ছিদ্র করার কথা ভাববেন? বিরক্তি ও অসহায়বোধ থেকে হয়তো মজা করে বলতেও পারেন। কিন্তু ট্র্যাজেডি
হচ্ছে এককালে আজগুবি এই ট্রিটমেন্টই চলতো। তীব্র মাথাব্যথা ও বিভিন্ন স্নায়বিক
সমস্যার সমাধান করতে খুবই ছোট এবং সূচালো ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথার খুলি ছিদ্র করা
হতো। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই করা হতো। এ ধরনের চিকিৎসার ফলে অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই মানুষের মৃত্যু ঘটতো। গ্রিস, আফ্রিকা, পলিনেশিয়া এবং আমেরিকাতে আজ থেকে ৭০০০ বছর আগে এই অদ্ভুত চিকিৎসা চলতো। অদ্ভুত এই চিকিৎসাটি এমনকি ১৯ শতকের গোড়ার দিকেও বহুল
প্রচলিত ছিল।
নাম্বার
ফাইভ – লাশের খুলি থেকে ঔষধ তৈরি
প্রাচীনকালে মরা মানুষের মাথার
খুলি গুঁড়া করে তৈরি করা হতো বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। সেই রোমান জনগোষ্ঠী থেকে শুরু
করে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের রাজত্বকালের সময় পর্যন্ত এই পদ্ধতি চলে
এসেছে। এর কারণে মিশরের বিভিন্ন পিরামিডের মমি
চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
নাম্বার
ফোর – ফিতাকৃমির মাধ্যমে ডায়েট
আজকের ভিডিওর সবথেকে জঘন্য
চিকিৎসা পদ্ধতি সম্ভবত এটাই। ভিক্টোরীয় যুগে মেয়েরা তাদের ফিটনেস ধরে রাখতে
ফিতাকৃমির ডিম খেত। অবিশ্বাস্য এই ব্যাপারটি আসলেই ঘটতো। সেই ডিম পরবর্তীতে তাদের
পেটে গিয়ে কৃমিতে পরিণত হতো এবং তাদের খাওয়া খাবারগুলো খেয়ে তাদের ফিটনেস ধরে রাখতে
সাহায্য করতো। তারা তাই ইচ্ছামতো যত খুশি খাদ্য খেতে পারতো। কারণ শেষমেশ ওই ফিতাকৃমি তার পেটের অতিরিক্ত খাবার খেয়েই
ফেলবে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে এই পদ্ধতি এখনো প্রচলিত আছে। এর সাইড ইফেক্ট
হিসেবে সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ অপুষ্টি, পেটব্যথা, ডায়রিয়া, বমিভাব, রক্তস্বল্পতা
ও জ্বরের মতো রোগ ঐতিহ্য হিসেবে নিজেদের দেহে বহন করে নিয়ে আসছে।
নাম্বার
থ্রি – রেভিগেটর
১৯১২ সালে আমেরিকার অ্যারিজোনা স্টেটের
স্টক সেলসম্যান আর ডব্লিউ থমাস বেশ কিছু রোগ নিরাময়ের জন্য একটি ঔষধ আবিষ্কার
করলেন। রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্থারাইটিস, যৌন
অক্ষমতা, পেটের গ্যাস ও বার্ধক্য।
তিনি মূলত রেডিয়াম ও ইউরেনিয়ামের
লাইনিং দেওয়া সিরামিকের একটি পাত্র তৈরি করলেন। এর নাম দিলেন “রেভিগেটর”। এটি
বাজারে আসার সাথে সাথে হয়ে গেল তুমুল হিট। রেভিগেটর ব্যবহারের জন্য ছিল
নির্দিষ্ট একটি নিয়মও। রাতভর
এই পাত্রে পানি রেখে সকালে অথবা দিনের যেকোনো সময় তা খেতে হবে। রেভিগেটর এত পরিমাণে
বিক্রি হচ্ছিলো যে, থমাস প্রোডাকশন
করে কুলাতে পারছিলেন না। তাই তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এর রাইটস বিক্রি করে
দেন ক্যালিফোর্নিয়ার “ডাও হারমান পাম্প অ্যান্ড মেশিনারি” কোম্পানির কাছে। একসময়
ঘরে ঘরে রেভিগেটর ঢুকে গেল। ঠিক সেই সময় কাহিনীতে একটা টুইস্ট আসলো। রেভিগেটরের
এরকম গ্রাউন্ডব্রেকিং পপুলারিটি দেখে ‘মাউন্ট সেইন্ট মেরি ইউনিভার্সিটি’ ডিসাইড
করলো এটি টেস্ট করে দেখবে। টেস্ট করার পরে
সেই পানিতে তেজস্ক্রিয় রেডিয়াম ছাড়াও আর্সেনিক ও সিসা পেল তারা। ৯ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ১২ ইঞ্চি উঁচু
রেভিগেটরের পানি খেতে খেতে একসময় আমেরিকানদের অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে
আমেরিকার নাগরিকদের যৌবন ও আরোগ্যের মিথ্যা ভরসা দিয়ে শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হলো
তেজস্ক্রিয় রেডিয়ামের ভাউতাবাজি এই ‘রেভিগেটর’।
নাম্বার
টু – দ্য লাস্ট চান্স ডায়েট
আমাদের আশেপাশেই প্রচুর স্বাস্থ্য
সচেতন মানুষ আছে। শরীরে হালকা মেদ বাড়লেই বেড়ে যায় তাদের চিন্তাও। বর্তমান
সময়ে এই সমস্যা সমাধানে যেমন অনেক ধরনের নিউট্রিয়েন্টস যুক্ত খাবার পাওয়া যায়। আজ থেকে একশো বছর আগে কিন্তু পরিস্থিতি সেরকম ছিলো না।
পাশাপাশি ছিল না মানুষের মধ্যে সচেতনতাও। এবার বলবো এক মজার ঘটনা।
সময়টা ১৯৩৬ সাল। রবার্ট লেন নামক
এক ডাক্তার ঘোষণা করলেন, তিনি এমন এক টনিক আবিষ্কার করেছেন, যা প্রতিদিন খেলে ওজন
বেড়ে যাওয়া নিয়ে আর কোন চিন্তাই থাকবে না! যার নাম তিনি দিয়েছিলেন “দ্য লাস্ট
চান্স ডায়েট”। কিন্তু এই টনিকে ছিল ‘প্রোলিন’ নামক এক প্রকার লিকুইড, যা মৃত জীবজন্তুর শরীর থেকে বের করা হতো। এতে খুব কম পরিমাণে
নিউট্রিয়েন্টস ছিলো। এর মধ্যে অ্যানার্জি ছিল কেবল ৪০০ ক্যালরি। যেখানে একজন সুস্থ
মানুষকে প্রতিদিন কনজিউম করতে হয় ২০০০ থেকে ২৫০০ ক্যালরি। এই টনিকটি আসলে কোনো কাজেরই ছিল না। উল্টো রবার্টের এই
টনিক খেয়ে ৩০ জন মানুষের মৃত্যু হয়। এতো জন মানুষের মৃত্যুর দায়ে শেষমেশ
গ্রেফতার করা হয় তাকে।
নাম্বার
ওয়ান – অ্যাব্রাকাড্যাব্রা
এবার বলবো পৃথিবীর ইতিহাসের
সবথেকে উইয়ার্ড চিকিৎসার ব্যাপারে। ইতিহাসজুড়ে ম্যালেরিয়ার অনেক বিস্ময়কর ও আজগুবি
ট্রিটমেন্ট দেখা গেছে। তবে সবথেকে
অদ্ভুতুড়ে ও বহুল আলোচিত একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু করেছিলেন তৃতীয়
শতাব্দীর একজন রোমান চিকিৎসক। সেটি সম্পর্কে জানলে হাসতে হাসতে মারাও পড়তে পারেন
আপনি। রোগীকে বলা হতো একটি কাগজে ‘abracadabra’ লিখতে। এরপরে দুই পাশের ‘এ’ বাদ
দিয়ে তার নিচেই লিখতে হতো ‘bracadabr’। এভাবে দুই পাশ থেকে একটি করে লেটার বাদ দিতে দিতে একপর্যায়ে
শুধু ‘এ’ থাকতো। তখন লেখাগুলো ত্রিভুজের আকার ধারণ করতো। এরপর সেই কাগজটিকে একটি তার দিয়ে বেঁধে ৯ দিন গলায় ঝুলিয়ে
রাখতে হতো। ৯ দিন
পরে কাগজটিকে পানির স্রোত পূর্বদিকে যাচ্ছে এমন কোনো নদীতে ফেলে দিতে হবে। এরপরেও
যদি ম্যালেরিয়া ঠিক না হয়, তাহলে সেই রোগীকে সিংহের চর্বি দিয়ে ঘষতে হবে। হাস্যকর
এই ট্রিটমেন্টই সেকালে মহৌষধে পরিণত হয়েছিল।
এমনকি অ্যাব্রাকাড্যাব্রা লেখা এই তাবিজ ব্যবহার করতেন রোমান সম্রাট কারাকাল্লাও। মনে করা হতো এ কারণেই তিনি কখনো ম্যালেরিয়ায়
আক্রান্ত হননি। এই রোম সম্রাটের পার্সোনাল ডক্টর তার
লেখা ‘দ্য বুক অফ মেডিসিন’ এ তৃতীয় শতাব্দীর এই চিকিৎসার কথা লিখে গেছেন।