ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলাটি আসলে কীসের? The Case Against Dr. Yunus: Explained || Grameen Telecom

Author
0

 


বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র নোবেল বিজয়ী তিনি। তাও আবার শান্তিতে। কিন্তু তার বিরুদ্ধেই কিনা ১৬৮ টি মামলা! যার একটিতে আবার রায় শেষে হয়েছে ৬ মাসের জেল! কেন এতসব মামলা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে? কারাই বা করেছে? আসলেই কি তিনি অপরাধি?

১৯৭৬ সালে গরিব মানুষদের ঋণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু করেন ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস। বর্তমানে জনপ্রিয় ক্ষুদ্রঋণ নামক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জনকও তিনি। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান তিনি। তিনি পৃথিবীর মাত্র সাতজন ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম যারা নোবেল পুরষ্কারের পাশাপাশি ইউএস কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল এবং ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পেয়েছেন।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



সেই গ্রামীণ ব্যাংক ও ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধেই বর্তমানে মোট ১৬৮টি মামলা চলছে! এরমধ্যে ফৌজদারি আদালতে একটি, দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি এবং বাকি ১৬৬টি মামলা ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় আছে। এরমধ্যে একটি মামলা করেছিল কলকারখানা অধিদপ্তর। সেই মামলাটির রায় হয়েছে কয়েক মাস আগে। সেখানে রায় শেষে ৩০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ৬ মাসের জেল দেয়া হয়েছিল ডক্টর ইউনূসসহ আরো তিনজনকে। তবে বাকি মামলাগুলোর ব্যাপারে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন দাবী করেছেন, শ্রমিকদের দাবি করা পাওনা অলরেডি পরিশোধ করে ফেলায় এর মধ্য থেকে ১০৬টি মামলা থেকে খালাশ পাওয়ার পথে আছেন ডক্টর ইউনূস। শ্রম আদালতে চলমান মামলাগুলোর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম রিলেটেড মামলা মোট ৬৪টি। এছাড়াও গ্রামীণ কল্যাণের বিরুদ্ধে ৬৯টি, গ্রামীণ কমিউনিকেশনের বিরুদ্ধে ২৫টি ও গ্রামীণ ফিশারিজের নামে আছে ৮টি মামলা।

মেইনলি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের সাবেক ও বর্তমান কর্মচারীরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদাভাবে এসব মামলা করেন। তারা তাদের পাওনা টাকা পরিশোধের দাবিতে এসব করেছেন। ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত বছর শ্রমিকদের ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা বাকি সব মামলাই এখনও প্রাইমারি স্টেজে আছে বলে জানান তিনি।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ভিজিটে গেলে শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি দেখতে পান। তারা জানতে পারেন সেখানে ১০৬ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে পারমানেন্ট করার কথা থাকলেও পরে তা আর করা হয়নি। এছাড়াও কোম্পানির মুনাফার ৫ পারসেন্ট শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।

এছাড়াও গত বছরের ৩০ মে ড. ইউনূসকে প্রধান আসামি করে আরও ১২ জনের নামে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাত করার গুরুতর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর গত বছরের ২৮ আগস্ট ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের ১৮ জন কর্মচারী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আরো ১৮টি মামলা করেন। এদের মধ্যে ১৭ জন চার থেকে পাঁচ বছর আগে রিটায়ারমেন্টে চলে গেছেন। একজন শুধু এখনো কাজ করছেন। সবাই আলাদা আলাদা মামলা করলেও সবগুলো একই টাইপের। অর্থাৎ তাদের দাবী তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। তবে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল-মামুনের মতে শ্রমিকদের ইনফ্লুয়েন্স করে একের পর এক মামলা করানো হচ্ছে।

তবে অন্যান্য আইনজীবীদের মতামত একদমই ভিন্ন। এ ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেছেন, ‘ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের কারণে মামলা হয়েছে বলে মনে হয় না। এটার সাথে পলিটিক্স রিলেটেড। কয়েক দিন আগে সরকারের একজন অ্যাটর্নি জেনারেলও কিন্তু একই কথা বলেছেন। একজন লোকের বিরুদ্ধে ১৬৮টি মামলা থাকলে তো সে এক মাসেও হাজিরা দিয়ে শেষ করতে পারবে না।’



তিনি আরও বলেন, ‘ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে কেন ১৬৮টি মামলা হলো? ন্যাচারালিই এই প্রশ্নটা আসবে। সেটা ওয়ার্ল্ডওয়াইডই আসবে। শুধু যে আমরাই বলছি তা না, জাতিসংঘ বলছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট-প্রাইম মিনিস্টাররা পর্যন্ত এই প্রশ্ন করছেন। ডক্টর ইউনূস এসব হয়রানি ডিজার্ভ করে না।’ তবে ইন্টারন্যাশনাল গ্রাউন্ড থেকে ডক্টর ইউনূসের প্রতি আছে ফুল সাপোর্ট। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্ক তার পক্ষে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি গত বছরের ২৮ আগস্ট বিশ্বের বিভিন্ন সেক্টরের ১৬০ জন ফেমাস পার্সোনালিটি ও লিডার ডক্টর ইউনূসের পক্ষে একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছে। এরমধ্যে ১০০ জনই ছিলেন নোবেল বিজয়ী! তারা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানান। এর আগেও গত বছরের মে মাসে বিশ্বের ৪০ জন পলিটিশিয়ান, ডিপ্লোম্যাট ও বিজনেসম্যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!