বাংলা সিনেমায় এক সময়কার তুমুল জনপ্রিয় কিছু অভিনেত্রীদের মাঝে মৌসুমী, শাবনুর, পপি, পূর্নিমা, অপু অন্যতম। এদেরকে ‘পঞ্চতারকা’ও বলা হয়ে থাকে। একসময়ে বড় পর্দা জুড়ে এদের আনাগোনাই ছিলো শুধু। বর্তমানে সেই নব্বই দশকের এইসব অভিনেত্রীদের নামে চিনলেও, অনেকেই হয়তো জানি না এদের অভিনীত সেরা সিনেমাগুলোর নাম।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
মৌসুমী। পুরো নাম, আরিফা পারভিন মৌসুমী। বানিজ্যিক ভাবে তার বেশ কিছু সিনেমা সফল হয়েছে। ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম সিনেমা, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ২০০১ সালে “মেঘলা আকাশ” সিনেমায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার’ পান তিনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে “একজন সঙ্গে ছিলো”, ২০১০ সালে “গোলাপী এখন বিলাতে”, ২০১১ সালে “প্রজাপতি”, ২০১৩ সালে “দেবদাস” সিনেমায় অভিনয় করেও তিনি পুরষ্কার এবং খ্যাতি অর্জন করেন। ২০১৪ সালে আরেফিন শুভ’র সাথে
“তারকাঁটা” সিনেমায় অভিনয় করেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান মৌসুমী। এছাড়াও তিনি তার অভিনীত আরো কিছু সিনেমার মাধ্যমে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, বাচসাস পুরষ্কার, মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কার অর্জন করেন। বর্তমানে সিনেমা আর তাকে দেখা না গেলেও তার অভিনয়ের প্রশংসায় সকলেই মুখর হয়ে আছেন এখনো।
বাংলা সিনেমায় আরেক জনপ্রিয় তারকা, শাবনুর। পুরো নাম, ‘কাজী শারমিন নাহিদ নুপুর’। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা “চাঁদনী রাতে” সফলতা না পেলেও পরবর্তিতে চিত্র নায়ক সালমান শাহ’র সাথে জুটি বেধে বাংলাদেশের সিনেমা পাড়া ও দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিলেন এই নায়িকা। ২০০৫ সালে “দুই নয়নের আলো” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন শাবনুর। তিনি ছয়টি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন, তার মধ্যে; ১৯৯৫ সালে “স্বপ্নের ঠিকানা”, ১৯৯৯ সালে “ভালবাসি তোমাকে”, ২০০৩ সালে “বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ”, ২০০৪ সালে “ফুলের মত বউ”, ২০০৯ সালে “আমার প্রাণের স্বামী” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পাঁচটি এবং ২০০৯ সালে বর্ষসেরা তারকা হিসেবে একটি। এছাড়া তিনি রেকর্ড সংখ্যক ১৩টি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন থেকে ১০টি পুরস্কার অর্জন করেছেন। বর্তমানে এই নায়িকাও আছেন সিনেমা থেকে দূরে। হয়তো আবারো ফিরতে পারেন তিনি, এমন আভাসও পাওয়া যায়।
“সাদিকা পারভিন পপি”। সেসময় পর্দায় বেশিরভাগ সময়ই তাকে নায়ক ‘শাকিল খান’র এর সাথে দেখা যেত। এই নায়িকাও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন একটা সময়। মডেলিং দিয়ে শুরু করলেও চলচ্চিত্রতে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৯৭ সালে ‘সোহানুর রহমান সোহান’ পরিচালিত “আমার ঘর আমার বেহেস্ত” সিনেমায়। তবে প্রথম সিনেমা মুক্তি পায়, “মনতাজুর রহমান আকবর” পরিচালিত “কুলি” সিনেমাটি। ২০০৩ সালে “কারাগার”, ২০০৮ সালে “মেঘের কোলে রোদ”, “কি যাদু করিলা”, ২০০৯ সালে “গঙ্গাযাত্রা” সিনেমায় তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাচসাস পুরষ্কার অর্জন করেন। বর্তমানে তিনিও আর অভিনয় জগতে নেই।
চলচ্চিত্র প্রাঙ্গনে অন্যতম এক অভিনেত্রী। যাকে সে ৯০ দশক থেকে এখন অব্দি সকলেই এক নামে চেনে “জাতির ক্রাশ”। দাদা থেকে বাবা, বাবা থেকে ছেলে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার রূপে বুদ হয়ে আছে সকলে। বয়স বাড়লে মানুষ বুড়িয়ে যায়, আর তিনি যেন দিন দিন আরো তারুণ্যের দিকে যাচ্ছেন। “দিলারা হানিফ রীতা” যাকে আমরা সকলেই চিনি “পূর্নিমা” নামে। চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে ‘জাকির হোসেন রাজু’ পরিচালিত “এ জীবন তোমার আমার” সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। পূর্নিমা তখন ক্লাস নাইনে পড়তেন। সুন্দর চেহারার অধিকারিণী শুরুতেই অভিনয় এর সাথে সাথে তার অসাধারণ শারীরিক সৌন্দর্য এর জন্য সবার মন জয় করে নেন। এই অভিনেত্রী তার অভিনয় জীবনে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বেশ কিছু মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন। তার জনপ্রিয় কিছু সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো, “মনের মাঝে তুমি”, “হৃদয়ের কথা”, “আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা”। বর্তমানে তাকে এখনো টিভি পর্দায় দেখা যায়।
বাংলা সিনেমায় আরো এক আলোচিত নায়িকা “অপু বিশ্বাস”। ২০০৫ সালে আমজাদ হোসেনের “কাল সকালে” সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে পর্দায় তার অভিষেক। তার উল্লেখ্য কিছু সিনেমা হলো, “কোটি টাকার কাবিন”, “বলোনা কবুল”, “চাচ্চু আমার চাচ্চু”, “মাই নেইম ইজ খান”। জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের সাথে তার জুটি ছিলো পর্দায় এবং পর্দার বাইরেও। ২০১৩ সালে “মাই নেইম ইজ খান” সিনেমায় অভিনয় করে তিনি সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে ‘বাচসাস পুরস্কার’ অর্জন করেন। যদিও অনেকের মতে সিনেমাটা তেমন ভালো হয়নি।