ছোটবেলায় শীতের সন্ধ্যায় আপনারা নিশ্চয়ই দাদা বা নানাবাড়িতে কাথা মুড়ি দিয়ে ভূতের গল্প শুনেছেন? কতসব বাহারী গল্প। তেমনই কিছু অদ্ভুতুড়ে ও রহস্যময় গল্প আছে বাংলাদেশের বেশ কিছু বিখ্যাত জায়গা নিয়ে। যেগুলোকে স্থানীয় লোকজন হন্টেড প্লেস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
নাম্বার টেন – মিরপুর ইনডোর স্টোডিয়াম
মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের
জায়গায় আগে একটি পুকুর ছিল। তখন প্রতি ২-৩ বছর পর পর একজন করে মানুষ নিখোঁজ হয়ে
যেত। প্রতিদিনকার মতোই একদিন দুপুরে নান্টু নামে একজন পুকুরে গোসল করতে নামে। কিন্তু
সেদিন সে আর উঠে আসে না। ডুবুরিরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও নান্টু মিয়াকে খুজে পায়
নি। ২৪ ঘন্টা পরে তার লাশ ভেসে উঠেছিল পুকুরে। দেহে ছিল না কোন অস্বাভাবিক আলামত। স্থানীয়
লোকজন বলাবলি করতে থাকে শেকলে নিয়ে গিয়েছিলো তাকে। এরপর থেকেই সেই পুকুর হয়ে যায়
ভূতুড়ে এক জায়গা। স্টেডিয়াম বানানোর সময়েও অনেক সমস্যার কথা শোনা গিয়েছিল।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার নাইন – তেজগাঁও এর খ্রিষ্টান বাড়ি
ঢাকার তেজগাঁও এর মনিপুরীপাড়া
এলাকায় একটা পুরনো খ্রিস্টান বাড়ি আছে। এই বাড়ির প্রায় সব ভাড়াটিয়াই বিভিন্ন
অদ্ভুত বা ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানার সাক্ষী হয়েছেন। প্রায় সময়ই গভীর রাতে বাড়ির
নিচের উঠোনের দোলনায় কাউকে দুলতে দেখা যায়। ঘটনাটি দেখেছেন এমন লোকের সংখ্যা
নেহায়েত কম নয়। এছাড়াও বাড়ির ছাদে গভীর রাতে মাঝেমাঝেই হইচই ও লাফালাফির শব্দ
পাওয়া যায়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ ছাদে গেলে আর কাউকে দেখা যায় না। এই বাড়িটিকে ঘিরে
লোক মনে কৌতূহলের কোনো শেষ নেই। শোনা যায়,
উক্ত বাড়িওয়ালার মেয়ে প্রায়
১৬ বছর আগে গলায় ফাঁস দিয়ে নিজ ঘরে মারা যায়। মেয়েটি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলো।
এই আত্মহত্যার পর থেকেই সেখানে এমন অদ্ভুতুড়ে কার্যকলাপ শুরু হয়।
নাম্বার এইট – পুরান ঢাকার মিষ্টির দোকান
পুরান ঢাকাতে কিছু মিষ্টির
দোকান আছে যেখান থেকে কিছু লোক কয়েকদিন পর পর এসে রাত ৮টার দিকে ১০-১২ কেজি
মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। তারা যেই দোকানে ঢুকে সেই দোকানের মালিককে লাইট নিভিয়ে
দিতে বলে। অন্ধকারে তারা আসে, অন্ধকারে চলে যায়। এই লোকগুলো আকারে অনেক লম্বা এবং
তাদের চেহারা আজ পর্যন্ত কেউ ভালো করে দেখতে পারে নি। ধারণা করা হয়, এরা
জীন প্রজাতি। পুরান ঢাকার বেশিরভাগ মিষ্টির দোকানের লোকেরাই উনাদের কথা জানেন।
নাম্বার সেভেন –
ফয়েজ লেক
চট্টগ্রামের অন্যতম দর্শনীয়
স্থান ফয়েজ লেক। তবে এই লেককে ঘিরে রয়েছে কিছু ভূতুড়ে গল্পও। অনেকের মতে এখানে
সাদা ও কালো পোষাক পড়া দুইজন নারীর আত্মা ঘুরে বেড়ায়। স্থানীয় লোকজনের মতে, তারা
এই লেকের ভেতরেই মারা গিয়েছিল, কিন্তু কোন এক কারণে তাদের আত্মা অতৃপ্ত থেকে যাওয়ায়
এই লেকের ভেতরেই থেকে যায়।
নাম্বার সিক্স – লালবাগ কেল্লা
পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক মুঘল স্থাপনা লালবাগ কেল্লাও ভূতুড়ে স্থান হিসেবে পরিচিত। কেউ কেউ বলে লালবাগ কেল্লায় সুবেদার শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরীবিবির আত্মাকে রাতের বেলা ঘুরতে দেখা যায়। কেল্লার ভেতরের মসজিদে নাকি অনেক সময় রাত ৩টার দিকে সাদা আলখাল্লা পড়া লোকজনকে নামাজ পড়তে দেখা যায়। কিন্তু তাদের নামাজের শব্দ ফলো করে সেখানে গেলে দেখা যায় সেখানে কেউ নেই। নাইট গার্ডরাও রাতের বেলায় কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করেন বলে জানা গেছে। কেল্লার আরো একটি বড় রহস্য এর সুড়ঙ্গ। এর ভেতরে কেউ একবার গেলে নাকি আর ফিরে আসে না। কারো মতে এটির অপর প্রান্ত গিয়ে ঢেকেছে দিল্লিতে! আবার কারো মতে এর শেষ মাথা টঙ্গী নদীতে। তবে আসল রহস্য কেউই জানে না। বৃটিশ আমলে দুটি কুকুরের গলায় চেইন বেঁধে সুড়ঙ্গের ভেতরে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই চেইন দুটি ফেরত আসলেও ফিরে আসে নি কুকুরগুলো। এরপর বৃটিশ সরকার সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করে দেয়। এখনো পর্যন্ত সেটি বন্ধই আছে।
নাম্বার ফাইভ – গানস অফ বরিশাল
ব্রিটিশরা যখন বরিশালে আসে তখন
এর নাম ছিল বাকেরগঞ্জ। বাকেরগঞ্জের সেই সময়কার ব্রিটিশ সিভিল সার্জনই প্রথম ‘গানস
অফ বরিশাল’ এর ঘটনাটি লেখেন। তখন বর্ষা আসার আগে আগে গভীর সাগরের দিক থেকে
রহস্যময় কামান দাগার আওয়াজ আসতো। ব্রিটিশরা সাগরে জলদস্যু ভেবে অনেক খোঁজাখুজি
করেও কিছু পায় নি।
এই ধরণের রহস্যময় শব্দকে বলা হয়
মিস্টপুফার্স। পৃথিবীর আরো নানা প্রান্তে এই ধরণের শব্দ শোনা গেছে। বাংলাদেশের
রিটেন রেকর্ডসে এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৭০ সালে। যদিও অনেকের মতে ঊনবিংশ
শতাব্দীর শুরু থেকেই এই শব্দ শোনা যেত।
নাম্বার ফোর – গদ্রবঙ্গা
বাংলাদেশের সাঁওতাল উপজাতিরা
অনেক দেব-দেবীর পূজা করে। এই সব দেব-দেবীর মাঝে কিছু আছে যারা অপদেবতা। তেমনি এক
অপদেবতার নাম "গদ্রবঙ্গা"। এইসব দেবতারা সাইজে ২-৩ ফিটের হয়। চেহারাও
ছোট বাচ্চাদের মতো। কথিত আছে, ওদেরকে বিভিন্ন সাঁওতাল পরিবারে লালন-পালনও করা হয়।
এসব অপদেবতারা অন্য বাড়িঘর থেকে স্বর্ণ চুরি এনে তা নিজের মালিককে দেয়। তবে, এর
বিনিময়ে তারা যা দাবি করে তা খুবই ভয়ঙ্কর। স্বর্ণ দেয়ার বদলে এইসব অপদেবতারা
বাড়ির মালিকের ছোট ছোট ছেলে সন্তানগুলোকে চায়। তারা এইসব ছোট ছেলেদেরকে খেয়ে ফেলে। আর বাড়ির মালিক যদি তাদের এই চাহিদা পূরণ করতে
না পারে, তাহলে গদ্রবঙ্গারা সেই পরিবারকেই ধ্বংস করে দেয়। এসব জানার পরও এখনো
সাঁওতাল অনেক পরিবারই ধনী হবার লোভে এইসব অপদেবতা পালন করে আসছে।
নাম্বার থ্রি – বগা লেক
কেওক্রাডং যাওয়ার পথে পড়ে বগা
লেক। বম ভাষায় বগা শব্দের অর্থ ড্রাগন। বমদের রুপকথা অনুযায়ী অনেক আগে এই
পাহাড়ে এক ড্রাগন থাকতো। ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে খেয়ে ফেলতো। একদিন গ্রামের লোকজন
মিলে ড্রাগনটিকে মেরে ফেলে। তখন তার মুখ থেকে আগুন ও প্রচন্ড শব্দ বের হওয়ার কারণে
পাহাড়টি ধ্বসে পড়ে। এরপর সেখানে একটি লেক তৈরি হয়। সেটিই আজকের এই বগা লেক।
স্থানীয় মিথলজি অনুযায়ী লেকের নিচে আছে একটি আগ্নেয়গিরি। উপজেলা পরিষদের লাগানো
সাইনবোর্ডে সরকারী ভাবেও লেখা আছে এই গল্পটি।
এর সঠিক গভীরতা জানা যায় নি
এখনো। তবে ধারণা করা হয় ১২৫-১৫০ ফিটের আশেপাশে হবে। প্রতিবছর রহস্যময় ভাবে বগা
লেকের পানির রঙ কয়েকবার পালটে যায়। যদিও এর আশেপাশে কোন ঝর্না নেই, তবুও
লেকের পানি চেঞ্জ হলে আশপাশের লেকের পানিও চেঞ্জ হয়ে যায়। হয়তো আন্ডার গ্রাউন্ড
রিভার থাকতে পারে। সেটিও আরেক রহস্য।
নাম্বার টু – চিকনকালা বা নিফিউ পাড়া
বান্দরবান হয়ে ভেতরে ঢুকতে
থাকলে একদম বাংলাদেশ-বার্মা নো ম্যানস ল্যান্ডে গিয়ে পাওয়া যায় একটি মুরং গ্রাম।
এই মুরং গ্রামের পাশেই রয়েছে রহস্যময় একটি জঙ্গল। প্রতি বছরের কোন এক দিন হঠাৎ করে
জঙ্গলের ভেতর থেকে রহস্যময় কিছু শব্দ শোনা যায়। সেই শব্দ শুনলেই জঙ্গলের ভেতরে
থাকা লোকজন সাথে সাথে পালাতে থাকে। কিন্তু প্রতিবারই কয়েকজন সেই চেষ্টায় ব্যর্থ
হয়। কয়েকদিন পরে বনে তাদের মৃত দেহ পাওয়া যায়। শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া
যায় না। শুধু চেহারায় থাকে আতঙ্কের ছাপ।
নাম্বার ওয়ান – চলনবিল
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমে
অবস্থিত সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা এই তিন জেলার উপরে দিয়ে বয়ে গেছে
এটি। চলনবিলের সিরাজগঞ্জের অংশটিই মূলত হন্টেড। শোনা যায়, চলনবিলের
এই এলাকায় অনেক আগে একজন জমিদার থাকতেন। তিনি ছিলেন অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী।
হুট করে এক রাতে সেই জমিদার মারা গেলে সেখানে রাতারাতি তিনটি মন্দির গড়ে ওঠে, যার
একটি আবার পরদিন নিজ থেকেই ভেঙ্গে পড়ে।
এই তিনটি মন্দির ও তার মাঝে
থাকা বিলের এলাকাটিই মূলত ভূতুড়ে জায়গা বলে পরিচিত। এছাড়াও চলনবিলে জ্বীনের
প্রভাবও আছে। বিশেষ করে রাতের বেলা চলনবিল পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই জ্বীনের কবলে
পড়েছেন।