ইবলিশ উপাসক ইয়াজিদিদের অদ্ভুতুড়ে রীতিনীতি || Who are the Yazidis? || Weird customs of the Yazidis

Author
0

 


আপনারা কি জানেন পৃথিবীতে শয়তানকে নিজেদের উপাসক মানে, এরকম ধর্মও আছে? না, স্যাটানিজমের কথা বলছি না। বলছি ইয়াজিদিদের কথা। মজার ব্যাপার হচ্ছে এদের বসবাস আমেরিকা কিংবা ইসরায়েলের মতো কোন লিবারেল দেশে না। মুসলিম প্রধান দেশেই বসবাস ইয়াজিদিদের।


অন্যান্য ধর্মের থেকে ইয়াজিদিরা আলাদা যেখানে

ইয়াজিদিরা মূলত উত্তর ইরাকের নিনেভেহ প্রদেশে বসবাস করে। এছাড়াও আমেরিকা, জর্জিয়া, সিরিয়া ও জার্মানিতেও ছড়িয়ে ছিড়িয়ে আছে বেশ কিছু ইয়াজিদি। সাত হাজার বছরের পুরোনো এই ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুসারীর সংখ্যা মাত্র সাত লাখ। মেইনস্ট্রিম সব ধর্মেই আমরা দেখি এক বা একাধিক পজিটিভ স্বত্ত্বাকে ভক্তি করতে। কিন্তু ইয়াজিদিরা ধর্মের প্রধান এই দিকটাতেই সবার থেকে আলাদা।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



তারা বিশ্বাস করে, ঈশ্বর সাতজন পবিত্র ফেরেশতার মাঝে পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন। সেই সাতজনের প্রধান হচ্ছেন মেলেক তাউস ওরফে ময়ূর ফেরেশতা। কিন্তু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, ইয়াজিদিদের বর্ণিত তাউসের সাথে ইসলাম ধর্মে বর্ণিত ইবলিশের মিল পাওয়া যায়। এমনকি স্বর্গ থেকে শয়তান ও মেলেক তাউসকে বের করে দেওয়ার গল্পও একই, আদমকে সিজদা দিতে রাজি না হওয়া। এদের সবথেকে পবিত্র স্থানের নাম লালিশ। তারা লালিশকে মুসলিমদের মক্কা ও খ্রিস্ট্রানদের জেরুজালেমের মতোই পবিত্র মানেলালিশ ছোট্ট পাহাড়ে গড়ে উঠা ইরাকের কুর্দিস্তানে অবস্থিত একটি গ্রাম। কিন্তু সেখানে থাকে মাত্র ২৫ জনতারা সকলেই ইয়াজিদিদের প্রধান ধর্মীয় নেতা

ইয়াজিদি শব্দের আভিধানিক অর্থ আল্লাহর উপাসকএই শব্দটি মূলত ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ইয়াজিদিরা তাদের দেবতাকে ইয়াজদান বলে ডাকে।




ইবলিশ যেখানে পবিত্র স্বত্ত্বা

ইয়াজিদিদের মতে, ঈশ্বর এই পৃথিবী ও আদম-হাওয়াকে তৈরি করার জন্য সাতজন ফেরেশতাকে সৃষ্টি করেন। এরপর ঈশ্বর সেই সাতজনকে বলেন, তোমরা আদমের সামনে মাথা নত করো। একজন বাদে বাকি ছয়জন ফেরেশতা ঈশ্বরের আদেশ পালন করলো। যে ফেরেশতা মাথা নত করলো না ঈশ্বর তাকে পৃথিবীতে নির্বাসিত করলেন ময়ূর বেশে। সে পরিচিত হলো মালাইকা আত-তাউস নামেপরবর্তীতে ঈশ্বর এই ফেরেশতার হাতে সকল ফেরেশতা ও মানুষের দায়িত্ব তুলে দেন।

অর্থাৎ, স্পষ্টতই বোঝা যায় ইসলাম ও খ্রিষ্ট ধর্মমতে যাকে আমরা ইবলিশ বা শয়তান বলি, ইয়াজিদিরা মূলত তারই পূজা করে। এটিই মূলত তাদের কিছুটা লুকিয়ে থাকার কারণ। কিন্তু ইয়াজিদিরা মেলেক তাউস অর্থাৎ ইবলিশকে শয়তান মানতে রাজি না। সে যে সকল পাপের উৎস সেকথাও মানতে রাজি না তারাতারা বিশ্বাস করে ঈশ্বরের দেওয়া সবকিছুই ভালো খারাপ সবকিছুই বরং মানুষের তরফ থেকেই আসে। ইয়াজিদিরা ঈশ্বরকে এত পবিত্র মনে করে যে তারা সরাসরি তার উপাসনাও করে না। তারা ময়ূরের দেবতার পাশাপাশি ময়ূরের পালককেরও পূজা করে।


অদ্ভুত সব নিয়ম ও উৎসব

তারা প্রকৃতিরও পূজা করেতাদের মন্দিরের ফটকে একটি কালো রঙের সাপের মূর্তি থাকে। যাকে তারা প্রকৃতির মা মানেতারা কখনও সাপ হত্যা করে না, এমনকি সেটি বিষাক্ত হলেও।

আমরা সাধারণত দেখি বিভিন্ন ধর্মের মানুষরা অন্যদের তাদের ধর্মে কনভার্ট করতে চায়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে অন্য ধর্মের কেউ চাইলেও ইয়াজিদি ধর্ম গ্রহণ করতে পারবে না। ইয়াজিদি হতে হলে তাকে ইয়াজিদি বাবা-মার সন্তান হতে হবে। ইয়াজিদিরা দৈনিক পাঁচবার প্রার্থনা করে। প্রতি বেলার প্রার্থনার আবার আলাদা আলাদা নামও আছে। নিভেজা বেরিস্পেদে অর্থাৎ ভোরের প্রার্থনা, নিভেজা রোঝিলাতিনে অর্থাৎ সূর্যোদয়ের প্রার্থনা, নিভেজা নিভ্রো অর্থাৎ দুপুরের প্রার্থনা, নিভেজা এভারি অর্থাৎ বিকেলের প্রার্থনা ও নিভেজা রোজাভাবুনে অর্থাৎ সূর্যাস্তের প্রার্থনাতবে বেশিরভাগ ইয়াজিদি মাত্র দুই বারই প্রার্থনা করে আর তা হলো সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তর সময়। এই দুই সময় এরা সূর্যের দিকে এবং বাকি সময় গুলো লালিশের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে। তবে বাইরের মানুষদের সামনে প্রার্থনা করা নিষেধ মুসলিমরা যেমন শুক্রবারকে পবিত্র দিন মানে। ইয়াজিদিদের পবিত্র দিন হচ্ছে সোমবার, এবং শনিবার তাদের বিশ্রামের দিন।



ইয়াজিদি হজ

ইয়াজিদিদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে লালিশে অবস্থিত শেখ সাদির মাজারে সাতদিনের হজ্ব পালন করাএই সময় তারা নদীতে গোছল করে। সাথে তাউস মেলেকের মূর্তিকেও গোসল করায়এবং শেখ সাদীর মাজারে ১০০ টি প্রদীপ জ্বালায়। সাথে একটি ষাড়ও কুরবানি দেয়। এছাড়াও তারা ডিসেম্বর মাসে তিন দিন রোজা রাখে। এরপর পীরের সাথে মিলে সুরা পান করে।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!