দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এই পৃথিবীর বুকে এমন এক গভীর ক্ষতচিহ্ন রেখে গিয়েছে, যা আজ পর্যন্তও সারেনি। প্রায় সাড়ে আট দশক পেরিয়ে এসেও সেই ক্ষত থেকে এখনো রক্ত ঝরতে দেখা যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হোক কিংবা উত্তর কোরিয়ার খামখেয়ালি রাজা কিং জং উনের হুঙ্কার, পারমাণবিক হামলার আতঙ্ক যেন ফিরে ফিরে আসে বারবার। আর ঠিক ততবার এই আধুনিক পৃথিবীর বুকে জেগে ওঠে সেই কবেকার নাগাসাকি-হিরোসিমা! এবং ওপেনহাইমার।
আর সেই বিধ্বংসী পরমাণু
বোমার জনককে নিয়েই একটা মুভি বানিয়েছেন এযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক, “ক্রিস্টোফার
নোলান”। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই পাগলাটে ডিরেক্টর মুভিতে উপস্থাপনের জন্য সাক্ষাৎ
আসল পারমানবিক বোমাই ব্যাবহার করেছেন।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
গত ২১ জুলাই আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পেয়েছে “ওপেনহেইমার” সিনেমাটি। গোটা বিশ্বব্যাপী এই সিনেমাটি ছিলো সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। দর্শকের আগ্রহের সবচেয়ে বড় কারণ, মুভিটি বানানো হয়েছে সত্য ঘটনা অবলম্বনে। বিধ্বংসী এই পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহেইমার। তাকে বলা হয় ‘ফাদার অব অ্যাটোমিক বোম’। তার জীবনের গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। আর এর মাধ্যমে পর্দায় উঠে এসেছে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরির ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রকল্পে হাত দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’ নামের সেই প্রকল্পের উত্থান-পতনসহ অনেক কিছু তুলে ধরা হয়েছে মুভিটিতে।
‘ওপেনহেইমার’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন পিকি ব্লাইন্ডার্স খ্যাত অভিনেতা “কিলিয়ান মারফি”। এছাড়াও মুভিতে অভিনয় করেছেন হলিউডের তুমুল জনপ্রিয় তারকা রবার্ট ডাউনি জুনিয়র ও ম্যাট ডেমন। রয়েছেন এমিলি ব্লান্ট, ফ্লোরেন্স পাগ, ক্যাসে অ্যাফ্লেক, জশ হার্টনেটসহ আরও অনেকে। তারকাবহুল এই মুভিটি ভক্তদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে দর্শকদের আগ্রহের
আরো একটি কারণ ছিলো, এই সিনেমায় আসল পারমানবিক বোমার ব্যবহার।
বর্তমান সময়ে হলিউড
সিনেমা মানেই সিজিআইয়ের ব্যবহার। এর মাধ্যমে অসম্ভব সব দৃশ্য পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায়।
তবে ক্রিস্টোফার নোলান দাবি করেছেন, তার মুভিতে কোনও সিজিআই ব্যবহার করা হয়নি। পারমানবিক
বোমার দৃশ্যে ব্যবহৃত বোমাটি ছিলো অরিজিনাল পারমানবিক বোমা।
তবে হ্যা, অবশ্যই
সেই বোমাটা ছিলো ছোট এবং কম প্রভাব বিস্তারকারী।
এছাড়াও ‘ওপেনহেইমার’ নির্মিত হয়েছে আইম্যাক্স ফরম্যাটে। যেটার মাধ্যমে দর্শক চোখ ধাঁধানো অভিজ্ঞতা লাভ করবে। নোলান সাহেবের জানিয়েছেন, থ্রিডি চশমা ছাড়াই এই মুভি দর্শকদের থ্রিডির অনুভূতি দিবে। মুভির দৃশ্যগুলোর সুক্ষ্মতা, স্বচ্ছতা এবং গভীরতা অনন্য পর্যায়ের।
তবে জনপ্রিয় এই মুভিটি
নিয়ে ছড়িয়েছে বিতর্কও। হলিউডের যে সিনেমাগুলিতে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট, অ্যাডাল্ট থিম,
আপত্তিকর ভাষা, হিংসা সহ এই ধরনের সেনসিটিভ কোনো বিষয় থাকে সেগুলিকে “আর রেটিং” দেওয়া
হয়ে থাকে।
গত ২০ বছরে নোলানের নির্মিত এই প্রথম মুভি যেটাকে “আর রেটিং” দেওয়া হয়েছে। বাস্তব জীবনে ‘জে রবার্ট ওপেনহেইমার’ ভগবদ গীতা পড়তেন। কিন্তু নোলানের নির্মিত মুভিতে দেখা যায়, যৌন দৃশ্য চলাকালীন ওপেনহেইমার গীতা পড়ছে। আর এটা নিয়েই মূলত অশান্তি শুরু হয়। সিনেমায় দেখানো হয়েছে যে ওপেনহেইমার তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময় হিন্দু ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ ‘ভগবদ গীতা’ পড়ছিলেন। আর এই দৃশ্যের পরই সিনেমার পরিচালক নোলানকে ঘিরে সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে সকলে মাঝে। এমনকী এই দৃশ্য না সরিয়েই মুভিটি ভারতে রিলিজ করার জন্য সেন্সর বোর্ডকেও ট্রোল করেন নেটিজেনরা। অনেকে এই মুভি নিয়ে বয়কটের ডাকও তুলেছে।
‘ওপেনহেইমার’ মুভিটি
নির্মিনে ব্যয় হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার। প্রযোজনা করেছেন এমা থমাস, চার্লস রবেন ও ক্রিস্টোফার
নোলান। ছবিটি বিশ্বজুড়ে পরিবেশনা করছে “ইউনিভার্সাল পিকচারস”। মুভিটি বিশ্বজুড়ে এখনো
পর্যন্ত বক্স অফিস কালেকশন করেছে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।