বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমা অবস্থা। কিছুদিন পরপরই দেখা যায় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে। বিভিন্ন সেনসিটিভ ঘটনায় সন্দেহভাজনদের আটকের পরপরই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। তাদেরকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করা হয় যাতে করে ট্রায়ালের আগেই সাধারণ জনগণের কাছে তারা ক্রিমিনাল হিসেবে বিবেচিত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সেই আলোচনা আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটিই হচ্ছে মিডিয়া ট্রায়াল।
“প্লিজ আপনারা মিডিয়াতে কেসটির বিচার করা বন্ধ করুন।
এই ব্যাপারটি বিচারকদের উপরে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। দিনশেষে কিন্তু আমরাও
মানুষ।”
এই স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন ২০১২ সালে দিল্লিতে ব্যাপক আলোচিত
নির্ভয়া কেসের দায়িত্বে থাকা প্রধান বিচারক কুরিয়ান জোসেফ। নির্ভয়া কেস সেই সময়
পুরো বিশ্বেই ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে একটি বাসে ঘটে
যাওয়া এই রেইপ কেসের রোমহষর্ক বর্ণনা পড়ে শিউরে উঠেছিল সাধারণ মানুষজন। জনগণ
রীতিমত আক্রোশে ফেটে পড়ে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
জোসেফ কুরিয়ান বলেছিলেন, “আমি যদি শাস্তি না দিতাম, তারা আমাকে ফাঁসিতে ঝোলাতো। মিডিয়া অলরেডি রায় দিয়ে ফেলেছে। এমন একটা
অবস্থা ছিল যেন এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
২০০৭ এ আমেরিকায় আরেকটি ঘটনা ঘটে। যা আমান্ডা নক্স কেস
নামে পরিচিত। সে ছিল একজন আমেরিকান এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট, যে পড়াশোনা করছিল
ইতালিতে। একদিন তার রুমমেট মেরেডিথ কার্চারকে অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া
যায়। এই কেসটি ইতালিতে এবং ইন্টারন্যাশনালি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। মিডিয়া
আমান্ডা নক্সকে বিভিন্নভাবে পোর্ট্রে করতে থাকে। অনেকে তাকে ‘কোল্ড ব্লাডেড
মার্ডারার’ ট্যাগ দিচ্ছিলো। আবার অনেক জায়গায় বলা হচ্ছিলো ইতালি সরকার তাকে শুধু
শুধুই ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। সেনসেশনাল হেডলাইন, ড্রামাটিক ন্যারেটিভের সাথে
নক্সের পার্সোনাল লাইফ নিয়েই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ২০০৯ সালে নক্স এবং তার
কো-ডিফেন্ডেন্ট রাফায়েল সোলেসিটোকে খুনি হিসেবে রায় দেয় আদালত। কিন্তু ২০১১ সালে
তাদের আপিলের পরে সেই রায় ওভারটার্ন করা হয়। এরপর ২০১৫ তে ইতালিয়ান সুপ্রিম কোর্ট
তাদেরকে নির্দোষ হিসেবে রায় দেয়। ২০১৩ সালে এই কেস এবং তার পারিপার্শিক দিকগুলো
নিয়ে স্বয়ং আমান্ডা নক্স ‘ওয়েটিং টু বি হার্ডঃ আ মেমোয়ার’ নামে একটি বেস্টসেলার
বইও লেখেন।
মিডিয়া ট্রায়াল কিভাবে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি, আইনি কার্যক্রম
এবং ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, তার পারফেক্ট উদাহরণ এই আমান্ডা নক্স কেস।
আইনের একটি নীতি আছে – আইন অনুযায়ী কোর্টে কেউ দোষী
প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে ইনোসেন্ট হিসেবেই ট্রিট করা উচিত। এই নীতিটির
একেবারে উল্টো সিনারিওই হচ্ছে মিডিয়া ট্রায়াল। তাই এই ব্যাপারটি নিয়ে মিডিয়া এবং
আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া ইউজারদের আরো সচেতন হওয়া উচিত।