তুতেন খামেনের অভি*শপ্ত মমি – সত্য নাকি মিথ? | Mysterious curse of Tutankhamun

Author
0

 


ফারাও সম্রাট তুতেনখামেনের পিতার নাম ছিলো আখেনাতুন। আখেনাতুনের মৃত্যুর পর ১৩৩৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মাত্র নয় বছর বয়েসে তুকেনখামেন মিশরের সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব নেন। রাজা হবার পর তুতেন খামেন তার সৎ বোন আলেক্সানামুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মৃত্যুর আগে তিনি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেনতাঁর মেরুদন্ডের হাঁড় বেঁকে যাবার ফলে তিনি ঠিকভাবে চলাফেরাও করতে পারতেন নাএমনকি তার পায়ের গোড়ালীর হাঁড়ও শারীরিক অসুস্হ্যতার জন্য বেঁকে গিয়েছিলোডিএনএ পরীক্ষা করে জানা যায় তার মৃত্যু হয়েছিলো ম্যালেরিয়া জনিত কারণেএকারণেই হয়তো তার মমিকে তিন স্তরে সংরক্ষণ করা হয়েছিলো তিনটি স্বর্ণে মোড়ানো পাতে – যেনো তার বিকৃত চেহারা কেও দেখতে না পায়বলা হয়ে থাকে তুতেনখামেনের মমি খননকারী হাওয়ার্ড কার্টারের দলটি তুতেনখামেনের মমির অভিশাপের শিকার হয়েছিলো১৯২২ সালে তুতেনখামেনের সমাধিক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রবেশ করেন পুরাতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার এবং তার সাথী লর্ড কারনাভান


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন


 

১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার ও তার দল তুতেন খামেনের সমাধিতে পৌঁছতে সমর্থ হন। মাটি খুঁড়ে কার্টার প্রথমেই একটি সিঁড়ির সন্ধান পানফারাও তুতেন খামেনের নাম খোঁদাই করা একটি দরজায় গিয়ে সিঁড়িটি শেষ হয়েছে। কারনাভান ও কার্টার সিঁড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলেন, দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আরেকটি দরজা তাদের চোখে পড়ল। দ্বিতীয় দরজাটি পরীক্ষা করে তাদের মনে হলো, অতীতে কোনো এক সময় সেটি একবার খোলা হয়েছিল। তারপর সেটাকে আরও সিল করে দেওয়া হয়। তাদের সন্দেহ হলো, সম্ভবত সেখানে একবার ডাকাতি হয়েছেঅনেক মূল্যবান দ্রব্যই হয়তো লুট হয়েছে। তবুও হতাশ হলেন না তারা। ১৯২২ সালের ২৬ নভেম্বর কার্টার দ্বিতীয় দরজাটির গায়ে একটা ফুটো করে এন্টিচেম্বারটির ভেতরে কী আছে তা দেখার চেষ্টা করলেন। কী দেখলেন তিনি? দেখলেন সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো পালঙ্ক, সোনা-রুপার তৈরি একটি সিংহাসন, খাদ্য সংরক্ষণের অনেক বাক্স এবং আরও মূল্যবান কিছু জিনিসপত্র। পরবর্তী দুই মাস কার্টার এন্টিচেম্বারে রক্ষিত ওইসব মূল্যবান জিনিসপত্রের প্রচুর ছবি তুললেন। কিন্তু শুধু ছবি তুলেই কারনাভান ও কার্টার সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। বহু চেষ্টা করে ১৯২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তারা দরজাটি ভাঙতে সক্ষম হলেন। এন্টিচেম্বারে সোনার তৈরি একটি বড় বাক্স ছিল। তার ভেতর ছিল একই রকম অপেক্ষাকৃত ছোট আরও তিনটি বাক্স। চতুর্থ বাক্সটি ছিল মূলত হলুদ স্ফটিকমণির তৈরি একটি কফিন। কফিনটির ভেতরে একই রকম আরও তিনটি কফিন পাওয়া গেল। শেষ কফিনটি ছিল সোনার তৈরি এবং তার ওজন ছিল প্রায় ১৩৫ কিলোগ্রাম। চতুর্থ কফিনটির ডালা খুলে প্রত্নতত্ত্ববিদদ্বয় আবিষ্কার করলেন ফারাও তুতেন খামেনের মমিকৃত দেহ। মৃত ফারাওর মাথা ও কাঁধ ঢাকা ছিল একটি চমৎকার স্বর্ণের মুখোশে। তাঁরা তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কার করেন ঠিকই কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে সেখানে লেখা একটি অভিশাপ খুঁজে পান । সেখানে লেখা ছিলো – ‘রাজার শান্তি ভঙ্গকারীদের মৃত্যু ঘটবে

সম্পূর্ণ সমাধির আশপাশের বিভিন্ন কক্ষে পাওয়া গেল অসংখ্য মহামূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী, যার বেশির ভাগই ছিল স্বর্ণের। মমি আবিষ্কারের পর থেকে একের পর এক রহস্যময় ঘটনা ঘটতে থাকেএর সঙ্গে জড়িত প্রায় প্রত্যেকেরই রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। সারা বিশ্বেই এটি এখন তুতেন খামেনের অভিশাপ নামে পরিচিত।

মমি আবিষ্কারের দিন রাতেই কার্টার তার বাসায় এসে দেখেন একটি কোবরা তার গুপ্তচর ক্যানারি পাখিটিকে খেয়ে ফেলেছে। এর কিছুদিন পরেই কায়রোর একটি হোটেলে মশার কামড়ে কারনাভানের মৃত্যু ঘটে। লর্ড কারনাভানের মৃত্যুর মাত্র দুই দিন পর তুতেন খামেনের মমিকৃত দেহটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মমিটির বাম গালে কারনাভানের মতো ঠিক একই জায়গায় একটি ক্ষত রয়েছে। লর্ড কারনাভানের মৃত্যুর কিছু দিন পর এ অভিযানের আরেক নেতৃস্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ আর্থার ম্যাক একই হোটেল কন্টিনেন্টালে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করতে করতে মারা যান।

এখানেই শেষ নয়। কারনাভানের এক বন্ধু তার মৃত্যুর কথা জানতে পেরে মিসরে যান সমাধি দেখতে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, সমাধিটি দেখার পর দিনই তিনি প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হলেন। আর এর মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে তারও মৃত্যু হয়। তখন অনেকেই তুতেন খামেনের সমাধির বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এভাবে সমাধিটি উন্মোচনের সময় কয়েকজন লোক উপস্থিত ছিলেন, তার মধ্যে ১২ জনই অস্বাভাবিকভাবে পরবর্তী ছয় বছরের মধ্যে মারা যান। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে খনি খননের কাজে বিভিন্নভাবে জড়িত প্রায় ২১ জনই মৃত্যুবরণ করেন। একজনই কেবল রক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে তুতেন খামেনের অভিশাপ নামে পরিচিত। এই ঘটনাটি মানুষকে ভাবিয়ে তুলে যখন ৫ এপ্রিল ১৯২৩ সালে লর্ড কর্ণার ওয়ানেরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়১৬ ই মে ১৯২৩ সালে তুতেনখামেনের সমাধিতে প্রবেশকৃত আরেক ব্যক্তি জর্জ জে গ্লাউড ফ্রান্সে মৃত্যু বরণ করেন২৭ শে সেপ্টেম্বর ১৯২৩ এ লর্ড কর্ণারওয়ানের ভাইয়েরও মৃত্যু ঘটে১৯২৩ সালে বুল্ট জুল নামক ব্যক্তি যিনি হাওয়ার্ড কার্টারকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন এই খননকার্য পরিচালনায় তার মৃত দেহ অস্বাভাবিকভাবে নীল নদের জলে পাওয়া যায়১৯২৫ সালে এই খনন কাজের সাথে যুক্ত থাকা জর্জ বেনেডিক্টের মৃত্যুও ঘটে হঠাৎ হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়েসব মিলিয়ে এই খনন কাজের সাথে যুক্ত মোট তিরিশ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয় এবং এই সন্দেহই ডালপালা মেলে যে ফারাও সম্রাট তুতেনখামেনের মৃতদেহের অভিশাপেই তাদের সকলে মৃত্যুবরণ করেছেন বিজ্ঞানের জয়জয়কারের এই যুগে ফারাও সম্রাট তুনেন খামেনের অভিশপ্ত মমি আজও এক অজানা রহস্য।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!