সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে। তড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে বাসার তালার চাবি খুঁজে পাচ্ছেন না। কোনোমতে লক করে বাসা থেকে বেড়িয়ে কিছুদূর গিয়ে খেয়াল হলো ভুলে ম্যানিব্যাগ বাসায় রেখে এসেছেন। তার উপর রাস্তাতেও প্রচুর জ্যাম। কেমন যেন সবকিছু উলটো পাল্টা ঘটছে। তবুও এরকম ঘটনা হরহামেশাই আমদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে থাকে। কিন্তু আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন জাগেনি যে, এগুলো কেনো ঘটে? অথবা এগুলোরও যে একটা ব্যাখ্যা আছে, সেটা কি আপনি জানতেন?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড মারফির একটা সূত্র আছে, “ইফ আনিথিং ক্যান গো রং, ইট উইল” অর্থাৎ কোনোকিছু যদি ভুল হওয়ার থা্কে, তাহলে সেটা হবেই।
আপনি কোন একটা কিছুতে বেশ দক্ষ। সেই কাজে আপনার ভুল হবার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু একদিন সেই কাজটা করার পরে দেখা গেলো, আপনার ভুল হয়ে গেছে। আপনি তখন আপন মনেই বলে উঠলেন, ‘শুধু আমার সাথেই কেনো এমন হয়?’
অথচ অন্যান্য সময় এই কাজগুলো যে আপনি কত সুন্দরভাবে করে ফেলেন কোনো ভুল ছাড়াই, সেটা আপনি মনেই আনলেন না। এটাই মারফির সূত্র।
মারফির সূত্র মূলত, আমাদেরকে পজিটিভ থিংক করা বাদ দিয়ে নেগেটিভ দিকটা নিয়ে বেশি ভাবায়। আর বলে ‘যা হবার তা হবেই’। এখন প্রশ্ন হলো, এই সুত্র কি সঠিক? যদিও এটা কোনো সূত্র নয়, বরং এটা একটা দার্শনিক মতবাদ।
১৯৪৯ সালে আমেরিকার মিউরোক ফিল্ড এয়ার বেস-এ উড়োজাহাজ নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনার সাথে জড়িত ছিলেন একজন ডাক্তার ‘ক্যাপ্টেন জন পল স্টাপ’ এবং একজন ইঞ্জিনিয়ার ‘ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড মারফি’। পরীক্ষাটি ছিলো মূলত গ্র্যাভিটি নিয়ে। তীব্র গতিতে ছুটতে থাকা উড়োজাহাজে হুট করে ব্রেক করলে সেই গতি একজন পাইলটের পক্ষে ব্যালেন্স করা সম্ভব কিনা! গতি ঠিকমতো পরিমাপ করার জন্য ক্যাপ্টেন মারফি তার একজন সহকারীকে ব্রেক ক্ল্যাম্প এর এর গায়ে একটা স্ট্রেইন গেজ লাগানোর নির্দেশ দিলেন। পরীক্ষাটি করার জন্য উড়োজাহাজের ভেতরে পাইলট হিসেবে রাখা হলো এক শিম্পাঞ্জিকে। পরীক্ষা করার পরে দেখা গেলো, স্ট্রেইন গেজে কোনো রিডিং-ই দেখাচ্ছে না। সবকিছু চেক করে দেখা গেলো, সেই সহকারি সবগুলো সেন্সর ভুলভাবে বসিয়েছে। এটা দেখে রেগে গিয়ে সেই সহকারীকে মারফি বলে, “যদি একটা কাজ করার দুটো উপায় থাকে এবং যে উপায়ে করলে কাজটি ভুল হবে। তুমি অবশ্যই সেই উপায়েই কাজটি করো”। কিছুক্ষণ পরে মারফি ওখান থেকে চলে যায়। তবে ‘ডাক্তার জন’ মারফির ঐ কথাটির একটা ভিন্ন সূত্র খুঁজে পান। পরবর্তিতে এক প্রেস কনফারেন্সে ‘জন’ জানান যে, মারফির সূত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার কারণে ঐ পরীক্ষা চলাকালীন তাদের দলকে আর কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। এরপর থেকেই মারফির সূত্রটি সাধারণ মানুষের কাছেও তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এখন আপনার কাছে মনে হতে পারে, ‘এটা তো খুবই সামান্য একটা উক্তি অথবা একটা মতবাদ। এমনটা তো প্রায়ই আমরা বলে থাকি। তাহলে মারফির সূত্র কেনো এতো জনপ্রিয় হলো!’ ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে। ভাগ্যের কাছে আমরা ক্ষমতাহীন। মূলত এই চিন্তাধারাই আমাদের নিয়ন্ত্রন করে। আদতে আমাদের করা কাজের ফলাফল আমরা নিজেরাই বয়ে আনি। মারফির সূত্রে বলা আছে, ‘যা ভুল করার, তা আমরা করবই’। কিন্তু এই ভুল করার ইচ্ছে তো নিজেদের থেকেই আসে। অপরদিকে এও দাঁড়ায় যে, আমরা নিজেদের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণহীন! অফিসে যেতে যেদিন বেশি দেরী হয়ে যায়, তখন রাস্তায় জ্যামে পড়লে আমরা নিজেদের ভাগ্যকে দোষারোপ করি।
মারফি’র সূত্র কিন্তু আমাদেরকে সতর্কবার্তাও দেয়। সূত্র মতে, কোনো কাজ যদি খুব সঠিকভাবে চলতে দেখা যায়, তারমানে কোথাও না কোথাও একটা ভুল হচ্ছেই।
জানা যায়, একদিন রাতে মারফির গাড়ির পেট্রল শেষ হয়ে যাওয়ায় সাদা পোশাকে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে তিনি হিচ হাইকিং এর চেষ্টা করছিলেন। তখন এক ব্রিটিশ টুরিষ্ট উল্টোদিক থেকে গাড়ি চালিয়ে এসে তাকে মারফিকে ধাক্কা মারে। ব্রিটেনে বামদিক দিয়ে গাড়ি চালানো আমেরিকার আইনে ভুল। আমেরিকাতে ডানদিক দিয়ে গাড়ি চলে। তারমানে সেদিনের চালকের ভুলের কারণেই ভুলের সূত্রের জনকের মৃত্যু হয়।