নিজের ইচ্ছায় কি স্বপ্ন দেখা যায়? lucid dream

Author
0

 


ধরুন আপনি স্বপ্নে উঁচু কোনো বিল্ডিং থেকে পড়ে যাচ্ছেন। বিল্ডিংটা এতটাই উঁচু যে, সেখান থেকে নিচে পড়লে আপনার হাত পা বা শরীরের অন্যান্য অংশ তো ভাঙবেই। কিংবা আপনি মারাও যেতে পারেন। আপনার তখন মনে হলো, নিচে যদি নরম কোনো গদি বিছানো থাকতো! অথবা আপনি এমন কিছুতে আটকে গেলেন, যাতে করে আপনার শারীরিক কোনো ক্ষতি হবার সম্ভাবনাই নেই। আপনি স্বপ্নের মাঝেই এটা ভাবলেন; এবং আশ্চর্যজনকভাবে আপনি উপর থেকে পড়লেন একটা নরম বিছানার ওপর। আপনার কিছুই হলো না। এই যে স্বপ্নটা আপনার মনের ইচ্ছানুযায়ী মোডিফাই হলো, এটাকে বলা হয় ‘লুসিড ড্রিম’। মানে আপনি স্বপ্নে যেটাই দেখতে চাইবেন, সেটাই দেখবেন। মনে মনে হয়তো ভাবছেন, এরকমটা কি সত্যিই হয়?

 

পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



গ্রিক দার্শনিক “এরিস্টটল” সর্বপ্রথম লুসিড ড্রিমের ধারনা দেন। এরিস্টটল লিখেছিলেন, মাঝেমধ্যে ঘুমানোর পরেও তার মস্তিষ্কের সচেতন একটা অংশ জাগ্রত থাকে। এবং স্বপ্ন দেখার মাঝেই তিনি উপভোগ করেন যে তিনি স্বপ্ন দেখছেন।

লুসিড ড্রিম আসলে ব্রেইণ পাওয়ার। বিভিন্ন সাধু সন্যাসীরা এই লুসিড ড্রিম চর্চা করেন। তারা মনে করেন, এটি একটি ‘ড্রিম ইয়োগা’। কারণ লুসিড ড্রিম মানসিক শক্তি এবং ক্রিয়েটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে।

 

আমরা গড়ে প্রতিদিন ঘুমের মাঝে প্রায় ৪ থেকে ৬ বার স্বপ্ন দেখে থাকি। তবে বেশিরভাগ স্বপ্নই আমরা ভুলে যাই। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, দৈনিক ঘুমের মাঝে দেখা স্বপ্নগুলোর ভেতরে কোন স্বপ্নগুলো আসলে ‘লুসিড ড্রিম’?

আমাদের ঘুমের প্রধান দুটি ধাপ রয়েছে। ‘র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বা র‍্যাম’ এবং ‘নন র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বা নন র‍্যাম’। ঘুমিয়ে পড়ার ৯০ মিনিট পরেই র‍্যাম ধাপের শুরু। এই ধাপে আমাদের মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। আর এই ধাপেই আমরা মূলত স্বপ্ন দেখে থাকি। আর এই ধাপেই ‘লুসিড ড্রিম’ দেখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এখন লুসিড ড্রিমের ওপর কতটুকু নিয়ন্ত্রন করা যায়, তা ব্যাক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়ে থাকে। কেউ লুসিড ড্রিমে যাওয়া মাত্রই ঘুম থেকে জেগে যায়, আবার কেউবা দিব্যি স্বপ্নের দৃশ্য পরিবর্তন করতে থাকে। ডাক্তার ম্যাথিউ ওয়াকারের মতে, মস্তিষ্কের যুক্তিতর্ক নিয়ন্ত্রণ করে যেই অংশ, সেটাই মূলত আমাদের লুসিড ড্রিম দেখায়। এই কারণেই স্বপ্ন দেখার সময় একইসাথে আমরা যুক্তি বিচার করতে পারি। সাধারনত লুসিড ড্রিমের সময় আমরা স্বপ্নটাকে বেশ স্পষ্ট দেখতে পাই এবং স্বপ্নে ঘটা অনুভুতিগুলোও অতি তীক্ষ্ণ হয়। তখন স্বপ্নটাকে বাস্তবের মতই মনে হয়।

 


কোনো একটা বাজে স্বপ্ন দেখার পরে ঘুম ভাঙার পরো সেটার রেশ থেকে যায়। এমনকি বাকিটা সময় স্বপ্নে দেখা ব্যপারগুলো মানসিকভাবে অস্থিরতা তৈরি করে। এখানেই লুসিড ড্রিমের ব্যবহার। আপনি চাইলেই স্বপ্নের খারাপ কিছুকে পরিবর্তন করে ভালো কিছু দেখতে পারেন। এতে করে আপনার মানসিক চাপটাও কমে। পুরো ব্যপারটাই আসলে মনস্তাত্বিক বিষয়। লুসিড ড্রিমের অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। তবে যাদের মানসিক অসুস্থ্যতা বা সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটা হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ লুসিড ড্রিমে মস্তিষ্ক জেগে থাকার কারণে ঠিকঠাক ঘুম হয় না। এতে করে মানসিক স্বাস্থ্যের আরো অবনতি হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে তালগোল লেগে যায়। এক্ষেত্রে মানসিক স্থিরতা বেশ দরকার। লুসিড ড্রিমের ফলে আপনি চাইলেই উড়তে পারবেন পাখির মতো। করতে পারবেন যা খুশি তাই।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!