পোস্ট কলোনিয়াল হ্যাংওভার। আচ্ছা আমাদের জীবনযাত্রায় ইংরেজি ভাষার অহেতুক ও অতিমাত্রায় ব্যবহার, পোষাক হিসেবে লুঙ্গিকে অবজ্ঞার চোখে দেখা, ওয়েস্টার্ন কালচারের প্রতি অতিভক্তি – বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোকে কি পোস্ট কলোনিয়াল হ্যাংওভার বলা যায়?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
উপনিবেশ বর্তমান দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশের জন্যই ভয়ানক এক
অতীত। স্পেশালি আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ ও আফ্রিকার জন্য। ইংরেজ ও ইউরোপিয়ান
বিভিন্ন দেশের কাছে এত বেশি সময় ধরে শোষিত হওয়ার কারণে তাদের তৈরি করে দিয়ে যাওয়া
অনেক কিছুই এখনো রয়ে গেছে আমাদের মধ্যে। আবার আমাদের সোশ্যাল ও পলিটিকাল লাইফে
তারা এমন অনেক কিছুই সেট করে দিয়ে গেছে যার প্রভাবে এখনো আমাদের মাথা নষ্ট হওয়ার
যোগাড়! এগুলোই আসলে পোস্ট কলোনিয়াল হ্যাংওভার।
এবার চলুন সাবকন্টিনেন্টের পার্সপেক্টিভে সবথেকে বড়
দুটি হ্যাংওভারের উদাহরণ জানা যাক।
প্রথমটি হচ্ছে সাদা চামড়ার প্রতি ভক্তি। বৃটিশদের শাসনামলে
ব্যাপারটা এমনভাবে আমাদের ভেতরে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গেছে যে, এখনও সাড়া চামড়ার
লোকজনের সবকিছুই সুপিরিয়র মনে হয়। ইভেন আমাদের সমাজে রেসিজম খুব স্বাভাবিক একটা
ইস্যুতে পরিণত হওয়ার পেছনেও এই কারণটিই দায়ী। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে ফ্যামিলির
মধ্যেও কালো মানুষদের গায়ের চামড়া নিয়ে অহেতুক কথা শুনতে হয়। এমনকি কালো ছেলে বা
মেয়ে জন্মালে সেই আনন্দঘন পরিস্থিতিতে পর্যন্ত তারা আফসোসে মারা যায়। কালো মেয়েদের
জন্য তো জীবন রীতিমত নরকে পরিণত হয় ধীরে ধীরে। জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত
অবজ্ঞা-অবহেলার মধ্য দিয়ে পার করে তারা।
এছাড়াও আরেকটি মারাত্মক রকমের হ্যাংওভার বৃটিশরা তৈরি করে
দিয়ে গেছে পার্টিশনের মাধ্যমে। ১৯৪৭ এর দেশভাগের ইমপ্যাক্ট ছিল হিউজ। যার গভীর
ক্ষত এখনো রয়ে গেছে ভারত ও পাকিস্তানের বুকে। এক দেশের মানুষ অন্য দেশের কাউকে
সহ্যই করতে পারে না। বাংলাদেশী হিন্দুদের নিজ দেশ-সমাজ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া,
ভারতীয় মুসলিমদের পাকিস্তানে চলে যাওয়া, ৭১ এ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, কাশ্মির নিয়ে
ভারত-পাকিস্তান কামড়াকামড়ির মতো হাজারো সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এবং হচ্ছে
সাব-কন্টিনেন্টের মানুষদের।
পোস্ট কলোনিয়াল হ্যাংওভার অনেকটা এবারের বিশ্বকাপে
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের রেজাল্টের মতো। বোর্ড প্রেসিডেন্ট, সিলেক্টর্স ও ক্যাপ্টেনের
‘তামিমকে দল থেকে বাদ দেওয়া’র কারণে দল যেখানে সম্পূর্ণ ট্যুর্নামেন্ট জুড়েই মাথা
উঁচু করে দাড়াতে পারে নি।
যাই হোক, কে জানে এসব হ্যাংওভার কাটতে কত সময় লাগবে! নাকি
আদৌ কাটবেই না? সেই সম্ভাবনাই বা উড়িয়ে দেই কি করে?