একটা সিচুয়েশন চিন্তা করা যাক। আপনি
একজন ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট। এই সেমিস্টারের একটি কোর্সে আপনাদের টিচার ভালোমতো
ক্লাস নেয় নি, কিছুই পড়ায়নি। অথচ কোর্সটা বেশ কঠিন। আপনারা নিজেরা নিজেরাও পড়ে খুব
একটা বুঝতে পারছেন না। সেমিস্টার ফাইনালে সেই কোর্সে আপনার এক বন্ধু নকল করতে গিয়ে
ধরা পড়লো। পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে তাকে গিয়ে আপনি জিজ্ঞেস করলেন কেন এমনটা করলো
সে? দেখলেন তার মধ্যে বিন্দুমাত্রও অনুশোচনা নেই। সে জানালো, স্যার কিছু পড়ায় নাই।
ফাঁকি মারছে। নিজে থেকে পড়তে যেয়েও কিচ্ছু বুঝি নাই। এজন্যই নকল করছি।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
কথা হচ্ছে, মোরালি দেখলে এই
ব্যাপারটা কি আপনার কাছে খারাপ কাজ নাকি যা হয়েছে একদম ঠিক হয়েছে? মোরাল
ব্যাপারটাই কিন্তু পার্সোনাল বিলিফের উপরে নির্ভর করে। একেকজনের কাছে ভালো এবং
খারাপের সংজ্ঞা একেক রকম। আবার এথিকালি দেখলে কিন্তু ব্যাপারটা অবশ্যই খারাপ। কারণ
কোড অফ কন্ডাক্ট অনুযায়ী নকল করা খারাপ কাজ। এখানে কারণে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের দাম
নেই।
রবিন হুডের ব্যাপারটাই ধরা যাক। বড়লোকের থেকে টাকা মেরে গরীবকে দান করার জন্যে বিখ্যাত এই লোকটা কিন্তু সেই বড়লোকদের পার্সপেক্টিভ থেকে মোরালি রং। কিন্তু গরীবদের পার্সপেক্টিভ থেকে আবার মোরালি রাইট। নিউট্রাল মানুষজনের মধ্যেও বেশিরভাগের মতে সে ঠিক কাজটাই করছে। কারণ সাধারণ মানুষরা এমনিতেই পুঁজিবাদী সমাজের বিরুদ্ধে। মোট কথা, মোরাল ব্যাপারটা আমাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস, কালচার, ধর্ম, বেঁড়ে ওঠার পরিবেশ ও বায়াসনেসের উপরে নির্ভর করে।
এবারে আরেকটি সিচুয়েশন চিন্তা করা
যাক। ২০০৬ বিশ্বকাপে জিদানের সেই ঠুসের কথা মনে আছে? ফাইনালে হুট করে ইতালির
মাতারাজ্জিকে দেওয়া হেডবাটের কথা চিন্তা করা যাক। ধারণা করা হয়, মাতারাজ্জি
জিদানকে উস্কে দেওয়ার জন্যে তার পরিবার নিয়ে নোংরা কোন কথা বলেছিল। তাই জিদান মাথা
ঠিক রাখতে না পেরে ফলাফল না ভেবেই হেডবাট করে বসেছে। অ্যাজ আ রেজাল্ট লাল কার্ড
দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। ফ্রান্সও শিরোপা থেকে পিছিয়ে গিয়েছিল চার কদম। শেষমেশ
হারতেও হয়েছিল।
এখন কথা হচ্ছে, এথিকালি দেখলে
কিন্তু জিদান ভুল করেছিল। কারণ ফিফার ক্লিয়ার রুলস আছে এইসব ব্যাপারে। এথিকস
ব্যাপারটাই প্রফেশনাল কিংবা এক্সপার্টদের ঠিক করে দেওয়া স্ট্যান্ডার্ডের উপরে
নির্ভর করে। তাই কোড অফ কন্ডাক্ট অনুযায়ী জিদান ওয়াজ রং। কিন্তু এই ব্যাপারটাই যদি
মোরালি দেখা হয়। অনেকের মতেই কিন্তু জিদান ঠিক কাজটাই করেছিল। অনেকেই মনে করে
পরিবারের কাউকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বললে তাকে ছেড়ে কথা বলা উচিত না। নগদের উপরেই
টপাটপ দুই-চার ঘা দিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু অনেকের মতে সেই পরিস্থিতিতে জিদানের
মাথা ঠান্ডা রাখা উচিত ছিল সিচুয়েশন চিন্তা করে। ম্যাচের পরে নাহয় ব্যাপারটা
অফিশিয়ালি ডিল করা যেত।
এখানেই মোরাল এবং এথিক্সের
পার্থক্য। দুটো টার্মই বেসিকালি ভালো এবং খারাপ নিয়ে কথা বলে। কিন্তু মোরাল নির্ভর
করে ঠিক-ভুলের ব্যাপারে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের উপরে। অন্যদিকে, এথিক্স নির্ভর করে
প্রোফেশনাল কিংবা এক্সপার্টদের ঠিক করে দেওয়া ঠিক-ভুলের স্ট্যান্ডার্ডের উপরে।