একবার এক সিনেমাতে গ্রামের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো শাবানাকে। কিন্তু সেই চরিত্রের শাবানাকে ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরতে হতো বলে শাবানা সেই চরিত্রটা করেননি। চলচ্চিত্র জগতে পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন অভিনেত্রী শাবানা।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
ছোটবেলা থেকেই বেশ লাজুক স্বভাবের মেয়ে ছিলেন শাবানা। পরিচালক এহতেশাম ছিলেন তার বাবার খালাতো ভাই। পরিচালক চাচার হাত ধরেই মাত্র ৯ বছর বয়সে নায়িকা শাবানার চলচ্চিত্র জগতে আসা। প্রথম সিনেমায় শিশু শিল্পী শাবানা সবার মন জয় করে নেন। এরপর লাজুক সেই মেয়েটির প্রতিভার ডালা ধীরে ধীরে খুলতে থাকে। শাবানা বেশ ভালো নাচতে পাড়তেন। তার নাচে সকলেই থাকতেন মন্ত্রমুগ্ধ
হয়ে। শাবানার অতুলনীয় প্রতিভা ও প্রখর অভিনয়ক্ষমতা
ছড়িয়ে যায় চারিদিকে। দর্শক জনপ্রিয়তায় ভরপুর এই অভিনেত্রী তার ক্যারিয়ারে অনেক ধরনের ভ্যারিয়েশন দেখিয়ে গেছেন।
অভিনয়
নিঃসন্দেহে গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নায়িকা শাবানা। সিচুয়েশন, ভয়েজ টোন, এক্সপ্রেশন। এই তিনটা জিনিস সবসময় শাবানার আয়ত্বে থাকতো। এই নায়িকা ছিলেন সবার থেকে আলাদা।
ছোটবেলায় মা, খালাদের সাথে নিয়ে শাবানার কোনো সিনেমা দেখতে বসলে শাবানার কান্নার সাথে সাথে তারাও কেঁদে দিতেন। তবে হা শাবানার অভিনয়ের এক অনন্য পরিচয় তার অভিনীত “ভাত দে” সিনেমাটি। ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার, ভাতের জন্য সামাজিক অপমান সহ্য করে টিকে থাকার সংগ্রাম করা, অন্যের বাড়ি থেকে ভাতের হাঁড়ি চুরি করা, দোকান থেকে কলার কাঁদি চুরি করে পালানো, ভাতের হোটেলে কাস্টমারের সামনে মলিন বদনে দাঁড়ানো এসব জীবন্ত অভিনয় শুধুমাত্র শাবানাকে দিয়েই সম্ভব।
“চাঁপা ডাঙ্গার বউ” সিনেমাতে শাবান তার দেবর বাপ্পারাজকে মায়ের মতো স্নেহ আর শাসন করা ভাবী চরিত্র যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছে, সেটা ছিলো অনন্য।
বাংলা সিনেমার অনন্য এই কিংবদন্তী নায়িকার নায়িকা হয়ে প্রথম সিনেমাটা কিন্তু ছিলো উর্দু ভাষায়। সেই সিনেমায় তার বিপরীতে নায়ক ছিলেন ‘নাদিম’। সিনেমার নাম ছিলো “চকোরি”। এই সিনেমাটা সেসময় তুমুল ব্যবসাসফল হয়েছিলো। সিনেমায় শাবানাকে দেখলেই বোঝা যায় কেনো তাকে নিয়ে সকলের এতো আকাঙ্খা! মেধাবী এই অভিনেত্রী রূপে গুণেও ছিলো সকলের থেকে আলাদা।
জুটি বাধায় শাবানা ছিলেন অনন্য। কমার্শিয়াল সিনেমার দাবড় দাবড় সব তারকাদের সাথে জুটি বেধেছিলেন তিনি। এর মধ্যে আলমগীরের সাথে শাবানার জুটি ছিলো শ্রেষ্ঠ। এই জুটির ম্যাজিকাল ক্যামিস্ট্রি বেশ লম্বা সময় ধরে রাজত্ব করেছিলো পর্দায়। অনেকেতো আবার বিশ্বাসই করতে পারেন না যে, আলমগীর তার স্বামী নন। নায়ক আলমগীরের যে পার্সোনাল একটা বউ আছে সেটাও মানতে নারাজ তারা। এছাড়াও রাজ্জাক, জসিম, সোহেল রানা, জসীম এদের সাথে শাবানার জুটি ছিলো অনবদ্য।
নিজস্বতা
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে
সবচেয়ে বেশি কাঁদাছোড়াছুড়ি হয় যে বিষয়টা নিয়ে, সেটা হলো নায়িকাদের পোশাক। তবে এই বিষয়টাতে শাবানা ছিলেন খুবই সচেতন। “বধূ বিদায়” সিনেমাতে পরিচালক শাবানাকে গ্রামের মেয়ের একটা রোল দেয়। তবে সেই চরিত্রের জন্য ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পড়তে হবে বলে, শাবানা সেই রোলটি করেননি। পরবর্তীতে সেই সিনেমায় শাবানাকে শহুরের মেয়ের চরিত্রে বেশ আঁটসাট ভাবেই দেখা গেছে।