লেস্টার রূপকথা – ফুটবল ইতিহাসের সবথেকে বড় চমক || English Premier League || Leicester City F.C.

Author
0

 


২০১৪-১৫ ফুটবল সিজনের কথা মনে আছে? দুই সিজন আগেই প্রোমোটেড হওয়া ক্লাবটি, সিজন শুরুর আগে যাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পক্ষে বাজির দর ছিল রীতিমত ১/৫০০০! সিজন শেষে তারাই জিতে গেল প্রিমিয়ার লিফ ট্রফি। বলছি লিস্টার সিটির প্রিমিয়ার লিগ জেতার অবিশ্বাস্য সেই কীর্তির কথা।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



২০১২-১৩ সিজনকে ইংলিশ ফুটবল মনে রাখবে স্যার আলেক্স ফার্গুসনের শেষ সিজন হিসেবে।

তবে তার মাঝেও চ্যাম্পিয়নশিপ উঠে এসেছিল শিরোনামে। ইপিএল প্রোমোশনের সেমিফাইনালে ফার্স্ট লেগে ১-০ গোলে লিড নিয়ে ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগ খেলতে গিয়েছে লেস্টার সিটি। ইঞ্জুরি টাইমের শেষ মিনিটে পেনাল্টি পেল তারা। এগ্রিগেট স্কোর তখন ২-২।

এরপর ঘটলো এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড। নকায়ের্টের পেনাল্টি শটে ডাবল সেইভ দিলেন ওয়াটফোর্ড কিপার আলমুনি। এরপর সেখান থেকেই কাউন্টার অ্যাটাকের সূচনা করলো ওয়াটফোর্ড। শেষমেশ ট্রয় ডিনির দারুণ ফিনিশে ৩-২ এ জিতে গেল ওয়াটফোর্ড। ফলস্বরূপ প্লে-অফ ফাইনালে চলে গেল ওয়াটফোর্ড। ম্যাচের এরকম পাগলাটে ফিনিশিং দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না কোনো দলের ভক্তরাই।

ফুটবল মুদ্রার দুই পিঠ কয়েক সেকেন্ডের মাথায় দেখে ফেলল দুটি ক্লাব এবং পুরো ফুটবল বিশ্ব। ওয়াটফোর্ড সমর্থকেরা উল্লাসে রীতিমত মাঠে নেমে পড়লেন, ছুঁয়ে দেখতে চাইলেন তাদের হিরোদের, অন্যদিকে এই ভীড়ের মাঝেই হতাশ হয়ে পড়ে থাকলেন লেস্টার সিটির খেলোয়াড়েরা।

রূপকথার সেই সেমিফাইনালের শোককে শক্তিতে পরিণত করল লেস্টার সিটি। পরের সিজনে ১০২ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ রীতিমত দাপটের সাথে জিতল তারা। ২০০৪ এ রেলিগেটেড হবার পর প্রথমবারের মত প্রিমিয়ার লিগে ফিরে এলো লেস্টার সিটি। প্রিমিয়ার লিগে ফিরেই জানুয়ারি উইন্ডোতে তারা সাইন করলো রিয়াদ মাহরেজকে, ফ্রান্সের সেকেন্ড ডিভিশন ক্লাব লা হাভ্রা থেকে, মাত্র ৪ লাখ পাউন্ডের বিনিময়ে।

২০১৫ এর এপ্রিল। প্রিমিয়ার লিগের গতিময় ফুটবলের সাথে পেরে উঠছে না লেস্টার সিটি। খারাপ যে খেলছে তাও না কিন্তু শুধু হারছেই। সেই নভেম্বর মাস থেকে ২০তম পজিশনেই পড়ে আছে। লিগে আর বাকি ৯ ম্যাচ। সারা মৌসুমে মাত্র ৪ ম্যাচ জেতা লেস্টার কত দ্রুত রেলিগেটেড হয় তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ভক্তরা। যে ক্লাবের স্লোগান হল “ফক্সেস নেভার কুইট” সেই ক্লাব আর যাই হোক, ছাড়বার পাত্র নয়। হাল ছাড়ল না লেস্টার। শেষ ৯ ম্যাচের ৭টিতেই জিতল তারা, ১৪তম হয়ে শেষ করল মৌসুম। গাণিতিক হিসাবে এটা প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের “দি গ্রেটেস্ট এভার এস্কেপ”।

পরের সিজন শুরু হবার ঠিক আগে মাঠের বাইরের কিছু সমস্যার কারণে বরখাস্ত হলেন ম্যানেজার নাইজেল পিয়ারসন। তার পরিবর্তে এলেন ইতালিয়ান কোচ ক্লাউদিও রানিয়েরি। ইংল্যান্ড জুড়ে শুরু হলো সমালোচনা। যে কোচ তাদের প্রিমিয়ার লিগে প্রমোশন এনে দিয়েছে, তার জায়গায় কেন রানিয়েরির মত আউটডেটেড কোচ আনা হল? সবাই ধরেই নিলো এবারে রেলিগেটেড হয়েই যাবে লেস্টার, রানিয়েরিও হবেন বরখাস্ত। যাই হোক, ফ্রেঞ্চ ক্লাব কায়েন থেকে মাত্র ৫.৬ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে আনা হলো মিডফিল্ডার এনগলো কান্তেকে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে গেইমউইক ১৩ থেকে গেইমউইক ৩৬ পর্যন্ত প্রায় পুরোটা সময়েই লিগের টপ পজিশন ধরে রাখলো ফক্সরা।

গেইমউইক ৩৬ এ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে ড্র করলো লেস্টার। ড্রটাকে মনে হচ্ছিল ছোট্ট একটা ধাক্কা। লেস্টার সিটির হয়তো একটু শঙ্কা ছিল, যদি পরের দুই ম্যাচেও হোঁচট খেতে হয়ে? শঙ্কাটা ২৪ ঘণ্টার বেশি টিকল না। চেলসির মাঠে প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলের ড্র নিয়ে ফিরল সেকেন্ড পজিশনে থাকা টটেনহাম। ওদিকে উল্লাসে ফেটে পড়ল লেস্টার শহরের পাবে-বারে, বাসায় টিভির সামনে বসে প্রার্থনা করতে থাকা হাজারো সমর্থক। সব অনিশ্চয়তা দূর হয়ে গেছে। মৌসুমজুড়ে এক পাতা-দু পাতা করে লিখতে থাকা রূপকথায় সুন্দর সমাপ্তি এসে গেলো। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নতুন চ্যাম্পিয়ন হলো লেস্টার সিটি! সেই সিজনে তাদের নায়ক ছিল সমগ্র দলটাই। তবুও সেই দলের মেইন স্টার ছিল রানিয়েরি, ভার্ডি, মাহরেজ, কান্তে ও স্মাইকেল।



দ্য ফক্সরা দেখিয়ে দিয়েছিলো নিষ্ঠা, পরিশ্রম এবং প্যাশন একটি ক্লাবকে কোথা থেকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে। এই জন্যই সেই সিজনে তারা হয়ে উঠেছিল ‘পিপলস চ্যাম্পিয়ন’। তারা সারা বিশ্বকে একটা বার্তাই দিয়েছে – “Chat Shit Get Banged”। মুখ খোলার আগে ৫০০ বার ভেবো। যদিও গত সিজনেই তারা আবারও রেলিগেটেড হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে চলে গেছে। আপনাদের কি মনে হয়, তারা কি পারবে শীঘ্রই আবারও প্রিমিয়ার লিগে ফিরে আসতে?

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!