ধরা যাক, প্যালেস্টাইনের নির্যাতিত একটি পরিবার পালিয়ে অবৈধ পথে ইউরোপে কোন এক দেশে গেলো। সেই দেশের কোনো এক পরিবার তাদের এই পরিচয় জানার পরেও তাদেরকে আশ্রয় দিলো। এই সিনারিওটি যদি মোরাল ভ্যালুর দিক থেকে দেখেন, তাহলে বেশিরভাগ মানুষই বলবে পরিবারটি চমৎকার একটি কাজ করেছে। কিন্তু যদি সেই দেশের আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করেন, তাহলে কিন্তু তারা অপরাধী। কারণ অবৈধ রিফিউজিদের আশ্রয় দেওয়া যে কোনো দেশের আইনেই অপরাধ হিসেবে দেখা হয়।
মোরাল ভ্যালু ও আইন অনেক ক্ষেত্রেই একই পক্ষে থাকতে পারে। কিন্তু দুটো একদমই
ডিফ্রেন্ট কন্সেপ্ট। মোরাল ভ্যালু বলতে আমরা বুঝি একজন মানুষ কিংবা একটি সোসাইটির মতে
কোনটি ভালো কিংবা কোনটি খারাপ কাজ। অন্যদিকে আইন হচ্ছে সেই দেশের সংবিধান অনুযায়ী ঠিক
করা রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন্স।
মোরাল ভ্যালু এবং ল অনেক ক্ষেত্রেই কন্ট্রাডিক্টোরি হতে পারে। ভিডিওর শুরুতে
দেখা সিনারিওর একদম বিপরীত একটি সিনারিও দেখা যাক এবার। ধরুন, বন্ধুদের সাথে বান্দরবান
ট্যুরে যাচ্ছেন। কিন্তু বাসায় জানানো যাবে না। পাহাড়ি এলাকা, নেটওয়ার্কের কোন ঠিক-ঠিকানা
নেই। আপনার মা অহেতুক চিন্তা করবে। তাই আপনি ঠিক করলেন, মাকে বলবেন বন্ধুর বড় ভাইয়ের
বিয়ে খেতে যাচ্ছেন। এখন এখানে কিন্তু আপনি মিথ্যা বলেছেন। যা মোরাল ভ্যালু অনুযায়ী
খারাপ একটি কাজ। বেশিরভাগ মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস কিংবা সামাজিক ভাবেও মিথ্যা বলাকে
খারাপ চোখেই দেখা হয়। যতই তার পেছনে উদ্দেশ্য ভালো হোক না কেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে
মিথ্যা বলা কিন্তু কোন আইনগত অপরাধ না। তাই মোরাল ভ্যালুর দিক দিয়ে এটি খারাপ কাজ হলেও,
ল ওয়াইজ এটি কিন্তু কোন ভুল বা খারাপ কাজ না।
একটি ক্লাসিক সিনেম্যাটিক উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাক। পৃথিবীতে বর্তমানে সবথেকে
ঘৃনিত ব্যক্তি কে? এই প্রশ্নের উত্তরে বেশ কয়েকটি নাম উঠে আসার কথা। কিম জং উন, ডোনাল্ড
ট্রাম্প অথবা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ধরা যাক জঘন্য রকমের স্বৈরশাসন চলা উত্তর কোরিয়ায়
কোন এক ব্যক্তি সামহাউ কিম জং উনকে মেরে ফেললেন। এতে করে বহু বছর ধরে নির্যাতিত উত্তর
কোরিয়ান মানুষজন মিলে একটি আন্দোলন গড়ে তুললো। সেই আন্দোলনে দেশ স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি
পেলো। এখানে কিম জং উনকে করা খুন কিন্তু আইনতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ। একজন মানুষ যতই খারাপ
হোক না কেন, কেউ আইন নিজের হাতে নিয়ে তাকে মারতে পারে না। কিন্তু মোরাল ভ্যালু কিন্তু
অন্য কথা বলে। সেই লোকের কিমকে মেরে ফেলার কারণেই কিন্তু এখানে সেই আন্দোলনের জন্ম
হলো। এবং দিনশেষে উত্তর কোরিয়া অত্যাচারী স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পেলো। মোরালি ভ্যালু
ওয়াইজ হি ইজ রাইট। অর্থাৎ, মোরাল ভ্যালু এবং ল সবসময় অ্যাগ্রিমেন্টে আসবে না। মোরাল
ভ্যালু দীপু নাম্বার টু এর দীপুর বাবার মতো হলে ল অনেকটা থ্রি ইডিয়েটসের ভাইরাস স্যারের
মতো।