দুর্ধর্ষ অ্যাটাকিং ফুটবলে ব্রাইটনের উত্থান | De Zerbi Ball | Brighton's Tactical Analysis

Author
0

 



যারা নিয়মিত প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল (Premier League Football) ফলো করেন, তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় কোন দলের খেলা দেখে সবথেকে বেশি আরাম পাচ্ছেন। বেশিরভাগই উত্তরে বলবে ব্রাইটন। কিন্তু এই ব্রাইটন (Brighton) কিন্তু এক দশক আগেও প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের কোন সিনেও ছিল না। হুট করে তাদের এই উত্থানের পেছনের রহস্যটা আসলে কি?

পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



ব্রাইটনের উত্থানের শুরু মূলত ১৭/১৮ সিজনে ম্যানেজার ক্রিস হিউটনের হাত ধরে। সেই সিজনে সেকেন্ড টায়ার ‘ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপে’ সেকেন্ড হয়ে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগে প্রোমোটেড হয় ক্লাবটি। কিন্তু পরের সিজনেই প্রিমিয়ার লিগে ধুঁকতে থাকে তার দল। সেবার দুই পয়েন্টের জন্য রেলিগেশন থেকে বেঁচে যায় ব্রাইটন। পরের সিজনে তাকে স্যাক করে নিয়োগ দেওয়া হয় বৃটিশ ম্যানেজার গ্রাহাম পটারকে। ক্লাব হিসেবে ব্রাইটনের রেলেভেন্ট হয়ে ওঠা মূলত গ্রাহাম পটারের হাত ধরেই। তার ডিফেন্স ঠিক রেখে খেলা কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবল ব্রাইটনকে প্রিমিয়ার লিগে মিড টেবিল টিম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

তার আন্ডারে ব্রাইটন বেস্ট সময় কাটায় ২০/২১ সিজনে। প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে টপ টেনে থেকে সিজন শেষ করে ক্লাবটি। পরের সিজনে সে রিজাইন করে চেলসির ম্যানেজার হয়ে গেলে, সিগালদের নতুন ম্যানেজার হয়ে আসেন স্বল্প পরিচিত এক তরুণ ইতালিয়ান কোচ, রবার্তো ডি জার্বি (Roberto De Zerbi)



ডি জার্বির কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৩-১৪ সিজনে, ইতালিয়ান ফোর্থ ডিভিশনের ক্লাব ডারফো বোয়ারিওর হয়ে। এরপরে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি ২য় ও ৩য় ডিভিশনের ক্লাব কালচিও Foggia, পালের্মো, বেনেভেন্টোতে কোচিং করান। ২০১৮ তে আসেন সিরি এ-এর ক্লাব সাসুয়োলোর কোচ হয়ে। সেখানে তিন সিজন কাটিয়ে ২০২২ এ ব্রাইটনে আসার আগে এক সিজন ছিলেন ইউক্রেনিয়ান ক্লাব শাখতার দোনেস্কেও। মূলত সাসুয়োলো এবং শাখতারে থাকা সময়েই অ্যাটাকিং ফুটবল দিয়ে অল্পবিস্তর নজর কাড়তে শুরু করেন তিনি।

ব্রাইটনে এসে প্রথম সিজনেই করেছেন বাজিমাত। পয়েন্ট টেবিলে ৬ নম্বর হয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান ফুটবলে কোয়ালিফাই করেছে সিগালরা। এই সিজনে খেলবে ইউরোপা লিগে।

তার প্লেয়িং স্টাইল থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন পেপ গার্দিওলা ও মিকেল আর্টেটার মতো হাই প্রোফাইল কোচরাও। গার্দিওলা তার গত সিজনের আলোচিত ৩-২-৪-১ অর্থাৎ ক্রিসমাস ট্রি ফর্মেশন তৈরির ক্ষেত্রেও আইডিয়া পান ডি জার্বির ফুটবল ফিলোসফি থেকেই। গণমাধ্যমে পেপ তার ব্যাপক প্রশংসাও করেছেন। তার মতে নিচ থেকে বিল্ড আপের ক্ষেত্রে এই মূহুর্তে ব্রাইটন বিশ্বের সেরা দল। তিনি আরো বলেন, গত ২০ বছরে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবথেকে ইনফুয়েন্সিয়াল ম্যানেজার হচ্ছেন রবার্তো ডি জার্বি!

এত এত প্রশংসার নেপথ্যে থাকা কারণটা তবে জানা যাক। ডি জার্বি মূলত আর্টিফিশিয়াল ট্রাঞ্জিশনে বিশ্বাসী। তিনি চান তার প্লেয়াররা মাঠে ফ্রিডম নিয়ে ক্রিয়েটিভ ফুটবল খেলুক। তার সিস্টেমে প্লেয়াররা অপনেন্টকে হাই প্রেস পরার সুযোগ দেয়। এবং সেই সময়ে অল্টারনেটিভ স্পেস ক্রিয়েট কোরে বলকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যেখানে গ্রাহাম পর্টার ছিলেন অপনেন্টের পায়ে বল দিয়ে সলিড ডিফেন্স ও কাউন্টার বেইজড ফুটবলে বিশ্বাসী। সেখানে ডি জার্বি মূলত পজিশন ধরে রেখে এবং স্পেস ক্রিয়েট করে উইং বেইজড কাউন্টার অ্যাটাক করে থাকেন।



গত সিজনে তিনি মূলত ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলিয়েছেন ব্রাইটনকে। অ্যাটাকের সময়ে তার স্ট্রাইকার ইভান ফার্গুসন কিংবা ওয়েলব্যাক মূলত ড্রপ ব্যাক করে অ্যাটাকিং মিডে থাকা ম্যাক অ্যালিস্টারের সাথে মিলে ডাবল পিভট তৈরি করতো। আবার নিচেও ডিফেন্সিভ মিডে কাইসেডো এবং পাসক্যাল গ্রস মিলে আরো একটি ডাবল পিভট তৈরি করতো। এতে করে মিডফিল্ড অনেকটা ডাবল বক্স আকৃতির হয়ে যেত। যা একদম নিচ থেকে বিল্ড আপ করতে এবং একইসাথে উইং ধরে কাউন্টার অ্যাটাক করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। অ্যাটাকের সময়ে স্ট্রাইকার ড্রপ ব্যাক করে নিচে নেমে এলে অপনেন্টের ডিফেন্ডাররাও তাকে ম্যান মার্ক করার জন্য চলে আসতো। এতে করে অপজিশন ডি বক্সে আরো বেশি স্পেস ক্রিয়েট হতো। তখন সেটাকে কাজে লাগাতো দুই উইংগার কাউরু মিটোমা এবং সলি মার্চ। একইসাথে ইলেক্ট্রিক পেইস এবং দারুণ ড্রিবলার হওয়ায় দুজনেই রীতিমত ঘাম ছুটিয়ে দিত অপনেন্ট ডিফেন্ডারদের। ডি জার্বির সিস্টেমে বিল্ড আপ শুরু হয় একেবারে গোলকিপার থেকে। তাই তার দলে গোলকিপিং অ্যাবিলিটির পাশাপাশি দারুণ বল প্লেয়িং একজন গোলকিপার থাকা মাস্ট। সিজনের মাঝ পথে একদম হুট করে সুযোগ পাওয়া জেসন স্টিল সেই কাজটা বেশ ভালো মতোই করেছেন গত সিজনে। সেন্টার ডিফেন্ডার হিসেবে থাকা বেন ডাঙ্ক এবং অ্যাডাম ওয়েবস্টারও দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন ডি জার্বি বলের সাথে।

তবে তার সিস্টেমে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মইসেস কাইসেডো, লেফট উইঙ্গার কাউরু মিটোমা, লেফট ব্যাক পারভিস এস্টুপিনান এবং অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আলেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। ব্রাইটনের এই উত্থানে ক্লাব ওউনার টনি ব্লুমের অবদানও অনেক। ব্রাইটন তার নিজের শহর। সম্ভবত একারণেই দলটিকে ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেন।

ইংলিশ ক্লাবটি স্কাউটিং এর দিক দিয়েও দুর্দান্ত। দুনিয়াজুড়ে খোঁজ চালিয়ে চমৎকার সব নতুন ট্যালেন্ট আবিষ্কারের ক্ষেত্রে তাদের জুড়ি মেলা ভার। তারা শুধু ট্যালেন্ট আবিষ্কার করেই বসে থাকেন না, তাদেরকে প্রপার সুযোগও দেন।



এই ক্ষেত্রে ব্রাইটন এবং রবার্তো ডি জার্বি যেন ম্যাচ মেইড ইন হেভেন। ডি জার্বি মাঠে যেমন ফিয়ারলেস ফুটবল খেলান, তেমনি ইয়াংস্টারদের বড় মঞ্চে সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও দারুণ উদার। গত সিজনেই কাউরু মিতোমা, ইভান ফার্গুসন, হুলিও এনসিসো, জেসন স্টিল, এস্টুপিনান, ডেনিস উন্দাভ, লিভাই কলউইল, বুয়োনানোট্টে, গিলমোর, ভ্যান হ্যাকদের মতো তরুণদের প্রচুর ম্যাচটাইম দিয়েছেন। তারা নিজেরাও সম্ভবত এতটা এক্সপেক্ট করে নি। তবে এই সিজনে ডি জার্বির সামনে চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি। দল থেকে ম্যাক অ্যালিস্টার, কাইসেডো ও কলউইলের মতো পরীক্ষিত পারফর্মাররা চলে গেছেন। হোয়াও পেদ্রো, আনসু ফাতি, ভারব্রুগেন, বালেবা, দাহৌদের মতো নতুনরা এসেছেন দলে।

ব্রাইটন ফ্যানদের মতে, গ্রাহাম পটারের সময়ে ব্রাইটন ছিল ভালো, কিন্তু ডি জার্বির সময়ে ব্রাইটন হয়ে উঠেছে গ্রেট। এখন দেখার বিষয়, বড় কোন ক্লাবে চলে যাওয়ার আগে ব্রাইটনকে নিয়ে কত দূর যেতে পারেন তিনি।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!