টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের পথচলার
মাত্র ২১ তম বছর চলছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কল্যাণে এই মুহূর্তে দাড়িয়ে
ক্রিকেটের সবচেয়ে এন্টারটেইনিং ফর্ম্যাট এটি। আমরা দেখার চেষ্টা করেছি এই
সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা একাদশে থাকবেন কারা। পারফর্ম্যান্স
এবং কার্যকারিতা - দুই দিকে ব্যালেন্স রেখে সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে সর্বকালের
সেরা টি-টুয়েন্টি একাদশ।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
ওপেনিংঃ ক্রিস গেইল এবং ডেভিড ওয়ার্নার
খুব বেশিদিন আগের কথা না। যখন টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের অপর নাম ছিলেন ক্রিস গেইল। ‘ইউনিভার্সাল বস’ গেইলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিকেট ইতিহাসেই আরেকটি নেই। প্রাইম গেইল ছিলেন পৃথিবীর যে কোন বোলারের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক।
টি-টুয়েন্টির ফেরিওয়ালা এই ওপেনার ১৮ বছর ধরে ভিন্ন ভিন্ন ৩২ টি দলের হয়ে মোট ম্যাচ খেলেছেন ৪৬৩ টি। সর্বোচ্চ টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারের মধ্যে আছেন পাঁচ নম্বরে। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের মালিকও তিনি। ৩৬ অ্যাভারেজ এবং ১৪৫ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৪,৫৬২। ৮৮ টি ফিফটির পাশাপাশি আছে রীতিমত ২২ টি সেঞ্চুরি! এছাড়া দলের প্রয়োজনে হাতও ঘুরাতে পারতেন খারাপ না। অফ স্পিন করতে দেখা যেত মাঝে মাঝেই। নামের পাশে আছে ৮৩ টি উইকেটও। ২০ ওভারের ক্রিকেটে আরেকজন চমৎকার ইফেক্টিভ ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। এই মুহূর্তে ফর্ম পড়তির দিকে থাকলেও, একটা সময় বছরের পর বছর কন্সট্যান্টলি বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ান।
৩৫৬ ম্যাচ খেলে ৩৮ অ্যাভারেজ ও ১৪১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১১,৬৯৫ রান। ৮ টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি তার রয়েছে ৯৯ টি ফিফটিও।
মিডল অর্ডারঃ বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স
১৫ বছরের ইন্টারন্যাশনাল ক্যারিয়ারে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বিরাট কোহলি। নিজেকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সকল ক্রিকেট লাভার এই কথা একবাক্যে স্বীকার করবে যে, গত এক যুগে তার মতো পরিণত ব্যাটসম্যান আর কেউ আসে নি।
ওয়ানডে, টেস্ট এবং টি-টুয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই এতটা ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান পুরো ক্রিকেট ইতিহাসেই আর একটি নেই। টি-য়েন্টিতে ৪২ অ্যাভারেজ এবং ১৩৪ স্ট্রাইক রেটে ৩৭৪ ম্যাচ খেলে করেছেন ১১,৯৬৫ রান। ৮ টি সেঞ্চুরির সাথে আছে ৯১ টি ফিফটিও।
টি-টুয়েন্টির আরেক তুমুল জনপ্রিয় ও কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। প্রোটিয়া এই ক্রিকেটার মূলত মাঠের সবদিকে সমান দক্ষতায় একই সাথে অদ্ভুত এবং দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলার জন্যে বিখ্যাত। তার ডাকনামই হয়ে গিয়েছিল ‘মিস্টার থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’। ৩৪০ ম্যাচ খেলে করেছেন ৯৪২৪ রান। ৩৭ অ্যাভারেজের পাশাপাশি রয়েছে ইর্ষনীয় ১৫০ স্ট্রাইক রেট। করেছেন ৬৯ টি ফিফটি ও ৪ টি সেঞ্চুরি।
ফিনিশার ও অধিনায়কঃ মাহেন্দ্র সিং ধোনি
সম্পূর্ণ ক্রিকেট ইতিহাসেরই সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটারের নাম সম্ভবত মাহেন্দ্র সিং ধোনি। ইন্ডিয়া এবং এর বাইরেও তার ক্রেজ রীতিমত চিন্তার বাইরে। ফিনিশার হিসেবে দুর্দান্ত সব পারফর্ম্যান্স, বিদ্যুতগতির উইকেট কিপিং এর পাশাপাশি ঠান্ডা মাথার ব্যবহার এবং লিডারশিপ গুণাবলির দ্বারা নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তার নামের পাশে রয়েছে প্রচুর তকমা। সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন, সর্বকালের সেরা ফিনিশারের পাশাপাশি তাকে সর্বকালের সেরা উইকেট কিপারও বলা হয়ে থাকে। ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ক্যাপ্টেন হিসেবে জিতেছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং আইসিসি ট্রফির শিরোপা। এছাড়াও চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে জিতেছেন পাঁচটি আইপিএল শিরোপা এবং দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাও। ক্যারিয়ারে ৩৭৭ টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচে করেছেন ৭২৭১ রান। ফিনিশার হিসেবে খেলে ৩৮ অ্যাভারেজ এবং ১৩৫ স্ট্রাইক রেটকে চমৎকার বলতেই হয়।
অল-রাউন্ডারঃ গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, সাকিব আল হাসান, রশীদ খান এবং ডোয়াইন ব্রাভো
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বাদে
বাকি তিনজনই মূলত বোলিং-অলরাউন্ডার। যাদের মূলত বল হাতেই সাফল্যের পরিমাণ বেশি।
পাশাপাশি ব্যাটিং-টাও পারেন বেশ ভালোই। তবে ম্যাক্সওয়েলের ক্ষেত্রে কেসটা উল্টো।
৪০৫ ম্যাচের বিশাল টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে করেছেন ৯ হাজার ৯৯ রান। ৫ টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে রীতিমত ৫২ টি ফিফটি। বল হাতেও আছে ১৪৬ টি উইকেট। ইকোনমিও দারুণ, ৭.৬৭। সকল ফরম্যাট চিন্তা করলে সাকিব আল হাসান শুধুমাত্র বাংলাদেশই না, ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন। ৪০৫ টি টি-টুয়েন্টি খেলে রান করেছেন ৬৮১৬ এবং উইকেট নিয়েছেন ৪৫৫ টি। স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স এই স্পিনার টি-টুয়েন্টির টপ ফাইভ উইকেট টেকারদের মধ্যে একজন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথা চিন্তা করলে তার উপরে নেই কেউই।
ক্যারিবিয়ান ডিজে ব্রাভো চমৎকার
একজন ক্রিকেটারের পাশাপাশি একজন এন্টারটেইনারও। টি-টুয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের
মালিক এই ব্রাভোই। মূলত দারুণ পেইস ভ্যারিয়েশন, স্লোয়ার এবং চমৎকার ডেথ বোলিং এর
কারণে বিখ্যাত তিনি। ৫৫৮ ম্যাচ খেলে ঝুলিতে ভরেছেন ৬১৫ টি উইকেট। এছাড়াও রানও আছে
৬৮৯৬ টি। ১২৬ স্ট্রাইক রেটও খারাপ না।
আফগান অলরাউন্ডার রশিদ খানকে বলা হয় ‘মডার্ন ডে শেন ওয়ার্ন’। ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ার্নের পরে সবচেয়ে ইফেক্টিভ ও কন্সিস্টেন্ট লেগ স্পিনার ধরা হয় তাকে। পেইস, টার্ন এবং দারুণ গুগলির সমন্বয়ে তার বলে ব্যাটিং করা খুবই কঠিন কাজ। মাত্র আট বছরের ক্যারিয়ারেই চলে এসেছেন টি-টুয়েন্টির টপ উইকেট টেকারের তালিকায় দুই নম্বরে! ৪১০ ম্যাচে নিয়েছেন ৫৫৬ উইকেট! মাত্র ১৮.৩০ অ্যাভারেজ এবং ৬.৪৫ ইকোনমিটাও চোখ কপালে তোলার মতোই। এখনো ক্যারিয়ারের পরে আছে অনেকটা পথ। নিজেকে যে কোন উচ্চতায় নিয়ে থামবেন তিনি সেটাই এখন দেখার বিষয়। দুর্বোধ্য বোলিং এর পাশাপাশি শেষ দিকে এসে পাওয়ার হিটিং এও দারুণ এই আফগানি। ১৪৫ স্ট্রাইক রেট যেন তারই প্রমাণ।
পেসারঃ লাসিথ মালিঙ্গা এবং জাসপ্রিত বুমরা
আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে দুর্বোধ্য পেইস বোলার কে? এই প্রশ্নের উত্তরে বেশিরভাগই সম্ভবত বলবেন শ্রীলঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গার নাম। ভয়ংকর বোলিং অ্যাকশন, ডেথ ওভারে মারাত্মক বোলিং এবং বলে-কয়ে দুর্ধর্ষ ইয়র্কার দিতে পারার জন্যই মূলত তিনি পরিচিত। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ২৯৫ ম্যাচে বোলিং করে ৩৯০ বার সাজঘরে ফিরিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের। ১৯ অ্যাভারেজ এবং ৭ ইকোনমিটাও অন্য যে কোন বোলারের জন্য ইর্ষনীয়। বর্তমান ক্রিকেটের সেরা পেসারদের একজন ধরা হয় জাসপ্রিত বুমরাকে। ডেথ ওভার বোলিং-এ বর্তমানে তাকেই সেরা ধরা হয়। একটানা ইফেক্টিভ ইয়র্কার দিয়ে যেতে পারেন তিনি। ভারতীয় এই পেসার এখনো পর্যন্ত ২১০ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২৫৬ টি উইকেট। মালিঙ্গার মতো তার ইকোনমিও ৭ হলেও বোলিং অ্যাভারেজটা দুই বেশি অর্থাৎ ২১।