যে দেশে জেল পালালে কোন শাস্তি নেই | Germany Weird Laws

Author
0


জার্মানির নাম শুনলে প্রথমেই আমাদের মাথায় হিটলারের চেহারা ভেসে ওঠে। একাই পৃথিবীর ইতিহাস ঘুরিয়ে দিয়েছিল যেই খ্যাপাটে শাসক। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের পতনের পরে সম্পূর্ণ বদলে গেছে জার্মানি। তবে এখনো তাদের দেশে রয়েছে অদ্ভুত কিছু রীতি-নীতি। চলুন দেখে নেওয়া যাক জার্মানির ব্যাপারে ১৫ টি অদ্ভুত ও অজানা তথ্য।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



নাম্বার ফিফটিন – ঘরের পাশে কবর দেওয়া নিষিদ্ধ

কেউ মারা গেলে ঘরের আশেপাশে তার কবর দেওয়া জার্মানিতে নিষিদ্ধ। মৃত ব্যক্তির সমাধি ডেজিগনেটেড কোন জায়গাতেই রাখতে হবে। মূলত হাইজেনিক কারণেই এই নিয়ম করা হয়েছে। যদিও এই নিয়ম ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। ব্রেমেন শহরেই ২০১৫ এর পর থেকে এই নিয়ম তুলে দেওয়া হয়েছে।




নাম্বার ফোর্টিন – ফুয়েল শেষ হয়ে যাওয়া ইললিগাল

জার্মানির একটি নিয়ম রীতিমত ওয়ার্ল্ড ফেমাস। সেটি হচ্ছে তাদের হাইওয়েতে কোন স্পিড লিমিট নেই। তাই রাস্তায় হুট করে ফুয়েল শেষ হয়ে যাওয়াটাও নিষিদ্ধ জার্মানিতে। গাড়ি চালানোর আগে ভালোভাবে ফুয়েল চেক করা বাধ্যতামূলক। খুবই সিরিয়াস কোন কারণ ছাড়া তাই হাইওয়েতে গাড়ি থামানো নিষিদ্ধ। ফুয়েল শেষ হয়ে গেলে সেই চালকের কপালে রীতিমত শনি আছে।


নাম্বার থার্টিন – বিভিন্ন রকমের ময়লার জন্য আলাদা আলাদা ডাস্টবিন

জার্মানির শহরগুলোতে প্লাস্টিক, কাগজ, কাঁচ, পচনশীল আবর্জনা এমনকি কাপড় ফেলার জন্যেও আলাদা আলাদা ডাস্টবিনের ব্যবস্থা আছে। এগুলো চেনার জন্যে আলাদা আলাদা রং দিয়ে চিহ্ন দেওয়া আছে। জার্মানরা পরিবেশের ব্যাপারে খুবই সচেতন। যাতে করে রিসাইক্লিং করা যায়, তাই ময়লার জন্যে আলাদা আলাদা ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করেছে তারা।


নাম্বার টুয়েলভ – সাইকেল ও হাটার জন্য আলাদা রাস্তা

জার্মানির বেশিরভাগ রাস্তায় গাড়ি, সাইকেল ও পথচারীদের যাতায়াতের জন্য আলাদা লেন করা আছে। এই ব্যাপারে তাদের আইন বেশ কড়া। হাটার রাস্তায় কেউ না থাকলেও কেউ চাইলেই সেখান দিয়ে সাইকেল চালাতে পারবে না। আবার গাড়ি কিংবা সাইকেলের রাস্তায় হাটাও নিষিদ্ধ।


নাম্বার ইলেভেন - জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করা বৈধ

অদ্ভুত হলেও সত্যি, জার্মানিতে কয়েদিরা চাইলে জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করতে পারবে। পালানোর সময় ধরা পড়লে সেজন্য তাদের এক্সট্রা কোনো শাস্তি দেওয়া হবে না। এটিকে তাদের মানবিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে সেই কয়েদি যদি পালাতে গিয়ে কোন মানুষ কিংবা জেলের কোন সম্পদের ক্ষতি করে অথবা নতুন করে কোন অপরাধ করে বসে, তাহলে তাকে এক্সট্রা শাস্তি পেতে হবে।


নাম্বার টেন - সিগারেট খাওয়া নিষেধ, কিন্তু ১৬ বছর হলেই খাওয়া যাবে মদ!

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই ১৮ বছর হলেই আপনাকে অ্যাডাল্ট হিসেবে বিবেচনা করা হবে। চাইলে করতে পারবেন মদ্যপান সহ আরো অনেক কিছুই। তবে জার্মানিতে ১৬ বছর হলেই খাওয়া যায় মদ। জার্মানিতে এটি খুবই জনপ্রিয় ও কমন একটি কালচার।

মদ্যপান অ্যালাউড হলেও জার্মানিতে সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ। ওপেন প্লেসে সিগারেট খেলে গুনতে হতে পারে ৫ ইউরো থেকে শুরু করে ১৫০০ ইউরো পর্যন্ত। তবে কয়েকটি শহরে ক্লাব, বার ও রেস্টুরেন্টগুলোতে রয়েছে স্মোকারদের জন্য আলাদা স্মোকিং জোন। সেখানে ১৮ বছরের কম বয়সী কাউকে অ্যালাউ করা হয় না।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে ইউরোপের সবথেকে কম টোবাকো ট্যাক্স জার্মানিতে। তাই একে স্মোকারদের স্বর্গও বলা হয়। এমনকি পুরো পৃথিবীতে সবথেকে বেশি সিগারেট ভেন্ডিং মেশিনও জার্মানিতেই অবস্থিত।


নাম্বার নাইন - জার্মানিতে পাওয়া যায় ১০০০ রকমের সসেজ।

জার্মানরা বিয়ারের মতোই সসেজ খুবই পছন্দ করে। সেখানে প্রায় হাজার রকমের সসেজ পাওয়া যায়। এরমধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হচ্ছে Bratwurst (ব্র্যাটওয়ার্স্ট), Weisswurst (ওয়েইজওয়ার্স্ট), Blutwurst, Knackwurst (ন্যাকওয়ার্স্ট), Frankfurter Würstchen (ফ্র্যাঙ্কফুর্টার ওয়ার্স্টশেন), Currywurst ও Leberwurst.


নাম্বার এইট - সবথেকে জনপ্রিয় নাম মুলার

জার্মানির দুই ফুটবল লেজেন্ড গার্ড মুলার ও থমাস মুলারকে তো সকলেই চেনেন। এই ‘মুলার’ সারনেমটিই জার্মানিতে সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। সেখানে ৯ লাখেরও বেশি মানুষের নাম মুলার। যা দেশটির জনসংখ্যার ১০%।


নাম্বার সেভেন – হাইওয়েতে নেই স্পিড লিমিট

জার্মানির হাইওয়েতে আপনি যত খুশি তত স্পিডে গাড়ি চালাতে পারবেন। এতে করে গুণতে হবে না কোনো জরিমানা। তাদের রাস্তাগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, আপনি যত স্পিডেই গাড়ি চালান না কেন, দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভবনা কম।


নাম্বার সিক্স – তাদের অন্যতম প্রিয় খাবার রুটি

মিডেলইস্টের মতোই জার্মানরাও রুটি প্রিয় জাতি। তবে তাদের রুটিগুলো হয় একটু আলাদা ধরণের। পাউরুটি কিংবা কেকের মতো করে তৈরি হয় রুটিগুলো। জার্মানিতে প্রায় ৩০০ ধরণেরও বেশি রুটি রয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হচ্ছে Brötchen (ব্রশেন), Roggenmischbrot (রজেনমিশব্রট), Vollkornbrot (ভলকর্নব্রট), Toastbrot ও Pretzel। এছাড়াও পেস্ট্রি ও কেক রয়েছে প্রায় ১২০০ ধরণের। তাই বলাই যায়, মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য জার্মানি রীতিমত স্বর্গরাজ্য।


নাম্বার ফাইভ – অক্টোবারফেস্ট

জার্মানির জনপ্রিয় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অক্টোবারফেস্ট। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিয়ার উৎসব। অক্টোবারফেস্ট নাম হলেও এই উৎসব শুরু হয় সেপ্টেম্বরে। এই উৎসবের সময়ে আনলিমিটেড বিয়ার ও ওয়াইন খাওয়া হয়। এছাড়াও নাচ, গান, আনন্দ র‌্যালি সহ আরও অনেক প্রোগ্রাম হয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এই সময়ে জার্মানিতে ফেস্ট জয়েন করতে আসে লোকজন।


নাম্বার ফোর – নর্থ ইউরোপের সবথেকে বড় ক্যাথিড্রাল

জার্মানির কলোনে রয়েছে নর্থ ইউরোপের সবচেয়ে বড় গথিক স্টাইল ক্যাথিড্রাল। এটি পুরো পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ক্যাথিড্রাল। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১২৪৮ সালে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে লেগেছে ৬০০ বছরেরও বেশি সময়।


নাম্বার থ্রি – প্রাসাদের দেশ জার্মানি

জার্মানিতে রয়েছে চমৎকার সব প্রাসাদ। প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি প্রাসাদ রয়েছে সমগ্র দেশজুড়ে। ইতিহাসপ্রেমী ট্র্যাভেলারদের জন্য তাই পারফেক্ট জায়গা জার্মানি। জার্মানির বিখ্যাত প্রাসাদগুলি হচ্ছে Neuschwanstein palace (নয়েশভ্যানস্টাইন), Hohenzollern palace, Schwerin palace (শোয়েরিন), Heidelberg Castle, Wartburg Castle, Marburg Castle।


নাম্বার টু - হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমার দেশ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৭৮ বছর পরেও এখনো জার্মানিতে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার টনেরও বেশি অবিস্ফোরিত পারমাণবিক বোমা আবিষ্কৃত হয়। তাই তাদের বম্ব স্কোয়াডকে পৃথিবীর অন্য সব দেশের তুলনায় অনেক বেশি অ্যাকটিভ থাকতে হয়। ২০১৩ সালে ডর্টমুন্ডে ৪০০০ পাউন্ডের একটি বোমা খুঁজে পেয়েছিল জার্মানরা। সেকারণে ২০০ এরও বেশি মানুষকে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল।


নাম্বার ওয়ান - স্পিকারে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ!

জার্মানির মসজিদগুলোতে আযান দেয়া নিষিদ্ধ। তারা একে শব্দ দূষণ হিসেবে কাউন্ট করে। তবে সম্প্রতি কলোনের সেন্ট্রাল মসজিদে শুধুমাত্র শুক্রবার লাউডস্পিকারে আজান দেওয়া অ্যালাউ করা হয়েছে। আজান দেওয়া নিষিদ্ধ হলেও গির্জার ঘন্টার ব্যপারে তাদের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। যদিও জার্মান মানুষজন আজানের প্রতি রেস্পেক্টফুল। একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল যেখানে দেখা যায়, কয়েকজন মিলে রাস্তায় গান-বাজনা করছে। পাশেই মসজিদ থেকে আজানের শব্দ এলে তারা থেমে গিয়ে আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। সোশ্যাল মিডিয়াতে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে সেই ভিডিওটি।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!