পুতিনের বিরোধিতা করাই কাল হলো যাদের! || Vladimir Putin || Russian President

Author
0

বিশ্ব রাজনীতির খবর রাখে, অথচ পুতিনকে চেনে না...এমন মানুষ মনে হয় না দুনিয়ায় কেউ আছে। তবে তার শুরুটা কিন্তু ডিরেক্ট পলিটিক্স দিয়ে না। তিনি ছিলেন কেজিবির একজন ইন্টেলিজেন্স অফিসার। এরপর সিকিউরিটি সার্ভিস সেক্রেটারি থেকে প্রাইম মিনিস্টার এবং প্রাইম মিনিস্টার থেকে প্রেসিডেন্ট। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দুনিয়ার অন্যতম পাওয়ারফুল একজন মানুষ হিসেবে। তবে সেই পথে অনেকেই তার বিরোধিতাও করেছে। রহস্যজনকভাবে তাদের বেশিরভাগই মারা গেছে অকালেই। তার পেছনে পুতিনের যে হাত ছিল তা বোঝা গেলেও, পলিটিকালি ঠিকই কারেক্ট ছিলেন তিনি।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



নাম্বার ফোর - আলেকজান্ডার লিটভিনেঙ্কো

রাশিয়ার এফএসবি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে তিনি যোগ দেন কেজিবির কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগে। শীঘ্রই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসে। সেখানে দায়িত্ব পান সন্ত্রাসবাদ ও সংঘবদ্ধ অপরাধের দমনের। এই বিভাগে কাজ করতে গিয়ে তাকে রাশিয়ার বিভিন্ন হটস্পটগুলোতে দায়িত্ব দেয়া হয়, পেয়েছেন বিভিন্ন পদকও।

যাই হোক, পুতিন যখন এফএসবির ডিরেক্টর ছিলেন, সেই সময়ের উজবেক ড্রাগ ব্যারন সহ আরো বিভিন্ন কেসে এফএসবির করাপশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন লিটভিনেঙ্কো। একই বছর বরিস বেরেজভস্কি দাবি করেন, তাকে খুন করার জন্য এফএসবি লোক লাগিয়েছে। সেই সময় লিটভিনেঙ্কো ও এফএসবির কয়েকজন কর্মকর্তা মুখ ঢেকে প্রেস কনফারেন্স করে তা স্বীকারও করেন। এরপরেই পুতিন চটে যান তার উপরে। লিটভিনেঙ্কোকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও সেখান থেকে তিনি পালিয়েছিলেন। আশ্রয় নেন লন্ডনে। সেখানে তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা MI6-এর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই সময়ে পাবলিশ হওয়া দুটি বইয়ে তিনি চেচেন যুদ্ধে রাশিয়ার কন্সপিরেসি তুলে ধরেন এবং আল কায়েদাদের প্রশিক্ষণে রাশিয়ার হাত আছে বলে দাবী করেন। যা ছিল পুতিন ও রুশ পলিটিক্সের উপরে এক জোড়ালো আঘাত। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। পুতিনের নির্দেশে কেজিবির এজেন্ট আন্দ্রেই লুগোভয় এবং দিমিত্রি কোভতুন তাকে চায়ের সাথে পোলনিয়াম ২১০ বিষ খাইয়ে খুন করে।


নাম্বার থ্রি - আনা পলিটকভস্কায়া

ইউক্রেনিয়ান ডিপ্লোম্যাট বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম ও নিউইয়র্কে বেঁড়ে ওঠা আনার। তবে স্কুল শেষে চলে আসেন রাশিয়াতে। মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে জয়েন করেন ইজভেস্তিয়া নামক একটি পত্রিকায়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভাঙবে ভাঙবে ভাব, সেই সময়ে পত্রিকার উপর থেকে সেন্সরশীপ কমে গিয়েছিলো। সেই সময় তিনি কাজ করতেন প্রো-ডেমোক্রেটিক নিউজপেপার অবজায়া গ্যাজেটাতে। সেই সময় তার রিপোর্টের কারণেই ইয়েলেতসিন চেচনিয়া থেকে মিলিটারি বেইজ তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল। পরে পুতিন ক্ষমতায় এসে আবারও সেখানে সেনা মোতায়েন করে। কিন্তু আনা ছিলেন তুমুল সাহসী এক সাংবাদিক। তিনি পুতিনের আসল উদ্দেশ্য ফাঁস করে দেন। ফলস্বরূপ যুদ্ধ লেগে যায় চেচনিয়া ও রাশিয়ান আর্মির মধ্যে। তার পর যা হওয়ার, তাই হয়েছে। তাকেও চায়ে বিষ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেবারে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। ২০০৬ সালে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। প্রথমে যার কথা বললান, লিটভিনেঙ্কো...তিনিই আনার কেসের তদন্ত করেছিলেন। সেখানেই বের হয়ে আসে এফএসবির হাত।


নাম্বার টু - বরিস নেমতসভ

বরিস ছিলেন একজন ফিজিসিস্ট ও পলিটিশিয়ান। রাজনৈতিক দিক থেকে বেশ উদার মনোভাব রাখতেন তিনি। একইসাথে ছিলেন পুতিনের একজন কট্টর সমালোচক।

যাই হোক, মাত্র ৩২ বছর বয়সে গভর্নর হয়েছিলেন তিনি। সেখানে তার কাজ ব্যাপক প্রশংসা পায়। এতে করে সোজা হয়ে যান ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার। ইয়েলেতসিনের পরে তারই হওয়ার কথা ছিল প্রেসিডেন্ট। কিন্তু সেই জায়গা দখল করে বসেন পুতিন। তিনি হয়ে যান পুতিনের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। ইউক্রেনের অরেঞ্জ মুভমেন্টের সময় পুতিনের ইউক্রেন অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলেরও সমালোচনা করেন তিনি। ধীরে ধীরে জায়গা পান পুতিনের টার্গেট লিস্টে। ২০১৫ সালে মস্কোতে তার ইউক্রেনিয়ান গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডিনার শেষ করে হাটছিলেন তিনি। সেই সময় পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। তখন চেচেন কন্ট্রাক্ট কিলারদের উপরে দায় চাপানো হয়। যদিও সামাঝদাররা বুঝে গিয়েছিলেন এর পেছনে হাত আসলে কার।


নাম্বার ওয়ান - ইয়েভজেনি প্রিগোজিন

পুতিনের মোস্ট রিসেন্ট শিকার ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। তিনি ছিলেন ওয়াগমার গ্রুপের ফাউন্ডিং লিডার। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রিগোজিন ও ওয়াগমার গ্রুপের শুরুটা পুতিনের হাত ধরেই। তার পক্ষেই কাজ করতো তারা। ইউক্রেনের ভেতরে রাশিয়ার মিলিটারি পাওয়ার হিসেবে কাজ করতো তারা। বর্তমানে চলমান যুদ্ধেও তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলো পুতিনের পক্ষে। কিন্তু জুন মাসে ঘটে এক মিরাকেল। প্রিগোজিন রীতিমত বিদ্রোহ করে বসেন পুতিনের উপরে। ওয়ার্ল্ড পলিটিক্সে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন তিনি। সবাই ভাবতে থাকে, এবার বুঝি পুতিনের আসন টলিয়ে দেবে প্রিগোজিন। কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও হয়নি। এক সময় বিদ্রোহ বন্ধের ঘোষণা দেয় প্রিগোজিন। কিন্তু পুতিন বুঝে গিয়েছিলো ওকে আর ভরসা করার সুযোগ নেই। প্রিগোজিনকে বেলারুশে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয় সে। আগষ্টের ২৩ তারিখ এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান প্রিগোজিন। ইভেন মারা যাওয়ার আগে তিনি জীবন নিয়ে ভয়ে আছেন জানিয়ে একটি ভিডিও বার্তাও প্রকাশ করেছিলেন। ধারণা করা হয় এই বিমান দুর্ঘটনাটি আসলে সাজানো প্ল্যান ছিল, যার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন পুতিন।


অনারেবল মেনশন

এছাড়াও সের্গেই ম্যাগনিটস্কি, নাটালিয়া এস্তেমিরোভা, স্ট্যানিস্লাভ মার্কেলভ, আনাস্তাসিয়া বাবুরোভা, সের্গেই ইউশেনকভ, সের্গেই স্ক্রিপাল, ইউলিয়া স্ক্রিপাল এবং বরিস বেরেজভস্কির মার্ডারেও রাশিয়ান গভমেন্টের হাত ছিল বলে ধারণা করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারা সকলেই ছিলেন পুতিনের বিরাট সমালোচক!

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!