বর্তমানে হরতাল ও অবরোধে দেশের অবস্থা টালমাটাল। প্রায় প্রতিদিনই থাকছে অবরোধ কিংবা হরতাল। আয়োজনে বিএনপি, জামাতের মতো প্রধান বিরোধী দলগুলো। হরতাল ও অবরোধের মধ্যে পার্থক্য কী - এই প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে চলে আসে। এই ব্যাপারেই আলোচনা করবো আজ। তো চলুন শুরু করা যাক।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
রাজনীতির বিভিন্ন টার্মসের সাথে পরিচিত থাকলেও অনেকেই হরতাল ও অবরোধের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারেন না। বেশিরভাগ দিক দিয়েই মিল থাকলেও কিছু বেসিক পার্থক্য আছে।
হরতাল হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন। এক কথায় সব কিছু অচল করে দেওয়ার কর্মসূচি হচ্ছে হরতাল। নরমালি হরতালের সময় সব ধরণের অফিস, আদালত ও দোকানপাট বন্ধ থাকে। তবে সাধারণত অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও মিডিয়া অফিসগুলো সেই আওতার বাইরে থাকে।
এবারে হরতালের ইতিহাসটা একটু ঘেটে দেখা যাক। হরতাল মূলত গুজরাটি শব্দ। 'হর' মানে সব জায়গায় আর 'তাল' মানে তালা। অর্থাৎ হরতাল মানে সব জায়গায় তালা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী হরতালের রীতি চালু করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলনের সময়ে 'তমুদ্দিন মজলিস' প্রথম হরতাল ডাকার পর থেকেই মূলত এই দেশের রাজনীতিতে হরতাল বেশ প্রচলিত একটি কর্মসূচি হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, কোনো দাবি আদায়ের বিশেষ একটি ব্যবস্থা হচ্ছে অবরোধ। এই সময়ে মানুষজনকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে কর্মসূচি চলাকালে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ করে রাখা হবে। পরিবহন চলতে দেওয়া হবে না। যার ফলে মানুষজন বাইরে বের হয় না। অবরোধ কর্মসূচি মেনে নিতে অনেকটাই বাধ্য হয়। অবরোধের ঘটনা ইতিহাসজুড়ে বিভিন্ন সময়েই দেখা গেছে। গ্রিক মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডেসিতে ট্রয় নগরী অবরোধের কথা আছে। থার্ড ক্রুসেডের আগে ১১৮৭ সালে সালাউদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম অবরোধ করেছিলেন।
এখন কথা হচ্ছে, হরতাল ও অবরোধের মধ্যে কোনটার তাৎপর্য বেশি। যদিও বাংলাদেশে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি প্রায় একইরকম হয়ে থাকে। তবে লোকজনের জমায়েতেই মূলত প্রধান পার্থক্য দেখা যায়। হরতালে জমায়েতের গুরুত্ব কম। তবে অবরোধে জমায়েত না হলে, কার্যক্রমের ভ্যালিডিটি থাকে না।
পলিটিকালি চিন্তা করলে হরতালের ইমপ্যাক্টটাই বেশি। পলিটিকালি যে কোনো দাবী আদায়ের জন্য এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের কর্মসূচি। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির দিক চিন্তা করলে অবরোধকে কিছুটা বেশি মার্ক দেওয়া যেতে পারে। কারণ হরতালে সাধারণত কেউ রিস্ক নিয়ে বাইরে বের হয় না। এডুকেশনাল ইন্সটিটিউট, অফিস কিংবা ব্যবসার কাজও অফ থাকে। কিন্তু অবরোধে তা না থাকায়, মানুষজনকে ঠিকই ভয়ে ভয়ে বের হতে হয়। দূর-দুরান্তে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাই ঝুঁকি নেওয়া লাগে।