সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ববিতাকে কলকাতায় ডাকা হয়। সামনাসামনি কড়া মেকাপে ববিতাকে দেখে সত্যজিৎ রায় তাকে জানান যে, তিনি ববিতাকে ন্যাচারাল লুকে দেখতে চান। এরপর যখন ববিতা মেকাপ ছাড়া সত্যজিৎ রায়ের সামনে এলেন, তখন ববিতা ছিলো ভিষণ নার্ভাস। তাকে সিনেমায় নেবে কি নেবে না, এটা ভাবতে ভাবতেই সত্যজিৎ রায় জানিয়ে দেয় যে, ববিতা তার সিনেমার জন্য সিলেক্টেড।
ববিতা এমনই একজন অভিনেত্রী, যিনি তার অভিনয়ের জন্য পরপর ৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়ে হ্যাট্রিক করেন। যা চলচ্চিত্র জগতে বিরল।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে সত্তরের দশকে তরুণদের স্বপ্নের নারী আর তরুণীদের আইকন হয়ে যান নায়িকা ববিতা। অনবদ্য অভিনয় দিয়ে জয় করে নেন দর্শক মন। ববিতা আসলে ভিন্ন ধারার গল্পের সাথে সাথে ভিন্ন ধারার চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে বদলে ফেলতে পারতেন। আর এটাই ছিলো তার অন্যতম একটা গুণ। ৭০ এর দশকে তার অভিনীত আবার তোরা মানুষ হ, আলোর মিছিল, সুন্দরী, গোলাপী এখন ট্রেনে এগুলো ছিলো অন্যতম কাজলজয়ী সিনেমা।
ববিতার ক্যারিয়ারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি সিনেমা হলো ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অশনি সংকেত’। এই সিনেমাটির পেছনে বেশ বড় ও ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা আছে। এই সিনেমার “অনঙ্গ বউ” চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সত্যজিৎ রায় একটা নতুন মুখ খুঁজছিলেন। খুঁজতে খুঁজতে তিনি বাংলাদেশের নায়িকা ববিতার খোঁজ পান। এরপর তিনি তার ক্যামেরাম্যান ‘নিমাই ঘোষ’কে পাঠান ববিতার কিছু ছবি তুলে আনার জন্য। নিমাই ঘোষ ঢাকার এফডিসিতে এসে ববিতার প্রায় দেড়শ থেক দু’শটি ছবি তুলে নিয়ে যান। এর কিছুদিন পর সত্যজিৎ রায়ের চিঠি পেয়ে ববিতা ও সুচন্দা চলে যান ভারতে। সেখানে সত্যজিৎ রায় পুনরায় একবার ববিতার স্ক্রিন টেস্ট নেন। আর সেখানেই সত্যজিতের চোখে পার্ফেক্ট হয়ে ফুটে ওঠেন নায়িকা ববিতা। তবে নায়িকা ববিতা কিছুটা কনফিউজড ছিলেন যে তাকে সিনেমায় নেওয়া হবে কিনা! এ নিয়ে ববিতা বলেন, “একজন অল্পবয়সী বাঙালী যা করে- ভেতরে ভেতরে অনেক মানত-টানত করে শেষে জানলাম, আই ওয়াজ সিলেক্টেড ফর দেয়ার মুভি”।
বাংলাদেশের প্রথম সিক্যুয়াল সিনেমা “সূর্যগ্রহন” ও “সূর্য সংগ্রাম” সিনেমায় অভিনয় করেন ববিতা। একই সাথে সেই সিনেমায় ছিলেন সেসময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক “জাফর ইকবাল”। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জাফর-ববিতা জুটি বেশ আলোচিত। এই জুটির মোট ৩০ টির মতো সিনেমা আছে।
আসলে বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে “ববিতা” একটি উজ্জ্বল নাম। যদিও সত্তর থেকে আশির সময়টাই ছিলো তার সোনালী সময়। নব্বইতে যখন তিনি নায়িকা চরিত্র ছেড়ে সাইড কিছু চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন, তখন তার সেসব অভিনয় দর্শক মনকে ততটা আন্দোলিত করতে পারেনি। সিনেমায় কান্নার দৃশ্যে ববিতার নিজস্ব একটা সাইন আছে। চুলগুলো দু’হাতে আকড়ে ধরে বিকট সেই চিৎকার যেন আকাশ বাতাস তোলপাড় করে ফেলে।