গার্লফ্রেন্ডের মুড সুইং নিয়ে অনেককেই কথা বলতে শোনা যায়। সেই মুড সুইং কোন মানসিক ব্যাধি না। কিন্তু মুড সুইং এক্সট্রিম আকার ধারণ করে মারাত্মক এক ডিজঅর্ডারে রূপ নিতে পারে। ডেঞ্জারাস সেই মানসিক রোগের নাম বাইপোলার ডিজঅর্ডার। আজকের আলোচনা করবো বাইপোলার ডিজঅর্ডার নিয়ে। চলুন শুরু করা যাক।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
বাইপোলার ডিজঅর্ডার কি?
বাইপোলার শব্দের অর্থ দুই মেরু। মানুষের মানসিক অবস্থার দুটি বিপরীত দিক যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে কি পাই? এক্সট্রিম হ্যাপিনেস এবং ডিপ্রেশন। বাইপোলার ডিজঅর্ডার জিনিসটা এক্স্যাক্টলি তাই। এই রোগে আক্রান্ত মানুষ মুহুর্তেই দারুণ খুশি হয়ে যায়, আবার মুহুর্তেই সেই আনন্দ রূপ নেয় এক্সট্রিম ডিপ্রেশনে। প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়ার পরেই সবথেকে জটিলতম মানসিক রোগ বলা হয় একে।
বাইপোলার কেন হয়?
বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জেনেটিক ফ্যাক্টর। অর্থাৎ, বাবা-মা কিংবা ভাইবোনদের কারো বাইপোলার থাকলে, তাহলে আপনারও হতে পারে। অনেকটা ডায়াবেটিকসের মতো।
আবার অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও এই রোগ হতে পারে। পার্সোনাল লাইফ, ডিসফাংশনাল ফ্যামিলি কিংবা প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে তৈরি হওয়া এক্সট্রিম ডিপ্রেশন থেকে বাইপোলার ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আবার ড্রাগসের ওভারডোজের কারণেও বাইপোলার হতে পারে।
বাইপোলার সিম্পটমস
বাইপোলারের যেহেতু দুটি বিপরীত রিঅ্যাকশন আছে। তাই সিম্পটমগুলোও দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে ম্যানিয়া পর্যায়ের সিম্পটম, অন্যটি ডিপ্রেশন পর্যায়ের সিম্পটম।
ম্যানিয়া স্টেজের সিম্পটম
- সব সময় বিভিন্ন রকমের চিন্তায় মগ্ন থাকা
- অতিরিক্ত পরিমাণে আবেগী হয়ে যাওয়া
- অরিতিক্ত কথা বলা এবং বাকিদের কথায় বাঁধা দেওয়া
- এক টপিকে কথা বলতে বলতে হুটহাট অন্য টপিকে চলে যাওয়া
- সব কাজে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখানো এবং অযথাই নিজেকে এক্সপার্ট দাবী করা
সময়মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে, ম্যানিয়া স্টেজ ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত চলতে পারে। এই সময়ে বাইপোলার ব্যক্তির পার্সোনালিটি ও বিবেক কম কাজ করে। এই কারণে অনেক ডেঞ্জারাস কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে সে।
ডিপ্রেশন স্টেজের সিম্পটম
ডিপ্রেশন স্টেজের সিম্পটমগুলো ম্যানিয়া স্টেজ থেকে একদমই উল্টো।
- এক্সট্রিম লেভেলের ডিপ্রেশন তৈরি হওয়া
- যে কোন নরমাল কাজ করতে গিয়েও আতঙ্কিত হয়ে পড়া
- দুনিয়ার সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করে অপরাধবোধে ভোগা
- সেক্স অ্যাপিল কমে যাওয়া
- সুইসাইডাল হয়ে যাওয়া
ডিপ্রেশন স্টেজ এক্সট্রিম লেভেলে চলে গেলে সেটা ২ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বেশিই এক্সট্রিম লেভেলে চলে গেলে রোগী সুইসাইড করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
বাংলাদেশে বাইপোলারের অবস্থা কি?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিসার্চে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রতি ১০০০ জন মানুষের মধ্যে ৪ জন বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছেন।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী এক তরুণী ভার্সিটি লাইফ থেকেই বাইপোলার রোগে ভুগতে শুরু করেছিলেন। সেই সময় তিনি দিনের পর দিন ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকতেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘরের বাইরে বের হতেন না। ফ্যামিলি মেম্বার, রিলেটিভস - কারো সাথেই কথা বলতেন না। ঠিকমতো খাবার খেতেও ইচ্ছা করতো না।
আবার কিছুদিন পরেই সেই একই মানুষ একেবারে উল্টো আচরণ করতে শুরু করতেন। তখন বাসায় পার্টি করা, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া শুরু হয়। ইচ্ছামতো দরকারি-অদরকারি জিনিসপত্র কিনতে শুরু করেন। রাতে ঘুমাতেন না, টাকা পয়সার খরচে কোন হিসাব থাকতো না।
তার ফ্যামিলি মেম্বাররা প্রথমে ভেবেছিল, তিনি হয়তো ড্রাগ অ্যাডিক্ট হয়ে পড়েছেন। সেটা হননি বোঝার পর তারা তাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যান। তখন জানা যায় তিনি আসলে বাইপোলার আক্রান্ত।
বাইপোলার ডিজঅর্ডারের ট্রিটমেন্ট
বাইপোলার আক্রান্ত রোগির ট্রিটমেন্ট দেওয়াটা বেশ জটিল। কারণ রোগি নিজে বুঝতে পারে না অথবা মেনে নিতে পারে না যে সে আসলে কোন ডেঞ্জারাস রোগে আক্রান্ত। একারণে তার ফ্যামিলি মেম্বার কিংবা ক্লোজ সার্কেলের এই ব্যাপারে সচেতন থাকা খুবই জরুরী। এছাড়াও সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য যত দ্রুত নেওয়া যাবে পেশেন্টের জন্য সেটা ততটাই ভালো।
বাইপোলার আক্রান্ত বিখ্যাত ব্যক্তি
অনেক বিখ্যাত মানুষজন বাইপোলার ডিজঅর্ডার আক্রান্ত ছিলেন। যেমন – বিজ্ঞানি আইজ্যাক নিউটন, পেইন্টার ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, রাইটার আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, অ্যাডগার অ্যালান পো, ভার্জিনিয়া উলফ, স্কট ফিটজেরাল্ডের ওয়াইফ জেল্ডা ফিটজেরাল্ড, ডিরেক্টর ফ্র্যান্সিস ফোর্ড কোপোলা, অ্যাক্টর রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, মেল গিবসন, জন-ক্লদ ভ্যান ড্যাম, ক্যাথরিন জেটা-জোনস, রাসেল ব্র্যান্ড, সুশান্ত সিং রাজপুত, সিঙ্গার ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা, ব্রিটনি স্পিয়ার্স, সেলিনা গোমেজ, ডেমি লোভাটো, কেনইয়ে ওয়েস্ট, ইয়ো ইয়ো হানি সিং।