ধরুন আপনি ব্যাপক ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসে আছেন। ঐদিকে খুবই
ইম্পর্ট্যান্ট একটি অফিশিয়াল মিটিং এর জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে। এরকম সিচুয়েশনে আপনি
কি করবেন?
হয়তো দেশের ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম অথবা বাস ড্রাইভারকে গালাগালি করবেন। অথবা নেমে হাটা শুরু করবেন। কিন্তু আপনার জায়গায় স্টোইসিজমে বিশ্বাসী একজন মানুষ হলে কি করতো জানেন? তার আগে দেখে নেওয়া যাক স্টোইসিজম জিনিসটা আসলে কি!
স্টোইসিজম হচ্ছে প্রাচীন গ্রিসের একটি দর্শন। এর জন্ম
হয়েছিল আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট মারা যাবার পরপর। সেই সময় মানুষজনের পলিটিকাল ও
সোশ্যাল লাইফে বিশাল এক পরিবর্তন দেখা দেয়। এছাড়াও সেই সময়কার লেখক ও দার্শনিকরা
যুদ্ধ, বিদ্রোহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারীর যুগে বাস করতেন। তখনই স্টোইসিজমের
বেসিক ধারণাগুলো বিকশিত হতে থাকে। তবে স্টোইসিজমের প্রতিষ্ঠাতা মানা হয়
প্রি-সক্রেটিক গ্রিক ফিলোসফার জেনোকে।
অন্যতম প্রধান একজন স্টোইক দার্শিনিক লুসিয়াস অ্যানি
সেনেকা বলেছেন, “আপনি যদি দুনিয়া বদলাতে না পারেন, তাহলে দুনিয়ার প্রতি আপনার
পার্সপেক্টিভ বদলান।” অর্থাৎ, দুনিয়ার দুই রকমের ঘটনা ঘটে। এক, যেগুলো আমরা
কন্ট্রোল করতে পারি। দুই, যেগুলো আমরা কন্ট্রোল করতে পারি না। শান্তি এবং লাইফকে
স্টেবল করার উপায় হচ্ছে দুই নম্বর ঘটনাগুলো থেকে ফোকাস সড়িয়ে এক নম্বর ঘটনাগুলোর
দিকে নেওয়া। দার্শনিক এপিকটেটাস বলেছিলেন, “মানুষ কোন ঘটনার কারণে কষ্ট পায় না,
কষ্ট পায় সেই ঘটনাগুলো নিয়ে ওভারথিংক করতে গিয়ে।”
অর্থাৎ, ধ্বংসাত্মক আবেগকে সেলফ কন্ট্রোল করার জন্য লড়াই
করার পথ দেখায় স্টোইসিজম। এই দর্শনের মূল মন্ত্র হচ্ছে - ‘শান্ত থাকো, চালিয়ে যাও’। শব্দের চেয়েও আচরণ বেশি ইম্পর্ট্যান্ট এই ফিলোসফিতে।
জীবনের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হওয়া, এবং সেগুলোকে সাফল্যে পরিণত করা, একইসাথে যা আমাদের কন্ট্রোলের মধ্যে
আছে তা কন্ট্রোল করা, এবং যা নেই তা মেনে নেওয়াই স্টোইসিজমের নীতিকথা।
এবার শুরুতে যা বলছিলাম তাতে ফেরত যাওয়া যাক। আপনার
জায়গায় যদি ট্রাফিক জ্যামে কোনো স্টোইক ব্যক্তি বসে থাকতো, তাহলে কি করতো ভাবুন
তো। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন সে অবিয়াসলি কোনো ব্যাপারে গালাগালি করতো না, বরং
ধৈর্য ধরে থাকতো। ফার্স্ট অফ অল সে সিচুয়েশনটিকে মেনে নিতো। কারণ দেশের ট্রাফিক
ব্যবস্থা তার কন্ট্রোলে নেই। তার কন্ট্রোলে কি আছে? মিটিং এর জন্য নিজের
অ্যাজেন্ডাগুলো গুছিয়ে নেওয়া, অথবা পার্সোনাল স্কিল বাড়ানো, অথবা বই পড়ার মতো প্রোডাকটিভ
কোনো কাজ করা। একজন স্টোয়িক মানুষ এগুলোর কোন একটিই করতো। স্টোয়িক মানুষজন
ফ্রাস্ট্রেশন নিয়ে পড়ে না থেকে পার্সোনাল গ্রৌথে বেশি ফোকাস করে।
আমাদের ঢাকাই সিনেমার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব জায়েদ খানও
কিন্তু স্টোইক দর্শনে বিশ্বাসী। তার কন্ট্রোলে যা নেই, যেমন অভিনয়, তাতে তিনি কোনো
এফোর্ট দেন না। বরং তার কন্ট্রোলে থাকা মেয়েদের মন এবং ডিগবাজিতেই তিনি সব ধরণের
এফোর্ট দেন। দিনশেষে তিনি কিন্তু সফল।