“এ জীবন কেনো এতো রঙ বদলায়?”
এই কেনোর উত্তরটা দেরী করে হলেও তিনি পেয়েছিলেন হয়তো। বলছিলাম বাংলা সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক জসিমের কথা। পুরো নাম “আবুল খায়ের জসিম”।
সিনেমা জগতে তার প্রবেশ একজন ফাইটিং মাস্টার হিসেবে। স্ট্যান্টম্যানও বলতে পারেন। নায়ক জসিম তার অভিনয় জীবন শুরু করেন ভিলেন চরিত্রে। দর্শক জনপ্রিয়তা তাকে ভিলেন থেকে নায়ক বানিয়ে দেয়। আমার দেখা বাংলা সিনেমায় নায়ক জসিমই সবচেয়ে বেশী দুঃখে জীবন কাটিয়েছেন, প্রচুর পরিমানে লাল পানি খেয়েছেন, কষ্ট করে ছোট ভাইদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, বিনিময়ে পেয়েছেন শুধু ধোকা।
এ ছিলো শ্রেফ পর্দার দৃশ্য। তার অভিনয়ে দর্শক মন কেঁদেছে বহুবার। সেই নায়ক জসিম বর্তমানে বেঁচে নেই। তবে বাংলা সিনেমার দুঃখী এই নায়কের সন্তানেরা কোথায় আছে?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
১৯৯৮ সালের ৮ই অক্টোবর মারা যান নায়ক জসিম। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিলো মাত্র ৪৮ বছর।
নায়ক জসীমের তিন ছেলে। তার হলো- এ কে রাহুল, এ কে রাতুল এবং এ কে সামী।
শৈশবে বাবাকে হারিয়ে মা নাসরিনের কাছেই বেড়ে উঠেছেন তারা। তবে বাবার পথ ধরে অভিনয়ে নাম লেখাননি। তিনজনই ঢুকে গেছেন, সংগীতজগতে।
রাহুল ‘ট্রেনরেক’ নামের এক ব্যান্ডের গিটারিস্ট ও ‘পরাহো’ নামের আরেক ব্যান্ডের ড্রামার হিসেবে যুক্ত আছে।
অন্যদিকে রাতুল ও সামী দুজনেই যুক্ত আছে ‘ওইনড’ নামের এক ব্যান্ডের সঙ্গে। রাতুল হলো ওইনডে’র ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট। আর সামী হলো ঐ ব্যান্ডের ড্রামার।
জার্মানিতে আয়োজিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় হেভি মেটাল উৎসব “ওয়াকেন ওপেন এয়ার ফেস্ট”-এ প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে হেভি মেটাল ব্যান্ড ট্রেইনরেকের সঙ্গে অংশ নেন রাহুল। ২০০৯ সালে গানের জগতে অভিষেক ঘটে ঢাকাই সিনেমার নায়ক জসীমপুত্র রাহুলের।
নায়ক জসিমকে হয়তো আমরা সিনেমার নায়ক হিসেবেই চিনি। কিন্তু তিনি যে দেশেরও একজন নায়ক, তা হয়তো অনেকেই জানে না।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন নায়ক জসিম।
খুব অল্পদিনের মধ্যেই ক্যারিয়ারে বেশ জনপ্রিয় হয়ে যান নায়ক জসিম। সত্তরের দশকে বাংলাদেশের সিনেজগতে অ্যাকশন ধারার অন্যতম প্রবর্তক তিনি।
আজকের অনেক ফাইট ডিরেক্টর ও স্টান্টম্যান ছিলেন নয়ক জসীমের ছাত্র। জসীম অভিনয় শুরু করেন ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ সিনেমার মাধ্যমে। ১৯৭৩ সালে প্রয়াত জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ সিনেমাতে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
এর কয়েক বছর পর সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ সিনেমায় প্রথম নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন জসিম। এই সিনেমায় জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর খলনায়ক হিসেবে আর অভিনয় করেননি তিনি। বরং তিনি শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন পর্দায়।
পুরো ক্যারিয়ারে জসীম প্রায় ২০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। আজকের দিনে এসেও মানুষের মনে গেঁথে আছে নায়ক জসিমের নাম।