রিসেন্টলি পিটসবার্গ, মেম্ফিস এবং
লস অ্যাঞ্জেলেসে বিশাল কিছু বিলবোর্ডে দেখা গেছে অদ্ভুতুড়ে এক লেখা। বার্ডস আরেন্ট
রিয়েল। অর্থাৎ পাখিরা সত্যি নয়! ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকেও ‘বার্ডস আরেন্ট রিয়েল’
নামক অ্যাকাউন্টে মোট ১৩ লাখের মতো ফলোয়ার। এই রিলেটেড বেশ কিছু ইউটিউব ভিডিও-ও
ভাইরাল হয়েছে। বছর খানেক আগে এই থিওরিতে বিশ্বাসী লোকজন এমনকি সান ফ্রান্সিস্কোর
টুইটার হেডকোয়ার্টারের বাইরে তাদের পাখি লোগো চেঞ্জ করার জন্য আন্দোলনও করেছে! সে
কারণেই কি এলন মাস্ক টুইটারের লোগো এবং নাম চেঞ্জ করে ‘এক্স’ দিয়েছে! কে জানে?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
যাই হোক, পুরো ব্যাপারটার শুরুতে
ফেরা যাক। পিটার ম্যাকইনডো নামক এক লোকের হাত ধরে শুরু হয় এই কন্সপিরেসি থিওরিটি। তিনি
মূলত স্যাটায়ার হিসেবেই এটি শুরু করেন ২০১৭ এর জানুয়ারিতে। কিন্তু ২০১৭ এর মেম্ফিস
উওমেন মার্চে প্রো-ট্রাম্প বাহিনীর কাউন্টার প্রোটেস্ট দেখার পরে তিনি একটি
পোস্টারে ‘বার্ডস আরেন্ট রিয়েল’ লিখে সেটিকে একটি কন্সপিরেসি থিওরিতে পরিণত করেন। তাঁর
একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। যার মাধ্যমেই এই স্যাটায়ারিকাল মুভমেন্টটি শুরু হয়।
২০১৭ তে তিনি একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আমি মজা করে একটি মুভমেন্ট শুরু করেছিলাম,
যা ইন্সটাগ্রামের ইউজাররা বেশ পছন্দ করেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সে ২০২১ এর আগ
পর্যন্ত একবারও স্বীকার করেন নি যে তিনি আসলে এই থিওরিতে বিশ্বাসই করেন না!
এই মুভমেন্টে বিশ্বাসীদের দাবী
করে, আমেরিকার সবগুলো পাখি আসলে কোনো প্রাণী না। এগুলো সবই সরকারি ড্রোন! ১৯৫৯
থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ফেডেরাল গভমেন্ট সবগুলো পাখি মেরে ফেলেছে এবং সেগুলোর জায়গা
ড্রোন দিয়ে রিপ্লেস করে দিয়েছে! অত্যন্ত হাস্যকর শোনালেও এসবে তারা আসলেই বিশ্বাস
করে! তাদের দাবী এগুলোর মাধ্যমে গভমেন্ট সাধারণ মানুষজনের উপরে নজর রাখে। ড্রোনরুপী
পাখিগুলো নাকি পাওয়ার লাইনের উপরে বসে রিচার্জ হয়ে নেয়। গাড়ির উপরে যে মাঝেমধ্যেই
পাখিরা পটি করে, সেগুলো নাকি এক ধরণের ট্রেকিং ডিভাইস! প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন এফ
কেনেডিকে মারার পেছনেও নাকি একটি বিশেষ কারণ আছে। তিনি নাকি এসব ড্রোনরূপি পাখি
মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন, তাই তাকে খতম করে দিয়েছে ফেডারেল গভমেন্ট! এমনই সব উদ্ভট
ব্যাপার-স্যাপারে ভর্তি এই মুভমেন্ট।
আমেরিকান টিভি চ্যানেল এমএসএনবিসি
২০২১ সালে জানায়, এই মুভমেন্টের নাকি লাখ লাখ মেম্বার আছে! এই মুভমেন্টটি এতটা বড়
হওয়ার পেছনে সবথেকে বেশি দায়ী জেন জি কমিউনিটি। তারা এই কন্সপিরেসি থিওরিটি এতটাই
পছন্দ করেছে যে, ‘বার্ড আরেন্ট রিয়েল’ লেখা টি-শার্ট পড়ে বিভিন্ন সময়ে স্লোগান
দিতে দিতে র্যালি করতেও দেখা গেছে তাদেরকে।
যার হাত ধরে এত কিছুর শুরু, সেই
২৪ বছর বয়সী পিটার ম্যাকইনডো মেম্ফিসের একজন কলেজ ড্রপআউট যুবক। তিনি এই
মুভমেন্টের পরে রীতিমত সেলেব্রিটি তকমা পেয়ে গেছেন। তাকে ২০১৯ এ রেগ টিভির একটি
ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয়, এই সম্পূর্ন মুভমেন্টটি কি আসলে মজা করে তৈরি করা?
সেই উত্তরে তিনি বোথসাইডিজম মেথড ব্যবহার করেন। তিনি পাল্টা জিজ্ঞেস করেন, আপনাদের
কিন্তু কাউকে কখনোই জিজ্ঞেস করতে দেখা যায় নি, আচ্ছা পাখি কি আসলেই আসল? কিন্তু
আপনারা আমাকে ঠিকই জিজ্ঞেস করছেন পাখি আসল না কেন? ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তাকে
ভাইস ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যায় ফিচার করা হয়। সেখানে তিনি প্রথমবারের মতো কোনো
ক্যারেক্টারে না থেকে, প্রকৃতপক্ষেই একটি ইন্টারভিউ দেন। একই বছর মে মাসে তিনি
অস্ট্রেলিয়ান বিখ্যাত টিভি প্রোগ্রাম সিক্সটি মিনিটসে ডাক পান। প্রথমে তিনি
ক্যারেক্টারেই শুরু করেন, কিন্তু পরে ঠিকই বাস্তবে ফিরে এসে বাকি ইন্টারভিউ দেন। ২০২৩
এর এপ্রিলে এমনকি তাকে নিয়ে একটি টেডটকও অ্যারেঞ্জ করা হয়!