শোবিজ জগত বড়ই অদ্ভুত। এখানে পর্দার চিত্রে সকলকে হাসিখুশি দেখলেও, বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন। ভেতরে ভেতরে একজন আরেকজনের সাথে রেষারেষি বেঁধেই থাকে। কোনো কোনো তুচ্ছ ঘটনাতেও একজন আরেকজনের মুখ দেখা অবধি বন্ধ করে দেয়। কারো কারো আবার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়েও এ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সিনে পাড়ায় শাবনুরের সাথেও বহুবার লেগেছিলো এই দ্বন্দ্ব। কারো কারো সাথে ঝগড়া মিটিয়ে পরবর্তিতে তাদের পর্দায় দেখা গেছে, আবার কারো কারো সাথে রয়ে গেছে আজন্ম শত্রুতা।
সিনেপাড়ায় প্রায়
একই সাথে পদার্পণ শাবনুর আর মৌসুমির। আবার দুজনই ছিলেন তখনকার সময়ের অন্যতম জনপ্রিয়
নায়ক সালমান শাহ’র নায়িকা। তবে কোনো এক অজানা কারণে শাবনুর আর মৌসুমি কেউ কারো সাথে
কাজ করেনি। দীর্ঘ ১৩ বছর পর “দুই বধু এক স্বামী” সিনেমার মাধ্যমে মান্না তাদের এক করেছিলেন।
এরপরে তারা একসাথে দুজনে অনেক কাজ করেছেন। তবে তাদের দুজনের একসাথে অভিনীর “মোল্লা
বাড়ির বউ” সিনেমাটি ব্যপক সাড়া ফেলেছিলো।
শাবনুরের সমসাময়িক
আরেক নায়িকা পপি। দুজনই সেসময় বেশ জনপ্রিয় ছিলো। তবে দুজন ছিলো দুজনার প্রতিদ্বন্দ্বী।
সেসময় জনপ্রিয় নায়িকাদের মধ্যে শাবনুর, মৌসুমি, পূর্নিমা এদেরকে একসাথে স্ক্রিণ শেয়ার
করতে দেখা গেলেও, পপি আর শাবনুরকে একসাথে কখনোই কোনো সিনেয়াতে দেখা যায়নি। যদিও তাদের
বিভিন্ন মঞ্চে বা অন্য কোথাও একসাথে বেশ হাসিখুশী দেখা গেলেও, পর্দায় তারা এক হয়নি।
সেসময়ে শাবনুর ছিলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আর তাই অন্য কোনো নায়িকাকে পর্দায় শাবনুরের
সাথে সাইড ক্যারেক্টার হিসেবে নেওয়া হতো। হতে পারে এজন্যই পপি শাবনুরের সাথে কোনো সিনেমায়
অভিনয় করতে রাজি হননি।
একসময়ের জনপ্রিয়
জুটি ছিলো সালমান-শাবনুর। সালমান শাহ’র মৃত্যুর পর রিয়াজ-শাবনুর হয়ে ওঠে জনপ্রিয় জুটি।
তবে হঠাৎ এই জুটিটাও ভেঙে যায়। রিয়াজ ব্যস্ত হয় পুর্নিমাকে নিয়ে, আর ওদিকে ফেরদৌস-শাবনুর
জুটি দর্শকদের প্রিয় হয়ে ওঠে। রিয়াজের সাথে শাবনুরের দ্বন্দ্বের কারণ হিসেবে উঠে আসে
ফিল্ম পলিটিক্সের ব্যাপার-স্যাপার। জুটি ভাঙার কারণ হিসেবে রিয়াজ এখানে শাবনুরকেও কিছুটা
দোষারোপ করে। তবে শাবনুরের মতে, পর্দায় ভিন্নতা দরকার। একইসাথে তারা ৪৩টি সিনেমায় অভিনয়
করেছে। দর্শক নতুনত্ব চায়। পর্দায় একই জুটি দেখতে দেখতে দর্শক যেন বোরিং না হয়, এজন্যই
জুটির পরিবর্তন। এখানে আরো একটা বিষয় আছে, একটা সময় ঢালিপাড়ায় গুঞ্জণ রটে শাবনুরের
কাঁধে ভর করে রিয়াজের সফলতা। এটা সত্যি যে শাবনুরের সাথে প্রথম সিনেমা করেই অনেক নায়ক
হিট করেছে, পেয়েছে জনপ্রিয়তা। তবে রিয়াজের ক্ষেত্রে সেটা কতটা সত্য! জানতে ডেস্ক্রিপশন বক্সের ভিডিওটা দেখতে পারেন।
ঢাকাই সিনেমার বর্তমান
কিং শাকিব খান। তবে এই নায়ক শাবনুরের সাথেও কাজ করেছিলেন দীর্ঘ ১০ বছর। “ফুল নেব না
অশ্রু নেব” সিনেমার মাধ্যমে এই জুটি দর্শক মহলে বেশ আলোচইত হয়। এর পর একে একে বেশ কয়েকটি
ভালো ভালো সিনেমা উপহার দিয়েছিলো এই জুটি। তবে হঠাৎ এই জুটির মাঝে ভাঙণ ধরে। ধীরে ধীরে
শাকিব তার জনপ্রিয়তা নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। আর শাবনুর তার নিজের মতো করে সিনেমা চালিয়ে
যেতে থাকে। ২০০৯ সালের পরে তাদের একসাথে আর পর্দায় দেখা যায়নি।
তবে যাই হোক, শাবনুর
একজন অনন্য নায়িকা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি নিজেই। তিনি সবসময় চেষ্টা করতেন আগেরটার
থেকে পরেরটা কতটা বেশি ভালো করা যায়। তার এই অভিনয়শৈলী দিয়েই তিনি দর্শক মন দখল করে
আছেন, থাকবেন।