কেউ তাকে বলে, কাজল চোখের মেয়ে। কেউবা বলে, রূপসী নারী। কেউ আবার বলে, হাসির রাণী। তবে আমি তাকে বলি, তরল মেয়ে, সরল মেয়ে।
হ্যা, সিনেমা জগতের একসময়কার জনপ্রিয় নায়িকা শাবনুর। তাকে অনেকেই অনেক উপমা দেয়। তবে আমি তাকে তরল আর সরল বলে উপমা দিই। কারণ তিনি সিনেমায় যেমন অনন্য, বাস্তবেও তিনি সেরা। সিনেমা জগতে তিনি জনপ্রিয় হওয়ার কারণ, তার সাবলীল অভিনয়। তার সমসাময়িক নায়িকাদেরকে সে টেক্কা দিতো বটে। এমনকি তার সময়ের আগের নায়িকাদেরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো।
বাংলা সিনেমায় আরেক নায়িকার নাম অকপটেই চলে আসে, তা হলো “কবরী”। ৬০ এর দশকের এই নায়িকাকে “সিনেমার মিষ্টি মেয়ে” বলা হতো। এই উপমা দেওয়ার কারণ অবশ্য তার অপরূপ সৌন্দর্য্য। তার অকৃত্রিম রূপ, লাবন্যে মুগ্ধ করেছিলো সবাইকে। সেই সাথে তার অভিনয় প্রতিভা দিয়ে জয় করেছিলো কোটি হৃদয়। তার অভিনয় যাত্রা শুরুতেই তিনি পান জনপ্রিয়তা। ১৯৬৪ সালে তার অভিনীত প্রথম সিনেমা “সুতরাং” দিয়েই তিনি আন্তর্জাতিক সম্মাননা পান। এর পরে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না কবরীকে। দক্ষ অভিনয় আর মন কাড়া হাসি দিয়ে দর্শক মনে জায়গা পেতে বসেন তিনি। একের পর এক জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন দর্শকদের।
অন্যদিকে শাবনুরের
অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। প্রথম থেকে শাবনুরও বেশ জনপ্রিয়তা পায় এবং সেই জনপ্রিয়তা
ধরে রাখে শেষ পর্যন্ত। শাবনুরের ন্যাচারাল অভিনয়, অপরূপ চেহারা, মিষ্টি হাসি। সব মিলিয়েই
শাবনুর বনে যায় স্বপ্নের নায়িকাতে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে বাংলা সিনেমার রাণী
হয়ে ওঠেন তিনি।
এখন যদি ৬০ এর দশকের ‘কবরী’ আর ৯০ এর দশকের ‘শাবনুর’ এই দুজনের মধ্যে তুলনা করা হয়, তবে কে সেরা হবে? হুট করে অবশ্যই বলে দেওয়া সম্ভব না যে কে সেরা? কারণ দুজনেই বেশ জনপ্রিয়, দুজনের অভিনয় দক্ষতাও বেশ প্রখর।
কবরী একজন ভার্সেটাইল
এক্টর। তার সময়কার বেশিরভাগ সিনেমাই ছিলো, দেশ নিয়ে। তবে হা, কবরী রোমান্টিক সিনেমাতেও
অভিনয় করেছে। আবার সামাজিক, পারিবারিক সিনেমাতেও তার প্রতিভা দেখিয়েছে দারুন।
“সে যে কেনো এলো
না” গানটা শোনেনি এমন কেউ নেই। প্রেমিকের প্রতি অভিমান নিয়ে গাওয়া এই গান বেশ জনপ্রিয়।
এটাও কবরী অভিনীত সিনেমার গান। আরো একটা জনপ্রিয় গান আছে, “এক্টুসখানি দেখো, একখান
কথা রাখো”। এরকম আরো অনেক জনপ্রিয় গান আছে কবরীর অভিনীত সিনেমার। কবরী তার অভিনয় প্রতিভা
দিয়ে দেশ-বিদেশ জুড়ে সমাদৃত।
এদিকে শাবনুরও তার ভার্সেটাইল অভিনয় দিয়ে জনপ্রিয়। যেকোনো চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চরম প্রতিভা আছে তার। শাবনুরের হাসি, কথা বলার ভঙ্গি, সাবলীল অভিনয়। সবই দর্শক গ্রহণ করেছে সাদরে। শাবনুরের সিনেমার বেশিরভাগ গানই গেছেন প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। তিনি নিজেই শাবনুরকে “মহানায়িকা” উপাধী দিয়েছেন।
কবরী তার শেষ অবধী সিনেমায় কাজ করেছিলেন। ২০২১ সালে কোভিড আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন অন্যদিকে শাবনুর চলচ্চিত্র থেকে এখন দূরে আছেন। হতো তিনি আবার ফিরে আসতে পারেন।