বাংলা সিনেমায় স্নিগ্ধ চেহারার মেয়ে, কাজল চোখের মেয়ে, মিষ্টি হাসির মেয়ে একই সাথে এতোগুলো সংজ্ঞা খুব কম নায়িকার সাথেই যায়। আর তাদের মাঝে প্রথম সারিতে কাকে রাখা যায়? চোখ বন্ধ করে ‘শাবনুর’। এই নায়িকা তার সিনেমা ক্যারিয়ারে যতটা সফলতা পেয়েছে, তার থেকেও বেশী রেকর্ড করেছে যেকোনো নায়কের সাথে প্রথম সিনেমাতেই হিট করে। অনেকেই আবার বলে থাকে, শাবনুরের সাথে অভিনয় করেই অনেক নায়ক তাদের ক্যারিয়ার গড়তে পেড়েছে। তবে শাবনুর এ বিষয়টা মানতে নারাজ। তার মতে, যে কেউ তার নিজের যোগ্যতাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জেনে নেওয়া যাক, জনপ্রিয় এই নায়িকার চোখে সেরা নায়ক কারা?
নব্বই দশকে বাংলা
সিনেমার জনপ্রিয় জুটি সালমান-শাবনুর। নিজেদের ক্যারিয়ারের শুরু, আর শুরুতেই হিট। দর্শক
মনে করে নেয় জায়গা। তবে সেই জুটি খুব বেশিদিন টিকতে পারেনি। একসাথে ১৪ টি সিনেমায় অভিনয়
করে এই জুটি। সালমান শাহ’র অকাল মৃত্যুতে ভেঙে যায় সালমান-শাবনুর জুটি। দর্শকের মাঝে
পড়ে যায় হাহাকার। সেই সাথে নায়িকা নিজেও ভেঙে পড়ে। এতো অসাধারণ একটা জুটি ছিলো তারা,
যে পর্দায় তাদের দুজনের বাস্তবিক ক্যামিষ্ট্রি দেখে সকলেই মুগ্ধ হতো।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
সালমান শাহ’র অল্প
সময়ের ক্যারিয়ারে শাবনুরের সাথেই বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। আর এইজুটি বাংলা সিনেমার
ইতিহাসে অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় জুটি। আর তাই সালমান শাহকে ঘিরে শাবনূরের আবেগ, স্মৃতি
একটু বেশিই।
সালমান শাহকে নিয়ে
শাবনুর বলে, “সালমান
শাহ অনেক ভালো মানুষ ছিল। অনেক বড় মনের মানুষ ছিল। ভালো একজন কো আর্টিস্ট ছিল। সালমান
শাহ আজ বেঁচে থাকলে আমাদের জুটিটা আরও অনেক জনপ্রিয়তা পেত। হয় তো উত্তম- সুচিত্রা জুটির
মতোই হতো”।
সালমান শাহ’র মৃত্যুর পরে
শাবনুরের সাথে জুটি বাঁধে রিয়াজ। এই জুটির প্রথম সিনেমা ছিলো ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত
“মন মানে না”। প্রথম সিনেমাতেই দর্শক মনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একে একে বেশ কয়েকটি সিনেমায়
তারা একসাথে অভিনয় করে। এই জুটির ৪৩ টি সিনেমার মধ্যে বেশ অনেকগুলো সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে
সফল হয় এবং সেই সাথে দর্শক মনে করে নেয় এক আলাদা জায়গা। তবে অনেকেই ভাবেন, রিয়াজের
ক্যরিয়ার দাঁড়িয়েছে শাবনুরের জন্য। তবে এই কথাটা পুরোপুরি মানা যায় না। কারণ, রিয়াজ
অভিনীত “হৃদয়ের আয়না”, “প্রাণের চেয়ে প্রিয়” ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং ব্যবসায়িক সফলতা
পেয়েছিলো। ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ সিনেমায় অভিনয় করে রিয়াজ শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরষ্কারও
পেয়েছিলো।
অবশ্য শাবনুরের নিজেরও মত
যে, রিয়াজ তার নিজ যোগ্যতাতেই ক্যারিয়ারে সফল হয়েছে। শাবনুরের সাথে রিয়াজের আন্ডারস্ট্যন্ডিং-ও
ছিলো ভালো।
তবে নানান জটিলতার কারণে
এই জুটি ভেঙে যায়। এ নিয়ে অবশ্য আমরা আরো একটি ভিডিওতে আলোচনা করেছি। চাইলে ডেস্ক্রিপশন
বক্স থেকে সেই ভিডিওটা দেখে আসতে পারেন।
রিয়াজের সাথে জুটি ভাঙার
পর দর্শকের কাছে ফেরদৌস-শাবনুর জুটি প্রাধান্য পায় বেশি। এই জুটির একসাথে প্রথম সিনেমা
“বুকের ভেতর আগুন”। আর ফেরদৌসের ক্যারিয়ারও শুরু এই সিনেমা দিয়েই। মূলত এই সিনেমাটা
ছিলো নায়ক সালমান শাহকে নিয়েই। তবে সালমান শাহ’র হঠাৎ মৃত্যুতে পরবর্তীতে ফেরদৌসকে
কাস্ট করা হয়। এই সিনেমা করার আগে ফেরদৌসকে অনেকেই অনেক কথা শুনিয়েছিলো। সেই সাথে এই
সিনেমা করতে বারণও করেছিলো কারণ সালমান শাহ ছিলো তখনকার সময়ের হিট নায়ক। তার অসমাপ্ত
সিনেমা করার সাহস কেউ দেখায়নি। সেখানে সদ্য সিনেমায় পা রাখা ফেরদৌস সাহস দেখায়। তবে
সেই সিনেমায় ফেরদৌস বেশ ভালো পারফর্ম করে। এরপর একে একে এই জুটি একসাথে ২৯টি সিনেমায়
অভিনয় করে। যার বেশিরভাগই দর্শক মহলে সমাদৃত হয়।
শাবনুরের মতে, ফেরদৌস বেশ
হেল্পফুল একজন মানুষ। কো-আর্টিস্ট হিসেবে সে দারুন কাজ করেছে। অবশ্য সেটা আমরা পর্দায়তেও
দেখেছি।
পরবর্তিতে শাবনুর অনেকের
সাথেই কাজ করেছে। যেমন; ওমর সানি, শাকিব খান, মান্না।
শাবনুরের কাছে জানতে চাওয়া
হয়েছিলো, তার কাছে সেরা নায়ক কে?
সে জানিয়েছিলো, সবাই সেরা।
সবাই ভালো পারফর্ম করছে। তবে জুটির দিক দিয়ে সালমান শাহ’র পরে রিয়াজ এবং ফেরদৌস সবার
থেকে এগিয়ে। তাদের সাথে জুটি বেঁধে বেশ আনন্দে কাজ করেছে বলে জানান জনপ্রিয় এই নায়িকা।