হিন্দি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ইতিহাসে সবথেকে জনপ্রিয় সিরিজ কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে ৯৯% মানুষই বলবে সিআইডির কথা। সনির পর্দায় দীর্ঘ ২১ বছর ধরে চলেছে এই সিরিয়ালটি। এই সিরিয়ালে দেখা যেতো সিআইডি অফিসারদের কার্যকলাপ ও বিভিন্ন ধরণের কেইস সলভ করার গল্প। তাদের মধ্যকার কেমিস্ট্রিও বেশ উপভোগ করতো দর্শকরা। এই সিরিয়ালের অভিনেতারা দর্শকদের মাঝে সেই সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তবে তাদেরকে সিআইডির বাইরে খুব একটা দেখা যায় নি। আপনি একজন সিআইডি ভক্ত হলে নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন জেগে ওঠে, এখন কেমন আছে তারা?
সিআইডির কথা উঠলেই সবার আগে চলে
আসে দায়া, আভিজিৎ ও এসিপি প্রাদ্যুমানের নাম। দায়া চরিত্রে দায়ানান্দ শেট্টি,
আভিজিৎ চরিত্রে আদিত্য শ্রীভাস্তাব এবং এসিপির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শিভাজি
সাত্যাম।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
শোনা যায়, দায়ানান্দ
শেট্টি অর্থাৎ পর্দার দায়া প্রথমদিকে অভিনয় জগতে আসতে চাননি। পারিবারিক হোটেলের
ব্যবসাতেই যোগ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। শখের বশে টুকটাক অভিনয় করতেন তিনি। মানুষের
কাছ থেকে ধীরে ধীরে প্রশংসা পেতে শুরু করেছিলেন। এরপরই যোগদান করেন থিয়েটারে,
তারপরে ছোটপর্দা এবং এখন বড়পর্দায় একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন
দয়া। এই মুহূর্তে কোন ধারাবাহিক কিংবা ছবিতে দেখা না গেলেও, আসন্ন একটি ওয়েব সিরিজে কাজ করা নিয়ে কথা চলছে তার। এছাড়াও তাকে
সিংঘাম রিটার্নস, জনি গাদ্দার, গোভিন্দা নাম মেরাসহ বেশ কিছু হিন্দি সিনেমাতে
অভিনয় করতে দেখা যায়। টুলু ভাষার একটি সিনেমাতেও কাজ করতে দেখা গেছে তাকে।
এরপর আসা যাক সিনিয়র ইন্সপেক্টর
আভিজিৎ অর্থাৎ আদিত্য শ্রীভাস্তাবের কথায়। ধারাবাহিকে একজন অবিবাহিত কাঠখোট্টা
সরকারি গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তবে একজন ঘোর সংসারী মানুষ তিনি।
স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে বেশ ভালই আছেন। সিআইডির পরে সিগনিফিকেন্ট কোনো
সিরিয়ালে দেখা না গেলেও নিয়মিত বিরতিতে বড়পর্দায় কাজ করে আসছেন এই অভিনেতার।
ব্যান্ডিট কুইন, হাজার চৌরাসি কি মা, সত্য, দিল সে, লাকশিয়া, দিওয়ার, ব্ল্যাক
ফ্রাইডে, সুপার থার্টি, রাত আকেলি হ্যা, হাসিন দিলরুবার মতো সিনেমাতে দেখা গেছে
তাকে। এই বছর ভাকশাক নামে তার একটি ওয়েব ফিল্ম রিলিজ হয়েছে। আইসি ৮১৪ ও হিউম্যান
নামে দুটি ওয়েব সিরিজও আসার কথা আছে।
সিআইডির প্রধান এসিপির চরিত্রে
অভিনয় করা শিবাজি সাত্যাম অভিনয় জগতে আসার আগে ছিলেন একজন ব্যাঙ্ক ক্যাশিয়ার।
পরবর্তীকালে অভিনয় আসার পর তিনি নাম করেছেন প্রচুর। ধারাবাহিকের পাশাপাশি চুটিয়ে
কাজ করেছেন বড়পর্দায়ও। তিনি বলিউড ও মারাঠি ইন্ডাস্ট্রির একজন পরিচিত মুখ।
এছাড়াও স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে তিনি যে একেবারে সংসারী মানুষ, তা নিয়ে কোনো
সন্দেহই নেই।
ইন্সপেক্টর ভিভেক চরিত্রটিও ছিল
দর্শকদের খুবই পছন্দের। বর্তমানে তার অবস্থানই সবথেকে ইন্টারেস্টিং। চরিত্রটিতে
অভিনয় করা ভিভেক মাশরুকে ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়াতে চলছে মাতামাতি। সোশ্যাল
মিডিয়াতে একজন ভিভেকের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, “আপনি যদি তাকে চেনেন তাহলে
দুর্দান্ত শৈশব কেটেছে আপনার।” এরপরই সেই ছবিটি ভাইরাল হতে শুরু করে। সোশ্যাল
মিডিয়াতে অভিনেতাকে নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন ভক্তরা। শেষমেশ ভিভেক মাশরু
নিজেই একটি টুইট শেয়ার করেছেন।
টুইটে তিনি লিখেছেন, “আপনাদের
ভালবাসা এবং প্রশংসার জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। এগুলো আমার কাছে অনেক মূল্যবান
এবং আমি আমার হৃদয় থেকে এগুলোর প্রশংসা করি। অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা।” বাই দ্য ওয়ে,
ভিভেক কিন্তু এখন আর অভিনয় করেন না। তিনি বেশ কয়েক বছর আগেই
গ্ল্যামার দুনিয়া ছেড়েছেন।
তার লিঙ্কডইন প্রোফাইল অনুযায়ী
বেঙ্গালুরুর সিএমআর ইউনিভার্সিটিতে কমন কোর কারিকুলাম ডিপার্টমেন্টের হেড হিসেবে
আছেন তিনি। বেঙ্গালুরুতেই রয়েছেন তার পরিবার নিয়ে। অভিনয় ছেড়ে ইউনিভার্সিটি
প্রোফেসর হিসেবে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছেন ভিভেক।
এছাড়াও সিআইডির আরো দুটি জনপ্রিয়
চরিত্র ছিল ইন্সপেক্টর ফ্রেডি এবং ডক্টর সালুংকে। সালুংকের চরিত্রে অভিনয় করা
নরেন্দ্র গুপ্ত এখনও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন। রিসেন্টলি তাকে ফরেনসিক নামক একটি
সিনেমা ও মওকা ইয়া ধোঁকা নামক একটি ওয়েব সিরিজে দেখা গেছে।
তবে সিআইডি ভক্তরা সবথেকে বেশি
কষ্ট পাবে ইন্সপেক্টর ফ্রেডির আপডেট জানলে। সিআইডিতে কমিক রিলিফ হিসেবে তার
চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। সবাই তাকে ভালোবাসতো। সেই ফ্রেডি চরিত্রে
অভিনয় করা দীনেশ ফাডনিশ মুম্বাইয়ের তুঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত
ডিসেম্বরের ৪ তারিখ রাতে হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৭।
এছাড়াও সিনিয়র ইন্সপেক্টর আভিজিৎ-এর
সাথে ফরেন্সিক স্পেশালিস্ট ডক্টর তারিকার প্রেম দেখানো হয়েছিল। এই চরিত্রে অভিনয়
করেছিলেন শ্রদ্ধা মুসলে। হিন্দি টেলিভিশন জগতের পরিচিত মুখ তিনি। অভিনয়ে আসার আগে
করতেন মডেলিং। এছাড়াও লেডি ইন্সপেক্টর পুরভীর চরিত্রে দেখা মিলেছিল আনসা সাইদের।
তিনিও টেলিভিশন জগতের পরিচিত মুখ। একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি।
তবে সিআইডির পরে সবথেকে বেশি
প্রশংসা কুড়িয়েছেন ইন্সপেক্টর রজত চরিত্রে অভিনয় করা বিকাশ কুমার। আজ্জি, পরমাণু,
ধামাকা ও ওয়েব সিরিজ আরিয়ার মতো দর্শকপ্রিয় কাজে দেখা গেছে তাকে। তবে রিসেন্টলি
নেটফ্লিক্সে আসা ওয়েব সিরিজ কালা পানিতে অভিনয় করে কাঁপিয়ে দিয়েছেন তিনি। সামনে
আরো বেশকিছু প্রজেক্ট হাতে আছে তার।