যাদের ছেলেবেলা কেটেছে গ্রামে-গঞ্জে, তারা একটা বিশেষ শ্রেণীর গাছের কথা নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন। পরিবারের বড়রা যে গাছ থেকে সবসময় একশ হাত দূরে থাকতে বলতো। যে গাছ খেলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা পাগল হয়ে যায়। এমনকি অনেকে মারাও যেতে পারে! যে গাছের আবার আছে ঔষধি গুণাগুণও! কত রকমের গুজব যে আছে এই গাছকে ঘীরে!
প্রথমেই বলে নেই, গাছটির নাম ধুতুরা গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম
দাতুরা মেটেল। ধুতুরা নামে সবাই চিনলেও এর আরও কিছু নাম আছে। একে রাজধুতুরা, রাজঘণ্টা, ঘণ্টাপুষ্প কিংবা কণ্টফলও বলা হয়।
ইংরেজিতে একে বলা হয় ডেভিলস ট্রাম্পেট। আর ধুতুরার ফলকে বলা হয় থর্ন অ্যাপেল।
ধুতুরা গাছ মেইনলি পথে-ঘাটে, ঝোপ-ঝাড়ে পরিত্যক্ত জায়গায়
জন্মায়। তবে আগের দিনে যেখানে-সেখানে এই গাছ দেখা গেলেও, এখন আর খুব একটা দেখা
পাওয়া যায় না। মজা ব্যাপার হচ্ছে এই গাছ ডেঞ্জারাস হলেও, অনেকে সৌন্দর্যবৃদ্ধির
জন্য বাড়ির বাগানেও লাগায়।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
এবার আসা যাক আসল কথায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ
বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন একবার এই ব্যাপারে কিছু
ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলেছিলেন – “কথায় আছে গোটা ধুতুরা খেয়ে ফেললে মানুষ পাগল হয়ে
যায়। এর পাতা, কাণ্ড, ফুল, ফল সবই আগাগোড়া বিষাক্ত। এতে আছে মারাত্মক পরিমাণে ট্রোপেইন
অ্যালকালয়েড নামক এক ধরণের বিষ। এর পয়জনে পশু-পাখি কিংবা মানুষ পর্যন্ত মারা যেতে
পারে।”
কেউ অল্প পরিমাণ ধুতুরার রস খেলেও চোখে আবছা দেখে। ভেদ-বুদ্ধি লোপ পায়। তবে ধুতুরাকে সবথেকে ইন্টারেস্টিং ওয়েতে কাজে লাগান অজ্ঞান পার্টির লোকজন। কারণ ধুতুরা ব্যবহার করে মানুষজনকে সেন্সলেস করা যায়। এমনকি এর পয়জনে মানুষজন ২-৩ দিন পর্যন্ত অজ্ঞান থাকতে পারে। কপাল বেশি-ই খারাপ থাকলে সেই ব্যক্তি কোমাতেও চলে যেতে পারে। আর চুড়ান্ত মাত্রায় দুর্ভাগা হলে মৃত্যু! মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরকম পাগলাটে বৈশিষ্ট্যের কারণে দুনিয়ার বহু দেশে এই গাছ লাগানো, বহন করা ও ব্যবহার করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ! অ্যামেরিকার কিছু স্টেটেও এই গাছটিকে ব্যান করা হয়েছে। যাই হোক, সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, ধুতুরার নেগেটিভ রিউমারগুলো আসলে সত্যি। বাকি রইলো মেডিসিনের ব্যাপারটি।
এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার স্নায়বিক, মানসিক, চর্মরোগ এবং বাতের ব্যথায় বেশ কার্যকর। কাউকে যদি পাগলা কুকুরে কামড়ায়, তাহলে এই গাছের এক থেকে আধা গ্রাম মূলের সাথে ‘পূর্ননবা’ নামের আরেকটি ভেষজ গাছের পাঁচ গ্রাম কাচা মূল নিয়ে বেটে ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা দুধের সাথে খাইয়ে দিলে তার আর জলাতঙ্ক রোগ হয় না। শরীরের কোথাও ফোঁড়া হলে, ধুতুরা পাতার রসের সাথে সামান্য একটু গাওয়া ঘি মিশিয়ে সেই জায়গায় লাগালে ফোঁড়া পেকে যায়। এছাড়াও প্রচন্ড বাতের ব্যথায় ধুতরার পাতার রসের সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে কুসুম গরম করে ব্যথার জায়গায় মালিশ করে দিলে ব্যথা কমে যায়। তবে হাপানির সমস্যায় একে একটি ইন্টারেস্টিং পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যায়। কৃষ্ণ ধুতরার শুকনো পাতা বা ফুলের সাথে বাসক পাতা জড়িয়ে নিয়ে সিগারেটের মতো করে টানলে হাঁপানির কষ্ট কমে যায়। এছাড়াও ধুতুরা গাছের পাতা, মূল ও ফল সিদ্ধ করে বুকে সেক দিলে শ্বাস কষ্ট কমে।
তবে যেহেতু জিনিসটা খুবই ডেঞ্জারাস, তাই মেডিসিন হিসেবে একে ব্যবহারও করতে হবে খুবই সতর্কতার সাথে। এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।