ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট। মেন্টাল এক্সপার্টদের মতে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তার আচরণে নার্সিসিজমের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। আলক্সান্ডার দি গ্রেট, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, অ্যাডলফ হিটলার, স্টিভ জবস, কিম জং উন, মার্ক জাকারবার্গ, টেড বান্ডি, ল্যারি পেজ, টাইগার উডসের মতো বিখ্যাত-কুখ্যাত জনপ্রিয় ব্যক্তিরাও ছিলেন নার্সিসিস্ট। এই নার্সিসিজম ব্যাপারটা আসলে কি? এর প্রভাব ভালো না খারাপ?
নিকলাস বেন্টনার নামক এক ডেনিশ স্ট্রাইকার লম্বা একটা সময়
আর্সেনালে খেলেছেন। একটা ইন্টার্ভিউতে তিনি বলেছিলেন, “যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন,
আমি পৃথিবীর সেরা স্ট্রাইকার কিনা? আমার উত্তর হবে, হ্যা।” কিন্তু মজার ব্যাপার
হচ্ছে, এতগুলো টপ ফ্লাইট সিজনে সে কখনো এক সিজনে ৯ গোলের বেশি দিতেই পারেন নি!
ইভেন তাকে ফুটবল সমর্থকরা মজা করে একসময় ‘লর্ড বেন্টনার’ বলতে শুরু করে।
এক্সপার্টদের মতে তার মধ্যে নার্সিসিস্টিক গ্র্যান্ডিওস ডিলিউশন ছিল।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
জনপ্রিয় ফুটবল ম্যানেজার হোসে মৌরিনহোকে সকলে স্পেশাল ওয়ান
বলে ডাকে। তার ক্যারিয়ারে অনেক অর্জন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই স্পেশাল ওয়ান
ট্যাগ কিন্তু মৌরিনহো নিজেই নিজেকে দিয়েছেন। একটি ইন্টার্ভিউতে তিনি বলেছিলেন,
“আমাকে অ্যারোগেন্ট ভাববেন না, সত্যি কথা হচ্ছে আমি একজন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন।
এবং আমি মনে করি আমি স্পেশাল ওয়ান।” এক্সপার্টদের মতে তিনিও একজন নার্সিসিস্ট।
নিজের যে কোনো বৈশিষ্ট্য নিয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় অবসেসড হয়ে
পড়লে সেটাকেই বলা হয় নার্সিসিজম। সেই বৈশিষ্ট্য হতে পারে নিজের চেহারা অথবা কোন
ভালো গুণ। নার্সিসিস্ট মানুষজন সব সময় প্রশংসা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকে।
রিয়েলিটি টিভি পার্সোনালিটি জোসেলিন হার্নান্দেজ নিজেকে
মনে করতেন পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী নারী। এজন্য প্রচুর সমালোচনাও শুনতে হয়েছে তাকে।
অন্যদিকে, ফেসবুক নির্মাতা মার্ক জাকারবার্গকে বলা হয় প্রোডাকটিভ নার্সিসিস্ট।
ভাবা যায় এই ধরণের নার্সিসিস্টদের পৃথিবী চেঞ্জ করার মতো ভিশন থাকে। এরা প্রচণ্ড
অ্যাগ্রেসিভ ও কম্পিটিটিভ হয়।
নার্সিসিজমের ইতিহাস ঘাটতে গেলে ফিরে যেতে হবে গ্রিক
মিথলজিতে। নার্সিসাস নামে একজন সুদর্শন যুবক ছিল। ইকো নামক এক দেবী তাকে প্রেমের
প্রস্তাব দেয়। কিন্তু নার্সিসাস তাতে সাড়া দেয় না। ইকো তখন তাকে অভিশাপ দেয়, একসময় তুমি নিজের রূপের দেমাগে নিজেই কাবু হবে।
পরবর্তীতে সেই অভিশাপই সত্যি হয়। নার্সিসাস একদিন পানি
খেতে যায় পুকুরে। পানিতে নিজের ছায়া দেখে নিজের প্রেমে নিজেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে
থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দিনের পর দিন। সেই অবস্থাতেই সে মারা যায়। পরে সে একটি
ফুলে পরিণত হয়। যার নাম দেওয়া হয় নার্সিসাস ফুল।
নার্সিসাসের সেই গল্প থেকেই আধুনিক যুগের নার্সিসিজম টার্মের জন্ম। তবে নার্সিসিজম যে সবসময় খারাপ, তা নয়। জোসে মৌরিনহো, মার্ক জাকারবার্গ, স্টিভ জবসের মতো মানুষজন তাদের নার্সিসিস্ট ইন্সটিঙ্কটের কারণেই চূড়ান্ত মাত্রায় সফল হয়েছেন। তবে নিজেকে ভালোবাসার মাত্রা সীমাহীন হয়ে পড়লেই সমস্যা।