জেনে নিন ভয়ানক কয়েকটি আরবান লেজেন্ড সম্পর্কে || Creepy Urban Legends

Author
0

 


হ্যালো ফ্রেন্ডস, ছোটবেলায় নিশ্চয়ই ঠাকুরমার ঝুলি কার্টুনে শাকচুন্নি, মামদো ভূত, পেটকাটা ভূতসহ আরো অনেক গল্প দেখেছেন? এগুলো হচ্ছে বাংলার আরবান লেজেন্ড। গ্রামের জঙ্গলের পাশের গহীন রাস্তা দিয়ে রাতের বেলা হেটে যাওয়ার সময় এগুলোর ভয় মানুষের মনে উঁকি দিতই। যদিও এগুলোর প্রতি ভয়টা এখন আর সেভাবে নেই, যতটা আগে ছিলো। আজকের আমরা জানবো এরকমই অদ্ভুত ৫টি বিদেশী আরবান লেজেন্ড সম্পর্কে।


নাম্বার ছয় - নালে বা

ভারতের কর্নাটকে বেশ কিছু লেজেন্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার ভেতরে একটি হচ্ছে নালে বা। নব্বয়ের দশকে এই রাজ্যে হঠাৎ-ই সবার মধ্যে একটি আতংঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায়ই দেখা যেত গ্রাম থেকে যুবক ছেলেরা উধাও হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও কোন কুল কিনারা করতে পারছে না। আরো ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, উধাও হওয়া সেই ছেলেগুলোর বাড়ির দরজা কিংবা উঠানে দেখা যেত অদ্ভুত কিছু দাগ। উপায় না পেয়ে ডাকা হলো এক দল তান্ত্রিক। তারা সেসব দাগ দেখে বলল এগুলো ডাইনির কাজ। ডাইনিরা এসে তাদের মোহময়ী সুরে ঘরের পুরুষদের নাম ধরে ডাকে। যে সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বের হয়, ডাইনি তাকেই নিয়ে যায়। সেই ডাক উপেক্ষা করাও খুবই কঠিন কাজ।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



সেই তান্ত্রিকেরা সবাই মিলে পরামর্শ দিল প্রত্যেক বাড়ির দরজায় 'নালে বা' লিখে রাখতে। যার অর্থ হচ্ছে ‘কালকে আসুন’। ডাইনি যখন দরজার সামনে আসবে, তখন সে দেখবে সেখানে কালকে আসতে বলা হয়েছে। যার কারণে সে তখন চলে যাবে। পরদিন আবার যখন আসবে, তখনও দেখবে সেখানে লেখা কালকে আসুন। এই ভাবে ডাইনি প্রতিদিন এসে ফিরে যাবে এবং ধোঁকা খাবে।

গ্রাম গুলোতে ডাইনির এই আতঙ্ক প্রায় বছর খানেক টিকে ছিল। কাছাকাছি ধরনের ঘটনা থাইল্যান্ডের বেশ কিছু গ্রামেও দেখা গিয়েছিলো এক সময়। যেখানে পুরুষেরা গায়েব হয়ে যেত রাতের বেলা। বলিউডের “স্ত্রী” সিনেমাটির গল্পও এই আরবান লেজেন্ড থেকে আইডিয়া নিয়েই বানানো!



নাম্বার পাঁচ - বাওয়াগড়ের বাচ্চাখেকো

এই আরবান লেজেন্ডটিও কর্ণাটকের। আশির দশকে বাওয়াগড় গ্রাম থেকে প্রায় প্রতিদিন রাতেই ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা হারিয়ে যাচ্ছিলো। কোনোভাবেই তাদের হদিশ পাওয়া যাচ্ছিলো না। গ্রামের লোকজন পাহাড়ার লেভেল বাড়িয়ে দিল। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হল না। এরপর গ্রামের যুবকরাও নেমে পড়লো পাহাড়ার কাজে। এমনই একদিন পাহাড়ার সময়ে একটা গলি থেকে বাচ্চার কান্না ভেসে আসলো। কয়েকজন সেদিকে গিয়ে হাজির হতেই দেখতে পেলো এক ভয়ানক দৃশ্য। একটি নেকড়ে একটি বাচ্চাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপারটি হচ্ছে নেকড়েটি দুই পায়ে দাঁড়ানো, অনেকটা মানুষের মতো। এরপরই সেই নেকড়ে মানব বাচ্চাটিকে নিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে পাহারাদারেরা খুবই ভয় পেয়ে গেল। কেউ আর সাহস করে পিছু নিলো নি। তবে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, সেই দিনের পর ঐ গ্রাম থেকে আর কোন বাচ্চা হারিয়ে যায় নি। এরপরে সেই নেকড়ে মানবকেও আর দেখা যায়নি।



নাম্বার চার – উম আল দুয়াইস

মুসলিমদের কাছে সবথেকে ভয়ানক এনটিটির নাম জ্বিন। ডাব্বে কিংবা সিচ্চিন সিনেমাগুলো দেখা থাকলে জ্বিনদের ভয়ংকর দিক সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানার কথা আপনার। তবে আজ আমি বলবো আরব আমিরাতের এক জ্বিনের কথা। যার নাম উম আল দুয়াইস।

অন্ধকার রাস্তা কিংবা জঙ্গলে একে দেখা যায়। সে প্রথমে মারাত্মক সুন্দরীর বেশে সামনে আসে। তার রূপ দেখেই পুরুষরা পাগল হয়ে যায়। এরপরই সে তার আসল ভয়ংকর রূপে ফিরে আসে এবং সেই পুরুষ মানুষটিকে ধরে রীতিমত খেয়ে ফেলে।



নাম্বার তিন - ওয়াইল্ড রোজ

সময়টা পনেরোশ শতক কিংবা তার কিছু আগে। আয়ারল্যান্ডে এলিসা ডে নামে এক অত্যন্ত সুন্দরী মেয়ে বাস করতো। এলিসাকে শহরের সব ইয়াং ছেলেরাই পছন্দ করতো। আমাদের কাছে যেমন জয়া আহসান কিংবা নাজিফা তুষি, বলা যায় এলিসা ডে ছিল তখন আয়ারল্যান্ডের জাতীয় ক্রাশ। আশে পাশের দেশ থেকেও তরুণরা এসে হাজির হত তাকে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু এলিসা কাউকে পাত্তা দিতো না। তাকে সবাই ওয়াইল্ড রোজ বলে ডাকতো।

একদিন অন্য দেশ থেকে এক বড়লোক যুবক এসে হাজির হল সেই শহরে। এবার ঘটলো আশ্চর্য ঘটনা। প্রথম দর্শনেই এলিসার তাকে পছন্দ হয়ে গেল। প্রথম দিনই তাকে নিয়ে এলিসা ঘুরে বেড়ালো। পরদিন সেই যুবক এসে এলিসাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো। তাকে নিয়ে গেল নদীর ধারে। এলিসাকে সে একটি লাল গোলাপ উপহার দিয়েছিল সেদিন। তৃতীয় দিন সেই যুবক তাকে আবারও নদীর ধারে নিয়ে গেল। তাকে চুমু খেয়ে হঠাৎ-ই তার মাথায় আঘাত করতে শুরু করলো। এবং তাকে মেরে ফেলল। তাকে আঘাত করার সময় সেই যুবক বারবার বলছিল ‘অল বিউটি মাস্ট ডাই’। এরপর সেই যুবককে আর কখনো দেখা যায় নি।

কিন্তু এরপর থেকেই সেই শহরে শুরু হল এক নতুন আতংক। শহর থেকে যুবক ছেলেরা নিখোজ হতে শুরু করলো। নদীতে খুঁজে পাওয়া যেত তাদের লাশ। অনেকেই দাবী করতে শুরু করলো, এলিসা ফিরে এসেছে এবং সে সকল যুবকের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। ইনফ্যাক্ট অনেকে এটাও দাবী করে যে তারা এলিসাকে দেখেছে। এভাবেই আয়ারল্যান্ডে এলিসা ডের ওয়াইল্ড রোজ আরবান লেজেন্ডটি এখনও মানুষের মুখে মুখে বেঁচে আছে।



নাম্বার দুই - ব্লাডিমেরি

আরবান লেজেন্ড গুলোর মধ্যে ব্লাডি মেরি খুবই জনপ্রিয়। বিভিন্ন গল্পে এই ব্লাডি মেরির কথা চলে আসে। ব্লাডি মেরির এই লেজেন্ডের উৎস নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে। অনেকে মনে করে ব্লাডি মেরি হচ্ছে ইংল্যান্ডের রানী মেরি টিউডর। পাঁচ বছরের রাজত্বকালে সে সাধারণ মানুষের উপরে খুবই অত্যাচার করে। এমনকি শেষদিকে সে কালো জাদুর দিকেও ঝুকে পড়েছিলো। মৃত্যুর পরেও তার আত্মা মানুষকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করে যাচ্ছে। ব্লাডি মেরির এই কাহিনীটাই সব থেকে বেশি প্রচলিত।

অন্য একদলের মতে ব্লাডি মেরি হচ্ছে ৪০০ বছর আগে হাইল্যান্ডে বাস করা মেরি ওয়ার্থ নামক এক মহিলা! সেই সময় গ্রামবাসীরা মনে করতো মেরি আসলে একজন ডাইনি ছিল। তাই একদিন সবাই মিলে তাকে ধরে পুড়িয়ে মেরে ফেলে। মৃত্যুর পরে সে এখন বিভিন্ন ভাবে মানুষের ক্ষতি করে বেড়াচ্ছে।

আরেক দল মনে করে ব্লাডি মেরি নামটা এসেছে আঠারো শতকের ইংল্যান্ডে বাস করা মেরি ওয়ার্থিংটনের কাছ থেকে। মেরি ওয়ার্থিংটন ছিলেন বয়সে তরুণী এবং দেখতে খুবই সুন্দরী। নিজের এই সুন্দর চেহারা নিয়ে তার গর্বের শেষ ছিল না। একদিন রাতে মেরির গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে। এবং সে সেখানেই মারা যায়। মৃত্যুর আগে মেরির সুন্দর চেহারা পুরোপুরি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তার আত্মাই এখন ব্লাডি মেরি হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এবার আসা যাক আসল কথায়। ব্লাডি মেরির মিথটি হচ্ছে, যদি গভীর রাতে, বিশেষ করে রাত বারোটার দিকে কেউ ঘরের সব আলো বন্ধ করে দিয়ে কেবল মাত্র একটা মোমবাতি হাতে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে তিনবার পরপর ব্লাডি মেরি বলে ডাক দেয় তাহলে ব্লাডি মেরি এসে হাজির হয় আয়নার ভেতরে। এরপর যে কোনো কিছুই হতে পারে। ব্লাডি মেরি সেই মানুষটার চোখ উপড়ে নিতে পারে, মেরে ফেলতে পারে, এমনকি তার আত্মাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে আয়নার ভেতরে। অনেকেই দাবী করেছে ব্লাডি মেরিকে ডাকার ফলে তারা সত্যি সত্যিই একটা মুখ দেখতে পেয়েছে আয়নার ভেতরে।



নাম্বার এক - স্লেন্ডারম্যান

এবার আসা যাক আরবান লেজেন্ডের খনি আমেরিকায়। শোনা যায় আঠারশ শতকের দিকে পেনসিলভেনিয়াতে একজন খুব রাগি স্কুল শিক্ষক থাকতেন। তিনি লম্বায় প্রায় আটফুটের কাছাকাছি ছিলেন এবং বলিষ্ঠ শরীর ছিল তার। তার ছাত্রছাত্রীরা তাকে খুবই ভয় পেত। পড়াশোনা না করলে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের ধরে নানা রকমের শাস্তি দিতেন। স্টুডেন্টদের মধ্যেও ক্ষোভ জমতে থাকে। একদিন কয়েকজন ছাত্র মিলে তাকে খাদের কিনারা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তিনি মারা যান। এর ঠিক এক সপ্তাহ পরে সেই ছেলে গুলো পাগল হয়ে যায়। তারও কিছুদিন পরে বিভৎস ও বিকৃত অবস্থায় তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। লেজেন্ড বলে যে স্লেন্ডার ম্যান তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এসেছিলো।

এরপর থেকেই এই আরবান লেজেন্ডটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই স্লেন্ডারম্যানকে দেখেছে বলে দাবী করেছে। যে কিনা লম্বায় প্রায় আট ফুট। পরনে থাকে কালো স্যুট। তার পিঠের মাঝ থেকে অনেক গুলো শুঁড় বের হয়ে আসে এবং এগুলো দিয়েই সে তার ভিক্টিমকে জড়িয়ে ধরতো। ভিক্টিমের পেছন পেছন আসার সময় সে এই শুঁড় গুলো দিয়েই হাটে। স্লেন্ডারম্যানের শিকার মেইনলি স্কুলে পড়া বাচ্চারা।

লেজেন্ড মতে মধ্য দুপুরে কিংবা বিকেলবেলা কোন বাচ্চা যদি বন জঙ্গল কিংবা মাঠে একা একা যায় তাহলে সে স্লেন্ডারম্যানের দেখা পায়। তবে প্রথম দর্শনেই যে স্লেন্ডারম্যান তাকে মেরে ফেলে ব্যাপারটা ঠিক তেমন না। স্লেন্ডারম্যান কখনই তার ভিক্টিমকে প্রথম দর্শনে মেরে ফেলে না। স্লেন্ডারম্যান তার ভিক্টিমকে অনুসরণ করে। যখনই ভিক্টিম বাসায় ঢুকে পড়ে তখনই স্লেন্ডারম্যান গায়েব হয়ে যায়। তারপর সে সেই বাচ্চার স্বপ্নে দেখা দিতে থাকে। আস্তে আস্তে চারিদিকে দেখা দিতে থাকে। বাস স্টপে, ল্যাম্পপোস্টের নিচে, গ্যারাজের সামনে যখন তখন দেখা দিতে থাকে। বাচ্চাটা এক সময় ভয়ে কাবু হয়ে যায় এবং বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। বাচ্চাটা যখন পুরোপুরি বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় ঠিক তার তিন দিন পরে স্লেন্ডারম্যান সেই বাচ্চার ঘরে ঢোকে এবং তাকে পড়াশোনা রিলেটেড প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। যদি বাচ্চাটা প্রশ্নের জবাব দিতে পারে তাহলে স্লেন্ডারম্যান বাচ্চাটার হাত কিংবা পা ভেঙ্গে দিয়ে চলে যায়। আর যদি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারে, তাহলে বাচ্চাটির হৃদপিন্ড বের করে নিয়ে চলে যায়।

 


এই আরবান লেজেন্ডটি সেই আঠারশ শতক থেকেই প্রচলিত ছিল আমেরিকাতে। ২০১৪ সালের মে মাসে একটা ঘটনাতে এটি আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিলো। সেই সময়ে আনিসা ও ম্যাগান নামক দুই টিনএজ মেয়ে তারই এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবি বেলাকে বনের ভেতরে নিয়ে গিয়ে ছুড়ি দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করে এবং তাকে সেখানেই ফেলে চলে আসে। পরে যখন এই দুইজনকে ধরা হয় তখন তারা পুলিশের কাছে বলে যে স্লেন্ডারম্যান তাদেরকে এই কাজ করতে বলেছে। যদি তারা এই কাজ না করতো তাহলে স্লেন্ডার ম্যান তাদেরকে মেরে ফেলতো। এই ঘটনা নিয়ে ২০১৮ তে একটি সিনেমাও বের হয়েছিলো।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!