কেমন হতো যদি বাংলাদেশ কোনো রাজার শাসনে চলতো? অনেকেই হয়তো এখন বলবেন, অনেকটা তো সেই রকমই চলছে। তবে আমি কোনো রকম স্যাটায়ার করার চেষ্টা করছি না। পৃথিবীর অনেক দেশেই এখনো অ্যাক্টিভ কিংবা প্যাসিভ ওয়েতে রাজতন্ত্র চালু আছে। যেমন সৌদি আরব অথবা ইউনাইটেড কিংডম।
রাজতন্ত্র হচ্ছে যে শাসন ব্যবস্থা চালায় একজন রাজা অথবা
রাণী। এই সিস্টেমে রাজা বা রাণী মারা গেলে তার উত্তরাধিকারের হাতে ক্ষমতা আসে।
অর্থাৎ বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে লিডারশিপ প্রসেস। এই সিস্টেমে জনগণের কথার খুব একটা
দাম নেই। কোনো রাজা যদি মানুষ হিসেবে খারাপ হয়, সেক্ষেত্রেও করার কিছু থাকে না।
বিদ্রোহের হিসেব আলাদা। গণতন্ত্র থেকে এটি একদমই আলাদা।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
তবে রাজতন্ত্রের ইতিবাচক দিকও আছে। গত বছর যখন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলেন, তখন তাকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন বিপুল পরিমাণ মানুষ। এরথেকেই বোঝা যায় ইউনাইটেড কিংডমের মানুষজন রাজতন্ত্রের শাসনব্যবস্থা নিয়ে কতটা খুশি। গত বছরের মার্চে ইউগভ নামক এক কোম্পানির রিসার্চেও দেখা গিয়েছিল ৮১% মানুষই রাজতন্ত্রের ব্যাপারে পজিটিভ। এখনো পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে রাজতন্ত্র চলে আসছে। রাজতন্ত্রের ৩টি ভাগ আছে। কন্সটিটিউশনাল মোনার্কি, এক্সিকিউটিভ মোনার্কি এবং অ্যাবসোলিউট মোনার্কি। কন্সটিটিউশনাল মোনার্কিতে বেশিরভাগ ক্ষমতা রাজার হাতে থাকলেও পাশাপাশি পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। যেমন ব্রিটেইন। প্রিন্স তৃতীয় চার্লস সেখানকার রাষ্ট্রপ্রধান হলেও, ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জিতেই। প্রিন্স তৃতীয় চার্লস আরো অনেকগুলো দেশেরই রাজা। তার মধ্যে সিগনিফিকেট কিছু দেশ হচ্ছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা ও বারবাডোজ। এছাড়াও বিশ্বের আরো কয়েকজন সেরেমোনিয়াল কিং হচ্ছেন বেলজিয়ামের কিং ফিলিপ, লুক্সেমবার্গের গ্র্যান্ড ডিউক হেনরি, জাপানের এমপেরর নারুহিতো।
এক্সিকিউটিভ মোনার্কিতে রাজার ক্ষমতা কন্সটিটিউশনাল
মোনার্কির থেকে বেশি থাকলেও, সবকিছু রাজা একাই নিয়ন্ত্রণ করে না, দেশ চালানোর জন্য
তার একটি কন্সটিটিউশন থাকে। এই ধরণের রাজতন্ত্র চলে পৃথিবীর ১০ টি দেশে। সেই দেশগুলো
হচ্ছে আরব আমিরাত, কাতার, মোনাকো, বাহরাইন, মরক্কো, ভুটান, জর্ডান, কুয়েত,
লিচটেনস্টাইন এবং টোঙ্গা।
অন্যদিকে, অ্যাবসোলিউট মোনার্কিতে রাজাই সর্বেসর্বা। সকল
ক্ষমতা রাজার হাতেই থাকে। এই ধরণের রাজতন্ত্র পৃথিবীতে আছে মাত্র ৪টি। সেই চারজন
রাজা হচ্ছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান, ব্রুনাই এর সুলতান হাসানাল বোলকিয়াহ,
ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিক এবং ভ্যাটিকান সিটির পোপ ফ্রান্সিস।
এই রাজতন্ত্র কিন্তু অনেক পুরাতন একটি শাসন ব্যবস্থা। সেই
মেসোপটেমিয়া, প্রাচীন মিশরীয়, সিন্ধু সভ্যতা থেকে চলে আসছে এই ব্যবস্থা। অনেকের মতে
সর্বপ্রথম রাজা ছিলেন ফারাও নার্মার। সেই ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এরপর আসেন সুমেরিয়ান রাজা
এনমেবারাগেসি, ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। তবে
সবথেকে বেশি সময় রাজত্ব ধরে রাখা রাজা ছিলেন ফ্রান্স এবং অ্যাঙ্গোলার রাজা লুইস
দ্য গ্রেট। তিনি প্রায় ৭২ বছর শাসন করেছেন। এরপরেই আছেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
তার শাসনকাল ছিল ৭০ বছর। বর্তমান পৃথিবীর রাজাদের মধ্যে সবথেকে লং রানিং কিং
হচ্ছেন ব্রুনাইয়ের রাজা হাসানাল বোলকিয়াহ। তিনি প্রায় ৫৭ বছর ধরে শাসন করছেন।