অনলাইন গেমার থেকে প্রোফেশনাল ফুটবল কোচ! || Online Gamer to Pro Football Coach: Will Still's Journey

Author
0

 


আপনি যদি ফুটবল ফ্যান হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জীবনে একবার হলেও ফোনে কিংবা কম্পিউটারে ফিফা অথবা পেস খেলেছেন? ফিফায় ক্যারিয়ার মোড খেলার সময় নিশ্চয়ই নিজেকে কোচ হিসেবে কল্পনাও করেছেন? কেমন হয় যদি গেম খেলতে খেলতে সুযোগ পেয়ে যান সত্যিকার কোন দলের কোচিং করানোর? কি? হাস্যকর মনে হচ্ছে? ঠিক এরকমই ঘটেছে উইল স্টিলের সাথে।

পেশাদার ফুটবলের কোচিংয়ের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কিংবা বয়স একটি ফ্যাক্টর। সাধারণত দেখা যায় ফুটবল দুনিয়ার দাপুটে কোচরা একটু বয়স্কই হয়। প্রথমে বয়সভিত্তিক দল, এরপরে মূল দলের কোন বড় কোচের আন্ডারে অ্যাসিস্ট্যান্ট, এরপর ছোট কিংবা মাঝারি কোন দলের কোচ। এরপর সেখানে সফল হলে হয়তো বড় কোন ক্লাবে সুযোগ। এভাবেই ক্যারিয়ার গড়ে উঠে বেশিরভাগ ফুটবল ম্যানেজারদের।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



তবে বর্তমানে অনেক ক্লাব পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করে তরুণ কোচ নিয়োগ দিতেও আগ্রহী হচ্ছে। যেমনঃ বায়ার্ন মিউনিখের সদ্য সাবেক হওয়া কোচ জুলিয়ান নাগেলসম্যান প্রথম কোচিং এ আসেন মাত্র ২৮ বছর বয়সে। সেই বয়সে জার্মান ক্লাব হফেনহাইমের দায়িত্ব নিয়েই ফুটবল দুনিয়ার নজর কাড়েন তিনি! বেলজিয়ামের বেশ কিছু ছোট ক্লাবের বয়সভিত্তিক দলে উইল স্টিল খেললেও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে তিনি তেমন কোনো ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না। বাবা-মা ব্রিটিশ হলেও তিনি জন্মেছিলেন বেলজিয়ামে। তবে মাঠে ফুটবল খেলায় দারুণ না হলেও তিনি ছোটবেলায়ই ফুটবল ম্যানেজার গেইমে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, খেলাধুলায় ক্যারিয়ার না থাকলেও কোচ হিসেবে তার সম্ভাবনা আছে। তাই একসময় তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে এসে মায়ার্সকফ কলেজে ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পাশাপাশি ইংলিশ ফুটবলের সেকেন্ড টায়ারের ক্লাব ‘প্রেস্টন নর্থ এন্ড’ এর অনূর্ধ্ব-১৪ দলের সহকারী কোচ হিসেবে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন।

প্রেস্টন নর্থ এন্ডের পরে তিনি কোনো ক্লাবের মূল দলের দায়িত্ব পাওয়ার আশায় আবার বেলজিয়ামে ফিরে যান। কিন্তু বার বার রিজেকশন আসতে থাকে। একে তো বয়স একেবারেই কম, তার উপর আবার মূল দল সামলানোর কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় কেউই তাকে নিতে চাচ্ছিল না। শেষপর্যন্ত তিনি তার ছোটবেলার ক্লাব বেলজিয়াম সেকেন্ড টায়ারের দল সিন্ট-ট্রুইডেন থেকে ডাক পান। সেখানে প্রথমদিকে তার কাজ ছিল অপনেন্টদের বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ বিশ্লেষণ করে হেড কোচের কাছে প্রেজেন্ট করা। তবে আগ্রহ ও দক্ষতার কারণে একসময় তারা তাকে অ্যাসিস্টেন্ট কোচ হিসেবে অ্যাপয়েন্ট করে। ক্লাবটি একপর্যায়ে বেলজিয়ামের প্রথম ডিভিশন লিগে প্রমোটেড হয়। কিন্তু তার আগেই দলের হেড কোচ বেলজিয়ামের বড় ক্লাব স্ট্যান্ডার্ড লিয়েগেতে চলে যান। উইং স্টিলও তার সাথে পাড়ি জমান। কিন্তু বাজে রেজাল্টের কারণে সম্পূর্ণ কোচিং প্যানেলই বরখাস্ত হয়।



এরপর তিনি বেলজিয়ামের সেকেন্ড টায়ারের টিম লিয়ার্সে স্কাউট এবং ভিডিও অ্যানালিস্ট হিসেবে সুযোগ পান। সেখানে একসময় তিনি অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব পান। ইভেন হেড কোচ বরখাস্ত হলে অল্প সময়ের জন্য কেয়ারটেকার ম্যানেজারেরও দায়িত্ব পেয়ে যান। কিন্তু ২০১৮ তে লিয়ার্স ব্যাঙ্করাপ্ট হয়ে বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বেলজিয়াম সেকেন্ড টায়ারের আরেক দল বিয়ারস্কতের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব পান। সে সময়ে ক্লাবটি প্রমোশন পায়। হেড কোচ রিজাইন করে অন্য ক্লাবে চলে গেলে তিনি প্রথমবারের মতো হেড কোচের দায়িত্ব পান। সেই সময়ে বেশ ভালো করলেও পরের সিজনে ক্লাবটি তাকে বাদ দিয়ে আরো এক্সপেরিয়েন্সড কোচ নিয়োগ দেয়। তবে তার সামনে আরো ভালো সুযোগ চলে আসে। ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের দল রেইমস তাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু ‘ইউয়েফা প্রো লাইসেন্স’ এর ক্লাস করার ক্ষেত্রে যাতায়াতের ঝামেলার কারণে তিনি আবারও বেলজিয়ামে ফিরে যান স্ট্যান্ডার্ড লিয়েগের অ্যাসিস্টেন্ট কোচ হয়ে। পরের সিজনে সে আবারও রেইমস থেকে ডাক পায়। অস্কার গার্সিয়ার অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এরপরেই ঘটে তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।


২০২২ সালের অক্টোবর মাসে বাজে পারফর্মেন্সের জন্য রেইমস মূল কোচ অস্কার গার্সিয়াকে বরখাস্ত করে। এরপর স্বয়ং ক্লাব ওউনার তাকে কল দেন, “হ্যালো উইল, এগুলো হচ্ছে তোমার সাথে ক্লাবের চুক্তির শর্তাবলি। আমরা চাই তুমি ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহণ করো।” এটি ছিল তার কোচিং ক্যারিয়ারের বিশাল এক মাইলফলক। এত কম বয়সে ইউরোপের টপ ফাইভ লীগের কোনো ক্লাব তাকে নিয়োগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবে– এটি ছিল তার ধারণারও বাইরে। তিনি দেরি না করে রেইমসের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।



বিশ্বকাপের আগে ছয় ম্যাচে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় পরীক্ষামূলকভাবে। রেইমস তখন রেলিগেশন ব্যাটেলে ধুঁকতে থাকা দল। ছয় ম্যাচেই তিনি রেইমসকে জয় এনে দেন। রেলিগেশন জোন থেকে লীগ টেবিলে এগারোতম অবস্থানে উঠে আসে রেইমস। এরপর উইলকে পার্মানেন্ট কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় রেইমস। তবে তখনও একটি সমস্যা ছিল। উইল স্টিলের কোনো পেশাদার কোচিং লাইসেন্স ছিল না। উয়েফার রুলস হচ্ছে, কোচিং লাইসেন্স না থাকলে প্রতি ম্যাচে পঁচিশ হাজার ইউরো করে জরিমানা দিতে হবে ক্লাবকে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, ক্লাবটির কর্মকর্তাদের প্রতি ম্যাচ শেষে এই জরিমানা গুণতে কোনো আপত্তি নেই। স্টিলের প্রতি তারা এতটাই ইম্প্রেসড। উইল স্টিল কতদূর যাবেন, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ফুটবল বিশ্ব নাগেলসম্যানের পরে আরো একজন চমৎকার তরুণ কোচ পেতে যাচ্ছে। আপনাদেরও কি তাই মনে হয়?

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!