আপনি কি জানেন পৃথিবীর একটি জায়গায় প্রায় ২ মিলিয়ন বছর ধরে বৃষ্টি হয় না? রহস্যময় সেই জায়গাটির নাম অ্যান্টার্কটিকা। আন্টার্কটিকা নিয়ে আমাদের সবারই প্রচুর আগ্রহ। কখনো কি ভেবেছেন সম্পূর্ণ বরফে ঢাকা এই মহাদেশের নীচে আসলে কি আছে? আশেপাশে থাকা গরম জামা-কাপড় গায়ে জড়িয়ে নিন। কারণ আমরা ডুব দিতে যাচ্ছি অ্যান্টার্কটিকার বরফের গভীরে।
আন্ডারগ্রাউন্ড লেক
কি দেখছেন? বরফের উপরে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছে? যদি বলি তারা আসলে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক লেকের উপরে? বিশ্বাস হচ্ছে না? এই জায়গার নিচেই আছে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার লম্বা একটি লেক! একটু খোলাসা করে বলা যাক। রিসার্চের কাজে অ্যান্টার্কটিকায় থাকা বিজ্ঞানীরা শুরুতে ভাবতো সেখানে হয়তো শুধু বরফই আছে। কিন্তু একসময় তারা আবিষ্কার করে সেখানকার বরফের পুরু লেয়ারের নিচে অনেকগুলো লেকও আছে। তাও ছোটখাটো লেক না, বিশাল বিশাল সব লেক।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
১৯৭০ এর দিকে রাডারের সাহায্যে
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বরফের নীচে প্রায় ৪০০ টি লেক আছে!
প্রাচীন সুপারকন্টিনেন্ট গন্ডওয়ানাল্যান্ডের থেকে সেপারেট হওয়ার পরেই এগুলো তৈরি
হয়েছে। লেকের পানি বরফ হয় নি উপরের আইস শিটের প্রেশারের কারণে।
১৯৯০ এর দিকে রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা এই রিলেটেড সবথেকে বড় আবিষ্কারটি করে। তারা প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি লেক খুঁজে পায় ভস্তক স্টেশনের নিচে। লেকটির নাম দেওয়া হয় লেক ভস্তক। আয়তনের দিক দিয়ে এটি পৃথিবীরই তৃতীয় বৃহত্তম লেক। ২০১৪ এর দিকে আরো এক বিরাট আবিষ্কার করে বিজ্ঞানীরা। লেক হুইলান্সের নিচে তারা অণুজীবদের অ্যাক্টিভ ইকো-সিস্টেম আবিষ্কার করে। যে অণুজীবরা প্রায় মিলিয়নেরও বেশি বছর ধরে টাটকা বাতাস কিংবা সূর্যের আলো দেখে নি!
ডিপ লেক
যেমনটি দেখছেন, এটি কিন্তু কোনো
সাধারণ লেক না। ইস্ট অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত এই ডিপ লেকটি বিজ্ঞানীদেরকে বছরের
পর বছর ধরে অবাক করে যাচ্ছে। লেকটি সি লেভেলের থেকেও ৫৫ মিটার গভীর। পানির ধরণ
চিন্তা করলে এটি অনেকটা ডেড সি এর মতো। যা সমুদ্রের পানির থেকেও অনেক গুণ বেশি
লবণাক্ত। এ কারণেই সেখানকার তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলেও লেকের পানি বরফ
হয় না। এই লেকের পানিতে ৪ ধরণের জীবাণু প্রজাতি পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। যা অন্যান্য
প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। যদিও কয়েকবার কিছু পেঙ্গুইনকে সাঁতরাতে দেখা গেছে এই লেকে।
এরপর তারা বেঁচে ছিলো কিনা, তা অবশ্য জানা যায় নি।
রক্ত ঝর্ণা
কি? মনে হচ্ছে না ঝর্ণা থেকে
পানির বদলে রক্ত পড়ছে? এই জায়গাটিও অ্যান্টার্কটিকার ভেতরেই। ম্যাকমুর্ডো ড্রাই
ভ্যালির পাঁচ স্তর বিশিষ্ট এই ঝর্ণাটির টকটকে লাল পানি টেইলর গ্লেসিয়ার হয়ে লেক
বোনিতে গিয়ে পড়ে। আসলে ঝর্ণার এই পানি আন্ডারগ্রাউন্ডে ৪০০ মিটার নিচে প্রিজার্ভ
হয়ে সমুদ্রের পানির থেকেও প্রায় তিনগুণ লবণাক্ত হয়ে গেছে। এই পানি প্রচুর পরিমাণে
আয়রনে ভরপুর এবং একদমই অক্সিজেন ও সূর্যের আলোর আওতার বাইরে। তাই এই পানি যখন
বাতাসের সংস্পর্শে আসে তখন আয়রন অক্সিডাইজ হয়ে মরিচা পড়ে যায় এবং গাড় রক্ত লাল
বর্ণ ধারণ করে। চাইলে এই অদ্ভুতুড়ে দৃশ্য আপনি হেলিকপ্টার অথবা ক্রুস শিপ যাত্রায়
রস সাগর ঘোরার সময় দেখতে পারবেন।
মিউজিশিয়ান বরফ
আপনি হয়তো ভাবছেন বরফ কি করে মিউজিশিয়ান হতে পারে? এ-ও কি সম্ভব? তাহলে একবার শুনেই দেখুন। একটি রিসার্চের কাজে অ্যান্টার্কটিকার সবথেকে বড় আইস শেলফ রস আইস শেলফ থেকে এটি রেকর্ড করেছেন একজন বিজ্ঞানী।
ওজন স্তরে ফাটল
অনেকেই হয়তো জানেন, বায়ুমণ্ডলের
গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর হচ্ছে ওজন স্তর। অ্যান্টার্কটিকার উপরে অবস্থিত ওজন স্তরে
দেখা গিয়েছে বিশাল এক ফাটল। যা আমাদের জন্য খুবই আশঙ্কাজনক। এর আয়তন প্রায় ২ কোটি
৬০ লাখ কিলোমিটার। অর্থাৎ সম্পূর্ণ অ্যান্টার্কটিকারও দুই গুণ! এই ফাটলটি সৃষ্টির
জন্য টঙ্গায় সমুদ্রের নীচে থাকা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতকে দায়ী করেছেন
বিজ্ঞানীরা। ২০২২ সালে সেখানে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। যা ছিল হিরোশিমায় ফেলা ১০০টি
পরমাণু বোমার সমান পাওয়ারফুল। ওজন স্তরের এই ফাটলের কারণে অ্যান্টার্কটিকার
বেশকিছু হিমবাহ গলে যেতে পারে। যার ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেঁড়ে যেতে পারে ২-৮ ফুট
পর্যন্ত!
আগ্নেয়গিরি
অনেক কিছুই তো দেখলেন। কিন্তু
আপনার ওয়াইল্ডেস্ট ইমাজিনেশনেও কি কখনো এসেছে যে অ্যান্টার্কটিকার মতো বরফ শীতল
এলাকায় থাকতে পারে ভলক্যানো? রস আইল্যান্ডে আছে মোট চারটি ভলক্যানো। যার মধ্যে
একটাই শুধু অ্যাকটিভ ভলক্যানো, যার নাম মাউন্ট এরেবাস। এর ভেতরকার লিকুইড ম্যাগমা
ও লাভা লেক প্রায় দেড় মিলিয়ন বছর ধরে বয়েল হচ্ছে! এমনকি এই ভলক্যানো থেকে নির্গত
হয় ক্রিস্টালও। সবথেকে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, স্বর্ণও নির্গত হতে দেখা গেছে এই
ভলক্যানো থেকে! যদিও তা পরিমাণে খুবই সামান্য।