দ্য কনজুরিং ইউনিভার্সের ভয়াবহ রহস্য || The Conjuring Universe || Horror Movies

Author
0

 


১৯৫২ সালের গোথিক রোমানিয়ার দুর্গম চার্চ থেকে ১৯৮১ সালের বৃষ্টিস্নাত ব্রোকফিল্ড, দ্য কনজুরিং ইউনিভার্সের কল্যাণে পুরোটাই এখন দর্শকের চেনা। কিন্তু এর পেছনের সত্যটা আরো ভয়াবহ। চলুন জেনে আসা যাক সেই রহস্যগুলো।

কনজুরিং ইউনিভার্সে দেখানো প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর ‘এড ওয়ারেন’ ও ‘লরেইন ওয়ারেন’ কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়। তারা বাস্তবেই খ্যাতনামা প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর এবং পিশাচতত্ত্ববিদ হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৫ সালে এরা দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে তাদের কোল আলো করে ‘জুডি ওয়ারেন’ নামে এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। একসাথে তারা প্রায় ১০ হাজার প্যারানরমাল কেস নিয়ে কাজ করেছেন। কনজুরিং ইউনিভার্সের বেশিরভাগ কাহিনি তাদের বিভিন্ন আলোচিত কেসের উপর ভিত্তি করেই নির্মিত।

আসল পেরন পরিবার ওই ফার্ম হাউজে কাটিয়েছিল প্রায় দশ বছরের মতো। রজার পেরন ও তার স্ত্রী ক্যারোলিন পেরন ১৯৭০ সালের শীতে এই বাড়ি কিনেছিলেন। আয়তনে পুরো বাড়িতে জায়গা ছিল প্রায় ২০০ একরের মতো। এখানে পাঁচ মেয়ে আন্দ্রেয়া, ন্যান্সি, ক্রিস্টিন, সিন্থিয়া, এবং এপ্রিলকে নিয়ে বাস করতেন তারা। কিছুদিন যেতে না যেতেই পরিবারের সদস্যরা পুরো ঘরেই বিশ্রী উৎকট গন্ধের অস্তিত্ব টের পেত। রান্নাঘর তারা যতই পরিষ্কার করুক না কেন, তা কে যেন ময়লা করে যেত। ১৯৮০ সালের জুনে তারা এই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।

 

পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



কনজুরিং ইউনিভার্সের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছিল ২০১৩ সালে ‘দ্য কনজুরিং’ মুভির মাধ্যমে। তবে, এই মুভিটি একদিনেই গড়ে ওঠেনি। রূপালি পর্দায় পেরন ফ্যামিলির ছাপচিত্র ফুটিয়ে তুলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০ বছরেরও বেশি সময়। ক্যারোলিন পেরনের সাথে ওয়ারেন দম্পতির ভিডিও টেপে সাক্ষাৎকার দেখার পরেই প্রযোজক টনি ডেরোজা-গ্রান্ড এই কাহিনিকে পর্দায় তুলে আনবেন বলে মনস্থির করেছিলেন। এজন্য বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউজের দরজায় কড়া নাড়লেও কেউ তাকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়নি। ২০০৯ সালে ‘সামিত এন্টারটেইনমেন্ট’ এই মুভি বানানোর দায়িত্ব নেয়। কিন্তু হঠাৎ তারাও ভোল পাল্টে ফেলে। পরবর্তীতে ‘ওয়ার্নার ব্রাদার্স’ মুভিটি বানাতে রাজি হয়।

 

‘দ্য কনজুরিং’ মুভিতে কোনো প্রকার খোলামেলা যৌন দৃশ্য, গালিগালাজ, ওভার ভায়োলেন্স না থাকলেও এর হরর এলিমেন্টের জন্য ‘মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন অভ আমেরিকা’ একে ‘আর-রেটেড’ ক্যাটাগরিতে রেখেছিল। এই সংস্থা জানিয়েছে কোনো দৃশ্য কাট-ছাট করেও এটাকে আর-রেটেড থেকে পিজি-১৩ তে নামানো যায় না। এদিকে জেমস ওয়ানও দেখলেন- এসব দৃশ্যে ছুরি-কাঁচি চালালে হরর সিনেমার আসল মজাই মাটি হয়ে যায়। তাই, তিনি সেটাকে আর-রেটেড রাখারই সিদ্ধান্ত নেন।

 

‘কনজুরিং’ ফ্র‍্যাঞ্চাইজির সিনেমা দেখার পর শুধু যে প্রেতাত্মা-পিশাচের ভয়ংকর প্রতিরূপ দর্শকের চোখের সামনে ঘুরপাক খেয়েছে, ব্যাপারটা এমন নয়। অশরীরী কিছুর উপস্থিতি আঁচ করতে পেরেছেন খোদ ইউনিভার্সে সংযুক্ত কলাকুশলীরাও। কনজুরিং ইউনিভার্স গড়ার প্রধান কারিগর পরিচালক ‘জেমস ওয়ান’ যখন কনজুরিং মুভির স্ক্রিপ্ট নিয়ে প্রযোজকের সাথে আলাপ করছিলেন, তখন তার লাইন নাকি বার বার বিচিত্র এক আওয়াজে কেটে যেত। তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘কনজুরিং ১’ এর স্ক্রিপ্ট লিখার রাতে তার পোষা কুকুর রুমের কোণায় কিছু একটার উপস্থিতি টের পেয়ে হঠাৎ ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করে। এরকম কয়েকদিনই সে অস্বাভাবিক আচরণ করে যাচ্ছিল। সারা ঘরে চিরুনি অভিযান চালিয়ে কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পাননি ‘ওয়ান’।

 

২০১৩ সালে ভেরা ‘ফারমিগা পিটসবার্গ’ পোস্ট-গ্যাজেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ফিল্মিং শুরু হবার এক রাত আগে তিনি ল্যাপটপ দিয়ে ইউটিউবে ‘লরেইন ওয়ারেনে’র বিভিন্ন ফুটেজ দেখছিলেন। পরবর্তীতে ল্যাপটপ বন্ধ করে ‘জেমস ওয়ানে’র সাথে ফোনে আলাপ করতে যান। আলাপ সেরে ল্যাপটপ খুলতেই বড় বড় তিনটে আঁচড় দেখতে পান। প্রোডাকশনের কাজ শেষ হবার তিন মাস পর তিনি উরুতে তিনটা আঁচড় দেখতে পেয়েছিলেন, যার সাথে ল্যাপটপের দেখা আঁচড়ের মিল রয়েছে। কোনো পোকামাকড়ের কামড় ভেবে এটাকে আর পাত্তা দেননি তিনি।

 


কাহিনি এখানেই শেষ নয়। সিনেমার শুটিং সেটে উপস্থিত ছিলেন আসল ‘ক্যারোলিন পেরন’। তার ভাষ্যমতে, শুটিংয়ের সময় সেই অশরীরী আত্মার উপস্থিতি টের পাচ্ছিলেন, যেটা তিনি তার ফার্ম হাউজের ঘরে পেতেন। পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। ‘কনজুরিং ১’ মুভির পর অনেক কলাকুশলীই বিভিন্ন অস্বাভাবিক সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকেন। অনেকেই দাবি করেছিলেন, সিনেমার পর থেকে তারা অতিপ্রাকৃত কিছুর উপস্থিতি আঁচ করতে শুরু করেন। সেজন্য, ‘কনজুরিং ২’ সিনেমার শুটিংয়ের আগে গির্জা থেকে পাদ্রী ডেকে এনে খ্রিস্টান ধর্মীয় রীতি অনুসারে পুরো জায়গা শুদ্ধ করা হয় অশুভ কিছুর অস্তিত্ব দূর করতে।

 

‘দ্য কনজুরিং’ মুভিতে দেখানো পেরন পরিবারের ঘরের সাথে আসল ঘরের কোনো মিল নেই। তাদের আসল বাড়িটির অবস্থান ছিল আমেরিকার রোড আইল্যান্ডের হ্যারিসভিলে এলাকায়। পেরেন পরিবার ওই ঘরে উঠার আগপর্যন্ত আটটি পরিবার ভৌতিক ঘটনার শিকার হয়েছিল ঘরটিতে। তাদের পরিবারের অনেকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে, অনেকে আবার বিনা কারণে আত্মহত্যাও করেছেন। বর্তমানে এক দম্পতি কোনো প্রকার অশরীরীর উপস্থিতি টের পাওয়া ছাড়াই ওই ঘরে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছেন। তবে কনজুরিং সিনেমার পর এই হন্টেড হাউজের কথা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হলে অনেকেই কৌতূহলবশত বাড়িটি দেখতে যেত। কেউ কেউ একে ‘ভূতুড়ে ঘর’ বলেও সম্বোধন করত। এতে বিরক্ত হয়ে ওই দম্পতি ওয়ার্নার ব্রোসের নামে মামলাও করেছিল।

 

দ্য কনজুরিং ইউনিভার্সে এই পর্যন্ত মুভি এসেছে মোট আটটি। ব্যবসার দিক থেকে এই ফ্র‍্যাঞ্চাইজি প্রযোজকদের পকেট ভারী করেছে। ফ্র‍্যাঞ্চাইজির পেছনে ১৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে আয় হয়েছে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে। সব মিলিয়ে দ্য কনজুরিং ইউনিভার্স ছিল সফল এক হরর ফ্র‍্যাঞ্চাইজি।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!