অনেকেই মজার ছলে উত্তরাকে ঢাকার বাইরের কোনো এলাকা বলে দাবি করে। কেউ কেউ সেই তালিকায় রাখে মিরপুরকেও। রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকা আলাদা কোনো শহর না হলেও, এর চাইতেও আয়তনে ছোট স্বাধীন একটি রাষ্ট্র আছে আমাদের এই পৃথিবীর মানচিত্রে। জ্বি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত এই দেশটি আয়তনে মাত্র ০.৪৪ বর্গ কিলোমিটার। যেখানে মিরপুরের আয়তন ৫৮.৬৬ বর্গ কিলোমিটার। ক্ষুদ্রাকার এই দেশটি কিভাবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পেলো? কেনোইবা একটি গোটা রাষ্ট্র হিসেবে একে স্বীকৃতি দেওয়া হলো? আসুন তবে বলছি।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
ইতালির রাজধানী 'রোম' শহরের ভিতরে অবস্থিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র
"ভ্যাটিকান সিটি"। যাকে
" স্টেট অব ভ্যাটিকান সিটি" বলা হয়। ১৯২৯ সালে
ল্যাটেরান চুক্তির মাধ্যমে ইতালি থেকে স্বাধীনতা লাভ করে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে
স্বীকৃতি পায় এই "ভ্যাটিকান সিটি"। এই রাষ্ট্রের
রাষ্ট্রনেতা "পোপ ফ্রান্সিস"। এ রাষ্ট্রের
আছে পৃথক পতাকা, আছে সংবিধান, পৃথক মুদ্রা, সিলমোহর ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ একটি
স্বাধীন রাষ্ট্রের সবকিছুই এখানে আছে। খ্রিস্টান
ধর্মের ক্যাথলিক মতানুসারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় স্থান এটি। এখানকার
জনসংখ্যা মোটে ১ হাজার জন।
শুধু
জন্ম নিলেই ভ্যাটিকানের নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব না। নাগরিকত্ব
পেতে হলে,
অন্যান্য নাগরিকদের সাথে কাজে যুক্ত হতে হবে।
দেশটিতে কোনো ট্রান্সপোর্ট সুবিধা নেই। কারণ, এখানে চলাফেরার জন্য কোনো প্রকার যানবাহনের প্রয়োজনই হয় না। ঘন্টাখানেক হাটঁলেই পুরো দেশ ভ্রমণ সম্ভব। পুরো দেশের মধ্যে একটি মাত্র ফার্মেসি রয়েছে। ১৯৭৪ সালে নির্মিত এই ভ্যাটিকান ফার্মেসি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম একটি ফার্মেসি। যেখানে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। পুরো ইতালি শহরে যদি কোনো ঔষধ না পাওয়া গেলে লোকেরা এখানে চলে আসে।
আকারে ক্ষুদ্রতম এই দেশটিতে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে সারা বছর। এখানে দর্শনীয় স্থান বলতে রয়েছে সেইন্ট পিটার স্কয়ার, রাফেল রুমস, সিস্টিন চ্যাপেল, ভ্যাটিকান মিউজিয়াম। এতো এতো সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই ক্ষুদ্র দেশটিকে ঘিরেও রয়েছে নানান রহস্যগাঁথা৷ জনশ্রুতি আছে পোপের গির্জার গোপন কুঠুরিতে হাজার বছরের পুরোনো ইলেকট্রোমেগনেটিক রেডিয়েশন যন্ত্র বা টাইম ভিউয়ার রয়েছে। যা দিয়ে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দেখে থাকেন ফাদাররা। আবার কারো কারো মতে, এ গোপন কুঠুরিতে ৮৪,০০০ দলিল ও বইপত্র আছে। আছে মূল বাইবেলের কপি ও যিশুর আমলের চিঠিপত্র। এগুলোর মধ্যে গ্রিসের পতন থেকে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সব তথ্য নাকি সংরক্ষিত আছে। তাই এগুলো দেখার অনুমতি নেই কারোর। কেবল স্বয়ং "পোপ" এসবকিছুর একমাত্র রক্ষক। সাধারণ ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের যে পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি আছে তা মূল গির্জা থেকে অনেক দূরে। এটাকে বলা যায় সীমানা প্রাচীর।
চারদিকে বিশাল বিশাল সুউচ্চ শত শত খুঁটির ওপর কারুকাজ করা ভবন। এই ভবনের শীর্ষে আছে অসংখ্য যিশুর মূর্তি। মাঝে অনেক বড় খোলা চত্ত্বর। এই চত্তরে আছে চোখ ধাঁধানো ফোয়ারা। এই চত্তর পেরিয়ে মূল প্রবেশদ্বারের সিঁড়ি। সিঁড়ি পেরিয়েই আর্কাইভ ভবন। এটির বহিরাংশ টিকিট কেটে দেখার সুযোগ মেলে সপ্তাহে তিনদিন। স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ বা অজানা বস্তুতে নির্মিত যিশু খ্রিস্টের বিশালাকার মূর্তি দেখার সুযোগ নাকি কারোর নেই। কেন নেই তাও কেউ বলতে পারে না। আর পোপের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ! সে এক অকল্পনীয় ব্যাপার। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমন্ত্রিত অতিথি ও রাষ্ট্রপ্রধানরাই কেবল নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক পোপের সঙ্গে যৎসামান্য সময়ের জন্য দেখা করতে পারেন। এতকিছুর পরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার পর্যটক ভ্যাটিকানে ভিড় করে, দূর থেকে ছবি তোলে, যিশুর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
এখানে দিনের বেলায় ৫ থেকে ৭
ও রাতে ৩/৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও প্রচণ্ড ভিড় সবসময় লেগেই থাকে। তবে এই
শত সহস্র বছরের প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের কারুকাজ দেখে সত্যিই, মুগ্ধ হতে হয়।