টাইম ট্রাভেল কি আদৌ সম্ভব?? | Unveiling the Truth About Time Travel

Author
0

 

টাইম ট্রাভেল কন্সেপ্ট প্রথম জনপ্রিয়তা পায় বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন রাইটার এইচ.জি.ওয়েলসের ১৮৯৫ সালের উপন্যাস ‘টাইম ট্রাভেল’ প্রকাশিত হওয়ার পরে। এরপরে আরো বহু লেখক এবং পরিচালক তাদের গল্প, উপন্যাস, সিনেমায় এই কন্সেপ্ট ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বিনোদন জগত ছেড়ে যদি সায়েন্টিফিক জগতে আসি, তাহলে টাইম ট্রাভেলের সম্ভাবনার জায়গা আসলে কতটুকু?

টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণ বলতে সহজ ভাষায় অতীতে বা ভবিষ্যতে যেতে পারাকে বোঝায়। ধরুন, কেউ যদি ২০০০ সালে ফিরে যেতে পারে বা ২০৩০ সালের পৃথিবীতে চলে যেতে পারে, তবে এটিকেই টাইম ট্রাভেল বলা হচ্ছে। শুনতে যতটা সহজ লাগছে, বাস্তবে কিন্তু ততটা সহজ না। আবার অসম্ভব কিছুও না!



পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



প্রাচীন মহাকাব্য বা লোকগল্পে সময় ভ্রমণের অনেক কাহিনী প্রচলিত ছিল। এ সম্পর্কে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রচিত মহাভারতে রাজা কাকুদমির কাহিনীতে। এছাড়া খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর জাপানের লোককথার এক চরিত্র উরাশিমার সময় ভ্রমণের গল্পও বেশ জনপ্রিয়। ১৮১৯ সালে ওয়াশিংটন আর্ভিংয়ের বিখ্যাত ‘রিপ ভ্যান উইংক্যাল’ বেশ সাড়া ফেলে দেয়। সেখানেও গল্পের প্রধান পটভূমি ছিল টাইম ট্রাভেলিং।

চার্লস ডিকেন্সের আ ক্রিসমাস ক্যারল, ১৮৬১ সালে লেখা ফরাসী উদ্ভিদবিদ এবং ভূতত্ত্ববিদ পিয়ের বইটার্ডের ‘প্যারিস অ্যাভোঁ লেসোম্ব’ ইত্যাদি লেখায় সময়ভ্রমণের চমৎকার সংমিশ্রণ দেখতে পাই। এছাড়াও ‘নিউ মান্থলি ম্যাগাজিন’-এ প্রকাশিত স্বনামধন্য মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড হেলের ‘হ্যান্ডস অফ’ এবং আরও অসংখ্য গল্প উপন্যাসে আমরা সময় ভ্রমণের উল্লেখ পাই।

সায়েন্স বলছে, ভবিষ্যত ভ্রমণ সম্ভব। তবে সিনেমা বা সায়েন্স ফিকশনের নানা কমিকসের মতো নয়। অস্ট্রিয়ার প্রখ্যাত গণিতবিদ কুর্ট গডেল ম্যাথমেটিক্সের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে এই ব্রহ্মাণ্ডে কিছু Closed Time Like Curve থাকা সম্ভব যা নির্দেশ করে সময় ভ্রমণও সম্ভব, তবে বিশেষ কিছু শর্তে।


বিজ্ঞানী  আইজ্যাক নিউটন মনে করতেন মহাবিশ্বের সব স্থানে সময় প্রবাহের হার সমান, অর্থাৎ পৃথিবীতে এক ঘণ্টা অতিক্রম হওয়া মানে মহাবিশ্বের সবখানে এক ঘণ্টা অতিক্রম হবে। যা অলরেডি ঘটে গেছে তা সবার জন্যই অতীত। কিন্তু আইনস্টাইন এর বিরোধিতা করে বলেছেন, মহাবিশ্বের সব স্থানে সময় প্রবাহের হার এক না, যা ঘটে গেছে তা সবার জন্য অতীত নাও হতে পারে। এ সম্পর্কে তার থিওরি অব রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশের পর সময় সম্পর্কে সবার ধারণার আমুল পরিবর্তন হয়।

ধরুন, কোন ব্যক্তিকে আলোর গতিতে ছুটে চলতে পারে এমন কোনো একটি মহাকাশযানে উঠিয়ে দেয়া হল এবং তিনি ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন মহাজগতের এপার থেকে ওপার। কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে এসে দেখা যাবে অনেক বছর কেটে গেছে যেখানে ওই ব্যক্তির কাছে মনে হবে মাত্র অল্প কিছু সময় পার হয়েছে। এভাবেই আইনস্টাইনের থিওরীতে টাইম ট্রাভেলের ফর্মুলা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই থিওরির সাথে ব্ল্যাকহোল ও ওয়ার্মহোলের ডিপ কানেকশন রয়েছে।

ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর হলো তারার খুব দুর্দশাপূর্ণ অবস্থা। তারাগুলো একেবারে চুপসে গিয়ে ভর একদম একটি বিন্দুতে এসে পৌঁছায়, যার ফলে স্থান, সময়ের মাত্রা ইনফিনিট বা অসীম হয়ে যায়। সেখানে আলো প্রবেশ করলেও আর বের হয়ে আসতে পারে না। এদিকে, আইনস্টাইনের Theory Of General Relativity অনুসারে ভর যত বেশি, সময়ও ততো ধীর হবে। তাই কেউ যদি কোনো মহাকাশযান নিয়ে ব্ল্যাকহোলের আশপাশে ভ্রমণ করতে থাকেন আর অন্য একটি মহাকাশযান যদি পৃথিবীর চারদিকে ভ্রমণ করতে থাকে তবে ব্ল্যাকহোল ভ্রমণকারীর বয়স, পৃথিবীর চারপাশে ঘোরা ব্যক্তির বয়সের অর্ধেক হবে। এখন প্রশ্ন হলো ব্ল্যাক হোলে না ঢুকে কেন এর চারপাশে ঘোরার কথা বললাম। এর উত্তর হলো, ব্ল্যাকহোলে ঢুকলে কেউ আর বের হতে পারবে না। সেখানে মহাকর্ষ বল খুব বেশি। ব্ল্যাকহোলের গ্রাভিটেশনাল ফিল্ডের শেষ সীমানাকে বলা হয় ঘটনা দিগন্ত, যা অতিক্রম করে ফেললে যেকোন ব্যক্তি বা বস্তুকে আগের অবস্থায় আর কখনই পাওয়া সম্ভব না।

 

কীভাবে টাইম ট্রাভেল সম্ভব? এক্ষেত্রে ওয়ার্মহোল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দর্শক, স্পেস বা মহাশূন্যের পথ কখনোই সমতল নয়। তাই আলো যখন মহাশূন্যের ভেতর দিয়ে যায়, তখন বাঁকা স্পেসের মধ্য দিয়ে একটি বাঁকানো পথে চলতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই বাঁকা পথের পাশাপাশি আরও একটি সংক্ষিপ্ত রাস্তাও আছে। সেই সংক্ষিপ্ত পথই হচ্ছে ওয়ার্মহোল। ওয়ার্মহোলকে অনেক সময় আইনস্টাইন-রজেন ব্রিজ নামেও ডাকা হয়ে থাকে।

ধরুন, এই সৌরজগৎ থেকে আলফা সেন্টরাইতে কেউ যেতে চাইলে আলোর গতিতে তার সময় লাগবে 4.3 বছর। আবার ওই ব্যক্তির ভর থাকায় তার পক্ষে আলোর গতিতে ভ্রমণ সম্ভব না। কিন্তু ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে শর্টকাট রাস্তায় ওই ব্যক্তির পক্ষে সহজেই আলফা সেন্টরাইতে প্রবেশ করে আবার নিজের সৌরজগতেও ফিরে আসা সম্ভব। তার মানে তিনি ভবিষ্যতেও যেতে পারবেন আবার অতীতেও ফিরে আসতে পারবেন। তবে অতীতে ফিরে আসা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। অনেকের হয়তো ক্রিস্টোফার নোলানের কালজয়ী সিনেমা ‘ইন্টারস্টেলার’ এর কথা মনে পড়ে যেতে পারে এখন।

এটি পরিষ্কার যে টাইম ট্রাভেল সাধারণ কোনো ঘটনা নয়, এটি প্রকৃতিবিরোধী। মজার ব্যাপার হলো, আইনস্টাইনের থিওরি অনুযায়ী যে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোর উপস্থিতিতে টাইম ট্রাভেল সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে, তার সবকিছু আবার স্টিফেন হকিংয়ের কোয়ান্টাম তত্ত্ব সাপোর্ট করছে না। তবে আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং, থর্নের মতে, ওয়ার্মহোল বাস্তবে পাওয়া সম্ভব হলে এটা দিয়েই টাইম ট্রাভেল সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হবে বলে মত তাদের। তাই সায়েন্টিফিক থিওরি অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল সম্ভব, তবে বাস্তবিক অর্থে আলোর গতিতে না পৌঁছাতে পারলে সম্ভব না।

 

সেক্ষেত্রে , এমন একটি টাইম মেশিন বানাতে হবে যেখানে আলোর গতির কাছাকাছি গতি অর্জন করা সম্ভব। আশার কথা হলো, University of Connecticut এর ফিজিক্সের প্রফেসর রোনাল্ড ম্যালেট একটি সার্কেলড্ লেজারের সাহায্যে ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাকহোলের মত পরিস্থিতি সৃষ্টির করে টাইম ট্রাভেলকে বাস্তবায়িত করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তার এই ডিভাইসের আদলে ভবিষ্যতে টাইম মেশিন বানানো যাবে বলে দাবি তার। তবে সময়ই বলে দেবে এটি দিয়ে আদৌ অতীত কিংবা ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব কি-না।

টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফিরে আসা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আছে প্রচুর বিতর্ক। এক্ষেত্রে কিছু টাইম প্যারাডক্স সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!