ভারত তথা বাংলার এক স্বনামধন্য অভিনেতা হলেন ‘মিঠুন চক্রবর্তী’। যদিও তার আসল নাম ‘গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী’, তবে জনসমক্ষে তিনি ‘মিঠুন দা’ নামেই বেশি পরিচিত। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সহ বলিউড ও বিভিন্ন আঞ্চলিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক, সমাজ কর্মী, লেখক এবং রাজনীতিবিদ। ভারতীয় সিনেমায় মিঠুন চক্রবর্তীকে বেশি দেখা গেলেও তার জন্ম কিন্তু বাংলাদেশে। ১৬ই জুন ১৯৫০ সালে তিনি বরিশালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি বরিশাল জিলা স্কুলে লেখাপড়া করেন এবং পরবর্তিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ‘স্কটিশ চার্চ কলেজ’ থেকে রসায়নে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর জীবনে তিনি অভিনয় জগতে প্রবেশের জন্য পুনেতে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে যোগ দেন। এরপর তিনি ‘নকশাল’ আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন এবং একটি দুর্ঘটনায় তার একমাত্র ভাই মারা যায়। এরপর থেকেই তিনি নকশাল আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে অভিনয় জগতে আসার দিকে মনোযোগ দেন।
মিঠুন জন্মেছিলেন এক ব্রাহ্মন পরিবারে। তার পিতা ছিলেন, বসন্তকুমার চক্রবর্তী ও মাতা শান্তিরানী চক্রবর্তী। মিঠুনের ব্যক্তিগত জীবনে বেশ কিছু অভিনেত্রীর আগমন ঘটেছিল তারা হলেন সারিকা, হেলেনা লিউক, শ্রীদেবী ও যোগিতা বালী। বলিউডের অভিনেত্রী ‘যোগিতা বালী’কে মিঠুন বিবাহ করেন। তার তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তার বড় ছেলে মিমোহ চক্রবর্তী বলিউডের অভিনেতা। ২য় পুত্র রিমোহ চক্রবর্তী মিঠুনের পরিচালনায় ‘ফির কাভি’ সিনেমায় অংশ নিয়েছিলেন। তার অন্য দুই সন্তান নমসী চক্রবর্তী ও দিশানী চক্রবর্তী এখনো পড়াশোনায় ব্যস্ত রয়েছে। তবে একটা গুজব ছিলো যে, যোগিতা বালীর সাথে সাংসারিক জীবন চলমান অবস্থায় মিঠুনের সাথে দক্ষিন ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবীর বেশ গভীর সম্পর্ক ছিল। এমনকি তারা গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে তাদের এই প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। এবং মিঠুন তার স্ত্রী যোগীতা বালীর কাছে আবার ফিরে আসেন।
মিঠুন চক্রবর্তী মৃনাল সেনের সিনেমা ‘মৃগয়া’তে অভিনয় করে বলিউডে পা রাখেন। এই সিনেমায় অসাধারন অভিনয় প্রতিভার জন্য তিনি ন্যশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতার সম্মান পান। এরপর তিনি বেশ কিছু ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। তবে ১৯৭৮ সালে ‘মেরা রক্ষক’ সিনেমায় অভিনয় করে মিঠুন জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহন করেন। এরপর একে একে ‘মুঝে ইন্সাফ চাহিয়ে’, ‘ঘর এক মন্দির’, ‘প্যার ঝুঠা নেহি’, ‘স্বর্গ সে সুন্দর’ এবং ‘প্যায়ার কা মন্দির’ সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকমনে পাকাপাকি জায়গা করে নেন। তিনি প্রায় ৪০০ এর বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এরপর ১৯৮২ সালে ‘ডিস্কো ড্যন্সার’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি আবারও প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি শুধু বলিউড নয় বাংলা, ওড়িয়া, তামিল, ভোজপুরি, পাঞ্জাবি, কন্নর প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষায় সিনেমা করেছেন। বাংলায় তার প্রথম ছবি ‘ত্রয়ী’। তিনি একাধিকবার সেরা অভিনেতা ও সেরা সহঅভিনেতার জন্য জাতীয় পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ২০০৭ সালে তাকে ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট’
অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করা হয়। তবে শুধু রুপলি পর্দায় নয় দূরদর্শনের পর্দাতেও তিনি সমানভাবে সাবলীল। তিনি বেশ কিছু রিয়ালিটি শো এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। সেগুলি হলো- ডান্স বাংলা ডান্স, ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স, দাদাগিরি আনলিমিটেড, বিগ বস, দ্যা ড্রামা কোম্পানি।
মিঠুন চক্রবর্তী ৭ ই ফেব্রুয়ারী ২০১৪ সালে তৃনমূল কংগ্রেসের হয়ে পার্লামেন্টের সদস্য হন। এরপর ২৬শে ডিসেম্বর ২০১৬ সালে ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। মিঠুন চক্রবর্তী বাংলা ভাষায় বেশ কিছু বই লিখেছেন। সেগুলি হল- আমার নায়িকারা, অনন্য মিঠুন, মিঠুনের কথা, সিনেমায় নামতে হলে, মারবো এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে, লিভ ডিস্কো ড্যান্সার অ্যালোন।