বিজ্ঞানিরাও অবাক!! মহাকাশের শেষ প্রান্তে কি আছে!! | Universe

Author
0


কখনো কি এমন প্রশ্ন মাথায় এসেছে, পৃথিবীর শেষ প্রান্ত কোথায়? যারা বিশ্বাস করে পৃথিবী সমতল, তাদের হয়তো এর উত্তরটি জানার কথা। পৃথিবি সমতল, নাকি বৃত্তাকার সেই তর্ক না হয় অন্যদিন হবে। আজ জেনে নিই, আমদের এই পৃথিবীর শেষ কোথায়!

পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পৌঁছে এক পর্যটক তারকাখচিত একটি গোলার্ধের সন্ধান পেয়েছে। কিন্তু সেই গোলার্ধে একটি দেয়ালের মত রয়েছে। তার মধ্যে দিয়ে মাথা বের করে সেই পর্যটক মহাশূন্যের ওপারে কি আছে সেটা দেখার চেষ্টা করছে। তার কাছে মনে হচ্ছে সেখানে রয়েছে আর একটি সৌর জগৎ।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



ছবিটা ইন্টারনেটে প্রচুর দেখা যাবে। ছবির আসল আর্টিস্ট কে, সেটা এখনো জানা যায়নি। তবে ছবিটি নিয়ে এক ফরাসী জ্যোতির্বিদ “ক্যামিলে ফ্লামারিয়ঁ” ১৮৮৮ সালে তার লেখা “দ্যা এটমসফেয়ারঃ পপুলার মেটোরলজি” বইতে উল্লেখ করেছেন। বইতে ‘ফ্লামারিয়ঁ’ বর্ণনা করেছেন, মধ্যযুগের এক মিশনারী পার্থিব স্বর্গের খোঁজে পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পৌঁছেছিল, যেখানে পৃথিবী ও আকাশ এক সাথে মিশেছে। এই দুই বিশ্বের মাঝে সে একটা ফাটল আবিষ্কার করেছিল, যার মাঝ দিয়ে মাথা গলিয়ে সে স্বর্গ দেখেছিল।

তবে এই ছবির মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যা আমাদেরকে টানে। এক ধরণের রহস্য বোধ। মহাবিশ্বের শেষ কোথায়?

ঊণবিংশ শতাব্দীতে সমতল পৃথিবীর ধারণাকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও পুনর্জ্জীবিত করার জন্য অনেকে ফ্লামারিওঁকে দোষারোপ করেছেন। সেসময় অনেকের মাঝে এমন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, ইউরোপীয় নাবিকেরা নাকি ভাবতো আটলান্টিক পাড়ি দিলে তাদের জাহাজ মহাশূন্যে পড়ে যাবে।

 

আজ থেকে প্রায় দু’হাজার পাঁচশো বছর আগে, গ্রীক দার্শনিক “আর্খিটারাস” একটা ধাঁধা তৈরি করে বলেছিলেন, মহাবিশ্বের প্রান্তে পৌঁছে যদি একটা বর্শা ছোঁড়া হয় তবে কি সেই বর্শা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসবে নাকি এই বিশ্ব থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে? আর্খিটারাসের এই ধাঁধা মহাবিশ্বের চরিত্র নিয়ে একটা প্রশ্ন তোলে। গ্রীক দর্শনের স্টইক ধারা এর উত্তরে বলেছিল, “নক্ষত্র মণ্ডলের পরে মহাবিশ্ব শেষ হয়ে যায় নি, বরং তার পরে এক বিশাল শূন্যতার অবস্থান”। স্টইকদের কাছে সমগ্র মহাবিশ্বই ঈশ্বরের ভূমিকা পালন করে। স্টইকদের পথ ধরেই রোমান কবি “লুক্রেসিয়াস” লিখেছিলেন “মহাবিশ্ব কোন দিকেই বদ্ধ নয়, যদি সে বদ্ধ থাকত তাহলে নিশ্চয় তার একটা সীমানা থাকত। কিন্তু কোন কিছুর সীমানা তখনই থাকতে পারে যখন তার বাইরে কিছু থাকে…মহাবিশ্বে যে কোন স্থানেই একজন থাকুক না কেন, মহাবিশ্ব সেই স্থান থেকে সর্বদিকেই অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।”

 

জীববিজ্ঞানী “জেভিএস হ্যান্ডেল” মজা করে বলেছিলেন, মহাবিশ্বটা আসলে আমরা যতটুকু ভাবি সেটা তার থেকেও অনেক  বেশি অস্বাভাবিক। বা যতটুকু আমাদের ইম্যাজিন করার ক্ষমতা আছে তার থেকেও অনেক বেশি অস্বাভাবিক”।

 


এখন এই স্পেসের বক্রতার ব্যাপারটা ব্যাখ্যার জন্য একটা উদাহরণ ব্যবহার করা যেতে পারে। ধরুন এমন একজন লোক যে কিনা একটা সমতল পৃথিবীতে বাস করে এবং জীবনে কখনো কোন গোলাকার জিনিস দেখেনি। তাকে যদি আমাদের পৃথিবীতে এনে ছেড়ে দেয়া হয় এবং সে আমাদের পৃথিবীর শেষ সীমানায় পৌঁছানোর জন্য হাঁটা শুরু করে তবে সে কোনদিনও খুঁজে পাবে না। সে হয়তো একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানে আবার ফিরে আসবে। এবং এই ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে তাকে ভড়কে দেবে। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারবে না এটা কিভাবে সম্ভব। আমরা হচ্ছি আরও উঁচু মাত্রার স্পেস এর মধ্যে সেই সমতল ভূমির হতবুদ্ধির মানুষটির মতো। মহাবিশ্বের এরকম কোনো স্থান নেই যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে বলতে পারব এটা হচ্ছে এর শেষ সীমানা সে রকম কোনো কেন্দ্র ও নাই যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে পারব এটাই হচ্ছে এর শেষ সীমানা। সেই রকম কোন কেন্দ্রও নাই যেখানে দাড়িয়ে আমরা বলতে পারব যে এইতাই হচ্ছে সেই জায়গা যেখান থেকে সবকিছুর শুরু হয়েছিল বা এটাই হচ্ছে মহাবিশ্বের আমাদের কেন্দ্রবিন্দু।

আমাদের জন্য মহাবিশ্বটা ততদূর লম্বা যতদূর পর্যন্ত আলো মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছে। এই দৃশ্যমান বিশ্ব, যেটা সম্পর্কে আমরা জানি বা যেটা নিয়ে কথা বলতে পারি, মিলিয়ন, মিলিয়ন, মিলিয়ন, মিলিয়ন মাইল ব্যাপি বিস্তৃত। এর পরে আরও যা আছে সেটার হিসাব হয়ত সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!